নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বাবুর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি লোটন

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন প্রার্থী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্যসহ নজরুল ইসলাম বাবুসহ মাঠে আরও আছেন জাতীয় পার্টির আলমগীর সিকদার লোটন, তৃণমূল বিএনপির মো. আবু হানিফ হৃদয়, জাকের পার্টির শাহজাহান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শরিফুল ইসলাম।

এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও তাঁর একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এই ক্ষোভ কাজে লাগাতে পারলে এখানে জমজমাট একটি নির্বাচনী লড়াই হতে পারে বলে মত স্থানীয় লোকজনের।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে আছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন। নিজস্ব ও পারিবারিক ভোট ব্যাংক এবং জাতীয় পার্টির ভোটের পাশাপাশি সরকার বিরোধী ভোটে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে আছেন তিনি। এখন বাবু বিরোধী ভোট টানতে পারলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আড়াইহাজারে ভোটের মাঠের এই হিসেব অজানা থাকার কথা নয় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আলমগীর সিকদার লোটনের। বাবু বিরোধী সেই ভোট নিজের পক্ষে নিতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো।

লোটনের বাবা ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদত আলী সিকদার ছিলেন আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ও ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোয়নে সংসদ সদস্য ছিলেন। এরশাদ আমলে আলমগীর সিকদার লোটন ও তাঁর ভাই জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন ছিলেন দেশের ছাত্র রাজনীতির আলোচিত জুটি। সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতির কল্যাণে দেশব্যাপী পরিচিতি ছিল তাদের। ১৯৮৭ সালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুই ভাই আলমগীর সিকদার লোটন ও জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন। এছাড়া গোপালদী পৌর মেয়র এম এ হালিম সিকদার তাঁর চাচাতো ভাই। সবমিলিয়ে আড়াইহাজারে লোটনের শক্ত ভিত্তি রয়েছে।

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের একক আধিপত্য কায়েমের অভিযোগ রয়েছে পরপর তিনবারের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবজ্ঞা করার পাশাপশি ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তার অনুসারীদের রাখার। অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করলে নাজেহাল হতে হয় নেতাকর্মীদের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আড়াইহাজার উপজেলা চেয়ারম্যান মুজাহেদুর রহমান হেলো সরকার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলে তাঁর প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করেন উপজেলার ২ পৌর মেয়র ও ১০ ইউপি চেয়ারম্যান। অভিযোগ আছে, এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন নজরুল ইসলাম বাবু। এছাড়া বাবুর বিরুদ্ধে রাজনীতি করার কারণে অনেকটাই এলাকা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এমপি বাবু ও তাঁর ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা নেতাকর্মী ও লোকজনের মতের বিরুদ্ধে গেলেই নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ।

গত ইউপি নির্বাচন আওয়ামী লীগের সাবেক দুই চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে নিজের ভাই ও ভগ্নিপতিকে নির্বাচিত করায়ও ক্ষোভ রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আড়াইহাজারের রাজনৈতিক অঙ্গণের এসব হিসেব-নিকেশ ভোটের মাঠেও প্রভাব পড়বে। যা লোটন সিকদারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে।

লোটন সিকদার বলেন, লাঙ্গল নিয়ে এসেছি তো কী হয়েছে। আমার কাছে আওয়ামী লীগ বিএনপি নাই। সকলকে নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। বিএনপির যেন কোন ভয় না থাকে সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপি বাংলাদেশের বৃহৎ একটি দল। তারা রাজপথে আছে, এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। বিএনপি নির্বাচনে আসেনি এটা তাদের ব্যাপার। তবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির একই আদর্শ। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। আমি আশা করি আপনারা যারা আওয়ামী লীগ করেন তারাও আমার পাশে থাকবেন। আমার বাবা ৭০ ও ৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এমপি ছিল।

add-content

আরও খবর

পঠিত