নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ভূমিদস্যু সুরুজ কর্তৃক সেচ পাম্প লুটের পর বৃদ্ধ কৃষক বিল্লালের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের মিথ্যা মামলায় গরিব কৃষকদের পেটে লাথি। সেচ পাম্প না থাকায় গ্রামের ৪৫ জন কৃষকের ২৫ বিঘা বরোর চারা পানির অভাবে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। খেটে খাওয়া কৃষকদের একমাত্র পুজিঁ জমিনে চাষাবাদ শেষে উৎপন্ন ফসল যার সফলতার বেশীর ভাগ ছড়িয়ে যায় পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। আর সে ফসল বিক্রির আয়ের অংশ দিয়ে কৃষক তার পরিবার নিয়ে জীবন যাপন করে থাকে। অতি সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ইউনিয়স্থ সুখেরটেক এলাকায় বন্দরের অসহায় এক বৃদ্ধ কৃষকের পানি সেচ ব্লকের স্থাপনা ভাংচুর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে নগদ অর্থ সহ পানির পাম্প লুটপাটের অভিযোগে ১/ সুরুজ মিয়া ওরফে বিড়ি সুরুজ, পিতাঃ মৃত আফিজ উদ্দিন, সাং-চাঁনপুর, ২/ রফিজ উদ্দিন, পিতাঃ মৃত মুল্লুুক চাঁন, সাং-ফুলহর, ৩/ সালাউদ্দিন, পিতাঃ আঃ সালাম, সাং-মুরাদপুর, ৪/ নুর আলম, পিতাঃ মোঃ ইনতাজ, সাং-মুরাদপুর, ৫/ জয়নাল, সাং-নেহাল সরদার বাগ, ৬. নবী, পিতাঃ মৃত শাহাবউদ্দিন, সাং-চাঁনপুর বন্দর না’গঞ্জের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নস্থ চাঁনপুর গ্রামের ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন।
পরবর্তীতে তার কোন সুরাহা না হওয়ায় ভুক্তভোগী বিল্লাল সোনারগাঁও এর ইউএনও এর নিকট সকল ঘটনা উল্লেখপূর্বক অসংখ্য ভুক্তভোগী কৃষকদের নিয়ে সকলের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র জমা দেন। ইউএনও এর নির্দেশে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও আজও পর্যন্ত কোন সমাধান পাননি ভুক্তভোগী কৃষকেরা। ০৫/০৩/০১৬ তারিখে বিল্লাল হোসেন বন্দর থানায় নৌকা ভাংচুর ও হত্যার হুমকি মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার নম্বর ২০০/০৫.০৩.১৬। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ০৪/০৩/১৬ তারিখ শুক্রবার অনুমানিক ২:৩০ ঘটিকায় বিল্লাল উপার্জনের শেষ সম্বল নৌকা নিয়ে বন্দর উপজেলাধীন মদনপুরের চাঁনপুর চকে গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে গেলে উক্ত প্রভাবশালীরা তার নৌকাটি ভেঙ্গে ফেলে এবং আবারও তার উপর চড়াও হয় ও মারধরের জন্য উদ্ধত হয় এমনকি হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। জিডিতে ১/ জয়নাল আবেদীন, পিতাঃ রজ্জব আলী, ২/ মোজাম্মেল, পিতাঃ আলী আকবর, উভয় সাং-লাউসার, ৩. রফিজ উদ্দিন, পিতাঃ মৃত মুল্লুুক চাঁন, সাং-ফুলহর, থানাঃ বন্দর, জেলাঃ না’গঞ্জকে বিবাদি বলে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে বন্দর থানার ওসি আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জিডির বিষয়ে নিশ্চিত করেন এবং বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। ভুক্তভোগী বিল্লাল হোসেন জানান ‘নাজিমউদ্দিন ভূঁইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে সুখেরটেক গামী রাস্তার পাশে ও সোনারগাঁও থানার আন্দিরপাড় গ্রামের দক্ষিণ পাশে বিলে প্রায় ২ বছর যাবৎ অত্র ব্লকের নিকটবর্তী প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে আমি পানি সেচ দিয়ে যাচ্ছি। আমার পানি সেচের সহায়তায় অত্র ২৫টি জমির মালিকরা ইরি ধানের চাষ সহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র অঞ্চলের একটি প্রভাবশালী মহল উক্ত জমিগুলো অল্প দামে ক্রয়ের লক্ষ্যে এই পানি সেচ ব্লক বন্ধের পায়তারা করে আসছিল। কারণ পানি সেচ বন্ধ করতে পারলে জমিগুলো কোন কাজে লাগবেনা, তখন বাধ্য হয়ে কৃষকরা প্রভাবশালীদের কাছে জায়গা বিক্রি করবে। অত্র অঞ্চলের মানুষ খুঁনি, ত্রাস ও নব্য টাকাওয়ালা সুরুজ মিয়া ওরফে বিড়ি সুরুজ এর নির্দেশে ও তার পরিকল্পনায় কিছু স্বার্থান্বেষী ভাড়াটে গুন্ডারা আমার ব্লকে ভাংচুর করে টিউবওয়েল, পাম্প মেশিন ও নগদ অর্থ জোরপূর্বক নিয়ে যায় ও কয়েকদিন আগে আমার নৌকাও ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি আল্লাহর নিকট করুনা প্রার্থী, হে আল্লাহ এ সকল অন্যায়কারী থেকে আমাদের মুক্তি দাও’।
এদিকে ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ৯টার সময় মদনপুর স্ট্যান্ডের নিকটে চাঁনপুর মসজিদ সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত টিনের শীট সম্বলিত গুদামে আগুন লাগলে ১৩ মার্চ রবিবার অসহায় কৃষক বিল্লাল ও অত্র অঞ্চলের কয়েকজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ খলিল মেম্বার, কাবিল হোসেন, রুহুল আমিন, কামাল হোসেন, আব্দুল সহ মোট ৮ জনকে বিবাদী করে অগ্নিসংযোগের একটি মিথ্যে মামলা বন্দর থানায় দায়ের করা হয়। এটি একটি সাজানো নাটক ও কৃষক বিল্লাল সহ এলাকার নিরাপরাধ ব্যক্তিবর্গকে, সুরুজ মিয়া হয়রানী করতে এ মিথ্যে মামলা দায়ের করেছে বলে মনে করে ভুক্তভোগীরা। তার পাশাপাশি বিড়ি সুরুজের এ ধরনের কাজের প্রতি সমগ্র এলাকাবাসীকে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেছে। বিষয়টি গতকাল মদনপুরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। সুরুজ মিয়ার বিষয়ে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, মদনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হিসেবে তিনি অত্র মদনপুর স্ট্যান্ডে এক সময় বিড়ি বিক্রি করতেন, হঠাৎ করেই উক্ত বিড়ির কোম্পানীকে পল্টি দিয়ে তিনি নিজেই ব্যবসা করেন।
না’গঞ্জ জেলার ছোট-বড় ব্যবসায়ী এমনকি উঠতি সন্ত্রাসীদের সাথেও তার উঠাবসা শুরু হয়। না’গঞ্জের আলোচিত ৭ মার্ডারের প্রধান আসামী নুর হোসেনের সাথেও সুরুজের সখ্যতা ছিল বলে জানা যায়। এখন তিনি ধনাঢ্য এক ত্রাসের নাম হিসেবে অত্র অঞ্চলে পরিচিত। মদনপুরের একতা মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হওয়ায় সকল দোকান মালিকরা তার হাতে জিম্মি, তার সৈরতান্ত্রিক নিয়মেই চলে সকল দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সামান্য নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা সহ ১ মাস দোকান বন্ধ রাখার অদ্ভুদ আইন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সরকারি আনসার বহিনীও এখন তার বাহিনীতে পরিণত, আনসার দিয়ে রূদ্ধশ্বাস ও ভীতিকর একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে এ অঞ্চলে। ৩ চাকার যান মহাসড়কে নিষিদ্ধ হলেও তার নির্দেশে ১৮০টি সিএনজি অটোরিক্সা এককালীন ৫ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে মদনপুর টু আড়াইহাজার রুটে চলাচল করছে। মদনপুর ইউপির লাউসার এলাকার জয়নাল, কামাল হোসেন ও বন্দরের সোনাচড়া এলাকার জামাই সোহেল নামক কথিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে বিড়ি সুরুজ অত্র অঞ্চলে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা যায়। অত্র বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ২বার সংবাদ প্রকাশিত হবার পরও কোন রূপ ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে না আসায় হতাশ সর্বস্তরের সকলে। এ বিষয়গুলি এলাকায় যথেষ্ট মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার অত্র অঞ্চলের মানুষ এ ভূমিদস্যু সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে তার শাস্তি দাবী করে শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছে। অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবন মান রক্ষায় এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কৃষি জমিতে নিরবিচ্ছিন্ন চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী সহ অত্র অঞ্চলের সকল জনসাধারণ।