নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষমী ছেলে রায়হান (ছদ্মনাম)। অসুস্থ পিতাকে নিয়ে, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান সহ শহরের চাষাঢ়া এলাকার একটি ভবনের চারতলায় তিনটি কক্ষ নিয়ে বসবাস করছে সে। গত দুই বছর ধরেই একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে মার্কেটিং অফিসার হয়ে সবেমাত্র নিযুক্ত হয়েছিল। বছর না পেরুতেই পরিবার নিয়ে ভালো বাসায় ভাড়া আসলেও করোনার ভয়াবহতা যেন সবকিছু পাল্টে দিয়েছে রায়হানের জীবন।
চলছে করোনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোধে সর্বাত্মক লকডাউন। তাই বন্ধ প্রায় রায়হানের অফিসের কার্যক্রম। মাঝখানে কিছুদিন অফিস করলেও এখন কাজ ছাড়া বেতন নাই তার। তাই বেশীর ভাগ সময়ই বাসায় বসে কাটায় সে। এরইমধ্যে জমানো টাকায় সংসারের খরচ চালিয়ে উঠতেই, ঋণগ্রস্থও হয়েছেন। মুদি দোকানীকেও বুঝিয়ে কিছু পণ্যের টাকা বাকি রেখেছে। তবে কি করার, মাস শেষ হতে যাচ্ছে, দিতে হবে পুরো ভাড়া। সবকিছু থেকে রেহাই পেলেও মাফ নাই বাসা ভাড়া। এ ছিল চোখ লজ্জায় কারো কাছে হাত না পাতা এক রায়হানের কিছু কথা। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে নিম্ন বিত্তদের বাড়ি ভাড়ার খরচ যোগাতে কেমন বেগ পেতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া দিতে না পেরে পরিবারসহ অনেকেই গ্রামে ফিরে গেছেন। কোন বাড়িওয়ালা ভাড়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ বা আবার অভিজাত এলাকা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম বাসা ভাড়ার এলাকায় চলে যাচ্ছেন।
এদিকে ভাড়াটিয়ার অভাবে ফ্ল্যাট বাড়ি খালি পড়ে আছে বাসা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে মানুষের জীবনের এরকম নানা গল্প শোনা যাচ্ছে। তবে করোনার শুরুতে বাড়ি ভাড়া মওকুফের কিছু খবর শোনা গেলেও এবার এমন খবর নাই বললেই চলে। সুতরাং এই লকডাউনে কারো চাকুরী নেই, কিংবা কারো ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু চাঙ্গা রয়েছে বাড়িওয়ালাদের বাসা ভাড়া বানিজ্য। বাড়িওয়ালাদের উপর নানা কারণে ভাড়াটিয়াদের ক্ষোভ এ আর নতুন নয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ভাড়াাটিয়া-বাড়িওয়ালা উভই বিপদে পড়েছেন। কেননা এই ভাড়াাটিয়ারা যেমন চাপের মুখে থাকেন তেমনি বাংলাদেশের অনেক বাড়ির মালিকদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে বাড়ি ভাড়া থেকে পাওয়া টাকা থেকেই। এছাড়াও বাসা বাড়ির পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল ও গ্যাস বিল দিতেও সংকটাপূর্ণ রয়েছেন বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া উভই।
করোনাভাইরাসের এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে এই সংকট কাটাতে অর্থনীতির চাকা সচল করার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও। এক্ষেত্রে সমঝোতার ভিত্তিতে সংকট সমাধানের পরামর্শ অনেকে দিলেও বাস্তব কার্যকারিতা তেমন চোখে পড়ে না। তারপরেও সচেতন মহলের দাবী কেউ যেন কারও প্রতি অমানবিক না হয়। প্রচার বিমুখ হয়ে যেন বাড়িয়ে দেয় সহযোগীতার হাত।