নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : নারায়ণগঞ্জে বেকারী পণ্যের মূল্য নিয়ে বিভ্রান্তকর অবস্থায় রয়েছে ক্রেতা সাধারণ। একই পণ্য (ড্রাই কেক বিস্কুট) কোথাও কেজি প্রতি-৩৪০ টাকা হলে, সেই পণ্যটি অন্য বেকারীতে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দরে। আবার আরেকটি দোকানে তা যাচাই করা হলে দেখা যাচ্ছে সে পণ্যটি আরো কম দরে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও একই পণ্য কৌশলে বিভিন্ন বেকারীতে বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি হওয়ার কারণে বিপাকে আছে ক্রেতা সাধারণ।
এছাড়াও মূল্য তালিকাটি অনুমোদিত কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ ভোক্তারা। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন তাহলে কি সবচেয়ে কম মূল্যের পণ্যটি খারাপ বা ভেজাল পণ্য, তাই কম মূলে বিক্রয় করা হচ্ছে ? আর এমন প্রশ্নের উত্তরে সকল মলিকদের দাবি একটাই, গুনে, মানে ও স্বাদে আমরা ক্রেতাদের ভালোটাই দিচ্ছি।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনেক ক্রেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নানা অযুহাতে বেকারীর মালিকরা তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে আমরা যারা মধ্যবিত্ত বা কিছুটা সামর্থ আছে তারা তো কিনে খেতে পারি। কিন্তু দরিদ্র মানুষেরা বর্তমানে বেকারি পণ্য কিনতেই পারছেন না। অথচ বেকারীর বেশীর ভাগ শুকনো খাবার পথে-ঘাটে চলাচলরত নানা পেশাজীবীদের জন্যও একটি প্রয়োজনীয় খাবার। তবে একই পণ্য চমকপ্রদ প্যাকেট ও নামের পরিবর্তনে বেকারীতে বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি হওয়ার কারণে বেশীরভাগ সময়ই একটা বিভ্রান্তকর অবস্থায় পড়ে ক্রেতা সাধারণ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ক্রেতা পরিমানের ব্যাপারে অভিযোগ তুলে বলেন, ৭০ গ্রামের পণ্যে ৫৫-৬০ গ্রাম, ১৭০ গ্রামের পণ্যে ১৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রামের জায়গায় ৪৯০ গ্রাম ও ৮০০গ্রামের জায়গায়ও ৫-১০ গ্রাম কম দেয়া হচ্ছে। আর এটা নাকি স্বাভাবিকিই দিতে হয়, এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তা না হলে একটি পণ্যও যদি ক্রেতাদের দিয়ে দেয়া হয় তাহলে পণ্যের পরিমানের সাথে বাড়তি মূল্যও গুনতে হবে ক্রেতাদের।
নগরীর বিভিন্নস্থানে ঘুরে দেখা গেছে, উল্লেখযোগ্য সুগন্ধা বেকারী, ফুডল্যান্ড, চিটাগাং বেকারী ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে অসংখ্য বেকারী রয়েছে। যাদের অনেকেরই আবার খাদ্য উৎপাদনে পণ্যের মান নিয়ে সন্দিহান আছে। বিভিন্ন সময় এসব বেকারীতে পণ্যের সঠিক মূল্য তালিকা না থাকা, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান এবং অস্বাস্থকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদনের দায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে জরিমানাও করতে দেখা গেছে। তারপরেও কৌশল পাল্টিয়ে থেমে নেই কিছু অসাধু ব্যবাসায়ীদের পণ্যের দাম বাড়ানোর নানা অযুহাত।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বেকারীতে অন্যতম কিছু পণ্যের মূল্য তালিকা পার্থক্য করলে দেখা যায়, সুগন্ধা বেকারীতে- ড্রাই কেক বিস্কুট প্রতি কেজি ৩৪০ (মোটা), ড্রাই কেক বিস্কুট প্রতি কেজি ৩০০ (চিকন), চিকন টোস্ট বিস্কুট কেজি প্রতি-১৬০ টাকা, স্পেশাল ফিংগার টোস্ট ২৪০, ৫০০ গ্রাম মিল্ক পাউরুটি প্যাকেট (নরমাল) ৭০টাকা, কেক পাউরুটি ৪০০ গ্রাম ৫৫ টাকা।
ফলপট্টি ১নং রেল গেইট সংলগ্ন চিটাগাং বেকারীতে- ড্রাই কেক বিস্কুট প্রতি কেজি ২৮০টাকা (মোটা), ৩০০টাকা (চিকন), টোস্ট প্রতি কেজি ১৬০, পাউরুটি প্যাকেট (নরমাল) ৫০০ গ্রাম ৮০টাকা।
শাহসুজা রোড, পাইকপাড়া আদি ফুডল্যান্ড প্রোডাক্ট এর দোকানীতে গেলে জানা যায়- ড্রাই কেক সুপার বিস্কুট প্রতি কেজি ৩০০ (মোটা), স্পেশাল ২৫০ টাকা, সুপার বাটার টোস্ট বিস্কুট কেজি প্রতি-১৬০, টোস্ট ১৪০, ৫০০ গ্রাম পাউরুটি প্যাকেট (নরমাল) ৫০ টাকা।
এসএস রোড, চেম্বার রোড, ২নং রেলগেইট সংলগ্ন করফেশনারী কর্ণার বেকারী এন্ড পেস্ট্রি সপ এর পণ্য- ড্রাই কেক বিস্কুট প্রতি কেজি ৩২০ (মোটা), ২৮০ (চিকন), টোস্ট বিস্কুট কেজি প্রতি-১৭০ (চিকন), স্পেশাল বস্বে টোস্ট ১৮০টাকা, মিল্ক পাউরুটি প্যাকেট ৪০০ গ্রাম ৪৫টাকা, ৮০০ গ্রাম ৭০ টাকা।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবী, করোনা পরিস্থিতি ও বেকারি উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের । কোন উপায় না পেয়েই তারা বেকারিতে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নাম মাত্র বৃদ্ধি করছেন। আর পণ্যের গুনগত মান ঠিক রেখেই সবধরনের বেকারি পণ্যের মূল্য কিছুটা হয়তো বেড়েছে।
শহরের গলাচিপা রেললাইন এলাকাস্থ সুগন্ধা বেকারীর এক দোকান কর্মচারী জানান, আটা, ময়দা, তেল ও চিনিসহ বেকারির সকল উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই মান ঠিক রাখতে সবধরনের বেকারি পণ্যের দাম কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিক্রেতাই জানান, মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের পণ্য বেচাকেনার পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। অনেক সময় সাধারণ মানুষ তাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই।
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর অন্যতম পাইকারী বাজার নিতাইগঞ্জ ও দিগু বাবুর বাজারে খোঁজ নিলে জানা যায়, এরআগে আটার খুচরা মূল্য ছিলো প্রতি কেজি ২২ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। যার পাইকারী মূল্য ২৬ টাকা। ময়দা যা ছিলো ২৫ টাকা, খুচরা মূল্য ৩২, বর্তমান পাইকারী মূল্য ২৮টাকা। চিনির দাম ছিলো ৫৫ টাকা এখন তা খুচরা ৬৮ টাকা, বর্তমানে পাইকারী মূল্য ৬২ টাকা। সোয়বিন তেল আগে প্রতি লিটার ১০০টাকা, যা বর্তমান খুচরা ১৪০ টাকা, পাইকারী ১৩০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম তেল আগে ছিল খুচরা ১১০ টাকা, বর্তমান ১২৪ টাকা। ডাল আগে ছিল ৮০ টাকা, বর্তমান মূল্য ১২২টাকা। সে তুলনায়ও বেকারী পণ্যের মূল্য অনেক বেশী বলেই ধারণা করছে বোদ্ধা মহল।