নারায়ণগঞ্জে নিভু নিভু জ্বলে

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক) : নারায়ণগঞ্জের বিভিন্নস্থানে সারাদিন গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যার পর আসলেও নিভু নিভু জ্বলে। যেভাবে জ্বলে সেই তাপ দিয়া না ভাত রান্না করমু না তরকারী। এখন সারারাত চুলার পারে বইসা থাকার ডিউটি আর কত করণ যায়। সকালে উইঠা আবারতো আমারও কামে যাইতো হইবো। কথা গুলো বলেছেন বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা। যিনি পেশায় একজন গার্মেন্ট শ্রমিক। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন ভোগান্তি পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের শহর ও শহতলীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি চরম গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গ্যাসের এ সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন বসত বাড়িতে গৃহিণীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দিনের বেলায় গ্যাস সঙ্কটের পাশাপাশি রাতেও সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। শুধু আবাসিক নয় শিল্পকারখানায় দেখা দিয়েছে গ্যাস সঙ্কট। অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে গার্মেন্টের শিফটম্যানও পরিবর্তন হচ্ছে বারবার।
নগরীর ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শহরের নতুন কোর্ট, চানমারি, আজমেরিবাগ, চাষাঢ়া, নতুন পালপাড়া, জামতলা ধোপাপট্টি, মাসদাইর, আমলাপাড়া, ফতুল্লা স্টেডিয়াম-সংলগ্ন রামারবাগ, কাশীপুর, দোওভোগ মাদরাসা এলাকা, ফতুল্লার নরসিংহপুর, সর্দারপাড়া, তল্লা বড় মসজিদ, আদর্শ চাষাঢ়া, সবুজবাগ, পাইকপাড়া, ভোলাইল, জল্লারপাড়া, দেওভোগ পাক্কা রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সঙ্কট রয়েছে।

দেয়া তথ্যানুযায়ী আরো জানা যায়, বসত বাড়িতে গৃহিণীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দিনের বেলায় গ্যাস সঙ্কটের পাশাপাশি রাতেও সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। শুধু আবাসিক নয় শিল্পকারখানায় দেখা দিয়েছে গ্যাস সঙ্কট। অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে গার্মেন্টের শিফটম্যানও পরিবর্তন হচ্ছে বারবার।

অনেক এলাকায় বাসা বাড়িতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যার পর থেকে গ্যাস থাকলেও চাপ খুবই কম থাকে। আবার রাতের বেলায় গ্যাসের পরিমাণ অনেকটা কমে আসে। তবে বেশির ভাগ এলাকায় দুপুর ছাড়া সকাল বিকেল দুই বেলা গ্যাস থাকে না। এরপর সন্ধ্যা থেকে গ্যাস আবার ফিরে এলেও তার পরিমাণ অনেকটা কম থাকে। আবার রাত বেশি হলেই গ্যাস চলে যায়। এভাবে গ্যাস নিয়ে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় জনসাধারণকে। দিনে গ্যাস না থাকায় রাতের বেলায় বেশি করে খাবার রান্না করেন অনেক গৃহিণী। আবার কেউ কেউ রাত জেগে রান্না করে থাকে। এতে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

তল্লা এলাকার গৃহবধূ রীমা জানান, সকাল ৫টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। তাই অনেক সময় মাঝ রাতে জেগে জেগে রান্না করতে হয়। আর দিনের বেলায় ঘুমাতে হয়।

বিভিন্ন এলাকায় উপায় না দেখে অনেকে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মাটির চুলো কিংবা স্টোভ দিয়ে রান্নার কাজ করছেন। অন্য দিকে গ্যাসের বৈধ সংযোগ দেয়া হয় না বলে জেলার বিভিন্ন এলকায় অবৈধ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। যা বিভিন্নসময় বিচ্ছিন্ন করার চিত্র দেখা যায়।

মাসদাইর বেকারী মোড় এলাকার বাসিন্দা হাসান বলেন, আমাদের এখানে তো ঘরে ঘরে লাকড়ি চুলা। কারণ গ্যাসের সমস্যার কথা বলতে বলতে অতিষ্ট হয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। মাস শেষে বিল দিতে হয়। না দিলে আবার চলে আসে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে। কিন্তু তারা কোন সেবাই দিচ্ছে না।
মাদরাসা রোড এলাকার ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমপি-মেয়র সবাই আছেন তবুও এই সঙ্কট থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। এ নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। সবাই যার যার মতো রয়েছে।

শহরের গলাচিপা এলাকার সুলতানা বেগম বলেন, গ্যাসের সমস্যার কারণে রান্না করতে পারছি না। আমাগো থেকে বিল চায়। সবকিছুর দাম বাড়ায়। তবে আমাগো কি সেবা দিতাসে।

এদিকে গ্যাস সঙ্কটের কারণে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ফুঁসে উঠছেন। আবার কেউবা বাইরের হোটেল থেকে খাবার ক্রয় করে খেতে করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। সারা দিন পরিশ্রম করে রাতের বেলায় রান্না করতে হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে গ্যাস সঙ্কটের কারণ কিংবা গ্রাহকদের নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস অফিস কর্তৃপক্ষের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোনে কল দিলে তারা রিসিভ করেননি। বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কল দেয়া হয় তিতাসের ফতুল্লা এলাকার ম্যানেজার আনোয়ারুল আজিমকে। তবে কলটি কেটে দেন এই চাকুরীজীবী।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, গ্যাস সাপ্লাই কম থাকায়। এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমনি কম হচ্ছে। ঠিক বিদ্যুত না পাওয়ায় গ্যাস উত্তোলনে ব্যাঘাত ঘটছে তাই গ্যাস সঙ্কট হওয়ায়। বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কম রয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত