নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বাধীণ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে এক হাত নিয়েছেন সাবেক ও বর্তমানে পদত্যাগকারী নেতারা। এছাড়াও তাদের ক্ষোভ ও চ্যালেঞ্জিংয়ে তোপের মুখে পড়েছেন সদ্য গঠিত মহানগর বিএনপি। সম্প্রতি বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে এ কমিটি।
সবশেষ সোমবার (৩ অক্টোবর) বিকেল ৪ টায় নগরীর জামান টাওয়ারে পতাকা মিছিল কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি মূলক সভায় কমিটির সাবেক নেতাদের বক্তব্যকালে এমনটাই লক্ষ করা গেছে। যা পরবর্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মূল শিরোনামেও স্খান পেয়েছে। ইতমধ্যে উল্লেখিত কমিটির ৪১ সদস্য থেকে ১৫ জন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এতে করে দলটির বিভাজন সুস্পষ্ট। যদিও দলকে শুক্তিশালী করতে উভয়পক্ষই পৃথকভাবে রাজনীতির মাঠে শক্তি প্রদর্শনে সক্রিয় রয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করতে নিচ্ছেন নানা প্রস্তুতীও। তবে তাদের এ বিভক্তি ও অন্তর্কোন্দলের কারণে দলের ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল।
প্রসঙ্গত, প্রস্তুতি মূলক সভায় বক্তব্যকালে মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল বলেন, আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশের রাজনীতি করি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারুন্যের অহংকার তারেক রহমানের ডাকে রাজপথে থেকে আমরা যে মামলা হামলার শিকার হয়েছি। বর্তমান যারা মহানগরের দায়িত্ব পেয়েছে তারা কেউই এতো মামলা খায়নি। আমাদের একজন কর্মী মামলা খেয়ে যেভাবে জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, সেই পরিমানও তারা মামলার শিকার হয়নি। আজকে তারা বলে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতির অবসান ঘটেছে। আরে ভাই এই পরিবারের হাত ধরেই নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনারা তাদেরকে মাইনাস করে রাতের আধারে কমিটি নিয়ে এসেছেন। আমাদের পদ পদবির দরকার নাই বিএনপির একজন কর্মী হয়ে আমরা রাজপথ কাপাবো। দেখি আপনারা দায়িত্বে থেকে কতটুকু রাজপথ কাপাতে পারেন।
মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু বলেন, রাজনীতিত্বে নেতৃত্বর প্রতিযোগীতা থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দলকে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করা বড় অপরাধ। মরহুম জালাল হাজ¦ী পরিবারের পিছনে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজনীতি করে। তাদের দিকে খেয়াল রেখে হলেও কমিটি করার পুর্বে আমাদের সাথে বসা উচিৎ ছিলো। লুকিয়ে কমিটি এনে কি লাভ যদি আপনাদের পিছনে কর্মীই না থাকে। আমরা মরহুম জালাল হাজ্বী সাহেবের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে এসেছি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আর্দশ বুকে লালন করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিদের্শে ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহবানে রাজপথে ছিলাম এবং যতদিন বেচে থাকি গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য রাজপথে থাকবো।
মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাউছার আশা বলেন, চোরের মার বড় গলা তারা বলে পরিবারতন্ত্রের সম্পাপ্তি হয়েছে। আবার বলে মন্ত্রি, এমপিদের সাথে ছবি থাকে। আরে ভাই একবার জনগণের সেবা করার জন্য ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত হয়ে দেখান। যখন দেখবেন বাধ্য হয়ে মন্ত্রী এমপিদের সাথে ছবি তুলতে হয় বুকে কত কষ্ট লাগে। মহানগর বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন আপনারা আগে দুই কোটি টাকার হিসাব দেন। তারপর আপনাদের সাথে রাজনীতি করবো। আপনাদের যদি প্রশ্ন করি জেলখানা দেখতে কেমন বলতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিক দল কেন টুকরা হলো আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি তাদের এক সাথে কাজ করানোর জন্য। কে বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলো তা শ্রমিক দলের নেতারাই বলবে। আমরা আপনাদের কমিটি নিয়ে ভাবি না। কারন বেশি দিন যাবে না দুই ইদুরই তাদের টুকরা করবে। এসময় তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, প্রমান দেখান আমরা বহিষ্কার ঠেকাতে কোন নেতাদের কাছে গিয়েছি। এমপিদের সাথে আতাঁত থাকলে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করতো না। আমাদের কাছে খবর আছে কমিটি আসার পর আপনি ফ্লাট কিনেছেন। কোথা থেকে টাকা আসে তা আপনারাই ভাল জানেন।
এসময় মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হাজী নুরুউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেনের সঞ্চালনায় প্রস্তুতি মূলক সভায় বক্তব্য রাখেন, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম মজনু, মনিরুজ্জামান মনির, এ্যাড. রিয়াজুল ইসলাম আজাদ, মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী ইসমাইল হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউছার আশা, মহানগর বিএনপি নেতা হান্নান সরকার, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, সরকার আলম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আব্দুল হামিদ ভাষানী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, মহানগর শ্রমিক দলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক মনির মল্লিক, মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক সদস্য সচিব আলী আজগর।
আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সাবেক যুব বিষযক সম্পাদক মনোয়ার হোসেন শোখন, সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. আনিছুর রহমান মোল্লা, সাবেক মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মতিন, সাবেক শিশু বিষয়ক সম্পাদক মেজবা উদ্দিন স্বপন, সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মিঠু, সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক সোলেইমান, রোমান হোসেন, মহানগর জিয়া মঞ্চের আহবায়ক রানা মুজিব, মহানগর বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হোসেন কাজল, আবুল কালাম আজাদ, এ্যাড. শরীফুল ইসলাম শিপলু, এ্যাড. বিল্লাল হোসেন, আবুল হোসেন সরদার, আনোয়ার হোসেন বকুল, সাইফুল ইসলাম বাবু, আল-মামুন, সাফী, হাবিবুর রহমান, নাছির, মামুদুর রহমান মাসুম, ফরিদ আহম্মেদ, পনেজ, মাহবুবুর রহমান মফিজ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ, হুমায়ুন মোল্লা সহ বিভিন্ন থানা ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, নবগঠিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সকল নেতৃবৃন্দেরকে আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর বিভাগের সকল জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাংগঠনিক মতবিনিময় করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ মতবিনিময় সভা। সভায় বক্তব্য কালে তারেক রহমান এসব কথা গুলো বলেছেন বলে জানিয়েছেন নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খানসহ অন্যান্য নেতারা। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভাগের অন্যান্য জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান থাকলেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা উপেক্ষিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনের লক্ষে উভয় পক্ষই ইতমধ্যে সম্পন্ন করেছেন প্রস্তুতীও। এখন শুধু মাঠ পর্যায়ে উভয় নেতাদের শক্তি প্রদর্শনের পালা। এসময় কার কত কর্মী-সমর্থক রয়েছে তা শোডাউন করা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তবে প্রবীন নেতার মনে করেন, দলে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন কোনভাবে যেমনি ঠিক নয়, তেমনি নতুনদেরকেও স্থান করে দেয়া পুরনোদের দায়িত্ব। তাই দ্রুত কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে এর সমাধান না করা হলে আগামী সকল আন্দোলন সংগ্রামে ব্যপক ক্ষতির সম্মূখীন হতে পারে। এছাড়া আসন্ন নির্বাচনে নেতৃত্ব সংকটে দিশেহারা হয়ে যেতে পারে অন্যতম এ দলটি।