নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থিত এ্যাপোলো ক্লিনিক। প্রবেশ মুখেই সরু গলি। বুঝে উঠতেই কষ্ট হয় এখানে কোন ক্লিনিক রয়েছে। উঠার সিড়িগুলোও মুমূর্ষ রোগী নেয়ার জন্য অনুপযোগী। বাসা বাড়ির অবকাঠামোতে নির্মিত চিকিৎসা কেন্দ্রটির সূচনাতেই এমন অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় জনসাধারণ এখন আতংকিত।
প্রসঙ্গত, গত ১১ই আগস্ট বুধবার এ্যাপোলো ক্লিনিকেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের মিটার বিস্ফোরণে দুই ওয়ার্ড বয় দগ্ধ হয়েছেন। এ ঘটনার পর চতুর্থ তলার ৪১০ নম্বরের ওই পর্যবেক্ষণ কক্ষ থেকে বিস্ফোরিত অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ যাবতীয় আলামত দ্রæত সরিয়ে ফেলা হয়। দগ্ধ দুই জন হলেন : ওই হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় হৃদয় (২০) ও রাজিব (২৭)। তাদের একজন হৃদয় এই ক্লিনিকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ক্লিনিকের ভবনে ওঠা-নামার সিঁড়ি সরু হওয়ায় দগ্ধ রাজিবকে স্ট্রেচারে করে নিচে নামাতে বেগ পেতে হয়। তবে রাজিবের গুরুতর অবস্থা হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলের শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই বিস্ফোরণের সময়কার আলামত সরিয়ে ফেলায় স্থানীয়দের মাঝেও বইছে নানা সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠেছে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেও সেখানকার নার্স ও ওয়ার্ড বয়রা কতটা প্রশিক্ষিত তা নিয়েও।
ভুক্তভোগী এবং স্থানীয় অনেকের সাথেই আলাপ করে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহ জুড়ে এখানে অপারেশন করার জন্য দূরদুরান্ত থেকে আগত রোগীরা ভীড় জমায়। তাদের বেশীর ভাগ রোগীকেই রেফার করেন শহরের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার সহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। চিকিৎসাকেন্দ্রটির ভবনে উঠতেই দ্বিতীয় তলায় ক্লিনিকের অর্ভ্যথনা ও অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। আর সেই অপারেশন থিয়াটারের ছোট ছোট তিনটি কক্ষের মধ্যে দুইটি কক্ষ ব্যবহার হয় অপারেশনে। আর একটিতে গাদাগাদি করে ৪টি বেডে রাখা হয় অপারেশনের জন্য রোগীদের। অধিকাংশ সময় জায়গা সল্পতার কারণে মুমূর্ষ রোগীকে বাহির থেকে চেয়ার এনেও বসতে দেয়া হয়। আর সে অবস্থাই চলে তার পর্যবেক্ষণ ও নানা ধরণের ইনজেকশন পুশ।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, এ ক্লিনিকটি অনুমতি কিভাবে পেল ? কখনো কি উর্ধতন কর্মকর্তারা এখানে পরির্দশনে এসেছেন ? অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, এ ক্লিনিকে অপারেশন করে বেডে দেয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা ভোগান্তি। জায়গা সল্পতা থাকায় দ্বিতীয় তলায় অপারেশনের পর কোন রকম লোকজন দিয়েই উপরের তলার বেডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে ৪ তলা ভবনে বেডের সুবিধা থাকলেও রোগীকে উঠানোর জন্য নেই কোন লিফট সুবিধা। এতে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি সাধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আর সম্প্রতি সিলিন্ডার এর মিটার সেটিংস করতে গিয়ে ওয়ার্ডবয়দের দগ্ধের ঘটনার পর এ প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা না পাল্টালে আরো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছে ভুক্তভোগী সহ স্থানীয়রা।
এদিকে হাসপাতালে কর্মরত নার্সরা জানান, দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে এক প্রসূতির অস্ত্রোপচার হয়। তাকে পর্যবেক্ষণ কক্ষে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এজন্য দুই ওয়ার্ড বয় রাজিব ও হৃদয় কক্ষটি প্রস্তুত করছিলেন। ওই কক্ষ থেকে বিকট শব্দ পেয়ে সেখানে গিয়ে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পান রাজিব ও হৃদয়কে।
এ বিষয়ে অ্যাপোলো ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক আবজাল হোসেন জানান, ক্লিনিকে একজন গুরুতর রোগীর জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের মিটার সেট করছিলেন দুই জন। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটনা ঘটে। এতে দুই জনই দগ্ধ হয়। তাদের উদ্ধার করে একজনকে ক্লিনিকেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপরজনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা প্লাস্টিক এন্ড সার্জারি বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। হৃদয় হাসপাতালেই আছেন। বিস্ফোরণ হওয়া কক্ষে অন্য কোনো রোগী ছিল না বলে দাবি তার।