প্রবেশ পত্র আটকে রাখাসহ নানা অভিযোগ, বহাল অধ্যক্ষ শীতল !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের (আমলাপাড়া) অধ্যক্ষ শীতল চন্দ্র দের বিরুদ্ধে আবারও কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বাধ্যতামূলক কোচিং না করায় ও মোটা অংকের ফি চেয়ে না পেয়ে গত কয়েকদিন ধরে জেএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র আটকে রেখেছিলেন তিনি।

২৯ সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের জেরার মুখে শেষ পর্যন্ত প্রবেশপত্র দিতে বাধ্য হন এই শিক্ষক। এর আগে চেক জালিয়াতি মামলায় কারাভোগ করেছেন এই শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, কোচিং বানিজ্য, অশোভন আচরণের  অভিযোগ পুরনো। এরপরও অজানা কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কোচিং এর নামে বাধ্যতামূলক বিশেষ ক্লাস না করায় আমাদের প্রবেশ পত্র ও রেজিষ্ট্রেশন আটকে দেয়া হয়। আমরা অধ্যক্ষ শীতল চন্দ্র স্যার কে জানালে আমাদের দরখাস্ত দিতে বলেন। তবে সোমবার দরখাস্ত দিলেও তা গ্রহনতো করেনিই উল্টো ঢুকতেই দেয়া হয় নাই। তারা আরও জানায়, আমরা নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন, পরীক্ষার ফি পরিশোধ করেছি। বাসায় শিক্ষক থাকায় আমরা স্কুলের কোচিং করিনি। এখন স্যার বলছে কোচিং না করলেও প্রতি মাসের ৫শ টাকা করে ৩ মাসে ১৫শ টাকা দিতে হবে।

তারা জানান, টেষ্ট পরিক্ষার জন্যেও ৫শত টাকা করে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়েছে। এ বিষয়ে অপর এক শিক্ষার্থী অর্পিতা ঘোষ মৌ বলেন, আমি তিন মাস ধরে অসুস্থ ছিলাম। কোচিং শুরু হওয়ার আগে আমার চোখে পিন ঢুকে। আমার চোখের অপারেশন করাতে হয়। সোমবার স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারপরেও  তিন মাসের কোচিং ফি দিয়ে প্রবেশ পত্র নিতে হবে বলে জানিয়ে দেন।

আজম খান নামে একজন অভিভাবক অধ্যক্ষের সামনেই অভিযোগ করে বলেন, কোনো পরীক্ষা বা ভর্তির সময় হলেই স্কুলের অধ্যক্ষসহ যারা স্কুলের দায়িত্বে আছে সবাই টাকার নেশায় মেতে ওঠেন। মেয়েরা কোচিং করেনি, তবু বলে টাকা দিতে হবে। এটা কোনো কথা হলো? এ সকল শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির লোকদের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

এসময় সেলিনা নামে আরেকজন  অভিভাবক সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে মৌসুমী জেএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়েকে পড়ার জন্য বাসায় টিচার রেখেছেন। হঠাৎ করে জোড় করেতো আর স্কুলে কোচিং পড়াতে পারিনা। তিনি প্রশ্ন করেন, কোচিংই যদি করতে হয় তাহলে স্কুলে শিক্ষকরা ক্লাসে কি পড়ায়।

এদিকে এ ঘটনায় সোমবার ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবরে পেয়ে উপস্থিত হন স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা। পরে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিকদের উপর তেড়ে যান আসমা হুসনা নামে মানবিক শাখার বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা। পরে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই ছাত্রীদের প্রবেশপত্র দিতে বাধ্য হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শীতল চন্দ্র দে বলেন, কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়নি। সরকারী বিধান রয়েছে শুধুমাত্র দুর্বল শিক্ষার্থীদেরকে তিন মাসের জন্য বিশেষ ক্লাস করানো। কারো প্রবেশ পত্র বা রেজিষ্ট্রেশন আটকানো হয়নি। তারা (শিক্ষার্থীরা) মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের সামনেই ফের অভিযোগ করেন। তখন চুপসে যান শীতল চন্দ্র দে।

উল্লেখ্য, র্দীঘ কয়েক বছর ধরে শীতল চন্দ্র দের নামে নানা অভিযোগ উঠলেও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। এ বছরও অতিরিক্ত ফি আদায় ও কোচিং বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, জেলা শিক্ষা অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা) তার বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম বিল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য কোচিং কখনই বাধ্যতামূলক নয়। এরকম হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

add-content

আরও খবর

পঠিত