এ রকম অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে নতুন নয় : তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ
পূনরায় পরীক্ষার বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডে জানাবো : মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবীব
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র থেকে ৪০ জন পরীক্ষার্থীর খাতা আটকিয়ে মারধরের অভিযোগে স্বারকলিপি প্রদানসহ বিক্ষোভ করেছে সরকারী তোলারাম কলেজের ব্যবস্থাপনা ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মত তিন দফা দাবিতে সকাল ১১ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সরকারি মহিলা কলেজের ভেতরে অবস্থান নেয় পরীক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত সরকারী মহীলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দাবী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এদিকে একজন শিক্ষকের এমন আচরণে নারায়ণগঞ্জের সর্বমহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কী হবে ৪০ জন পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় এখন পরক্ষিার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেন, মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স পরীক্ষা ছিলো। এদিন বিনা কারণে ৪০জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাপত্র রেখে দেন পরীক্ষক নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম। পরীক্ষাপত্র ফেরত দেয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও পরীক্ষার্থীদের চর ও লাথি সহ অমানবিক আচরণ করেন তিনি।
পরীক্ষার্থীরা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, শিক্ষা জীবনে আমাদের ১৮ টি বছর শেষ করেছি। এ মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফলে নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যত। আমরা অনেকেই চাকুরীর পাশাপাশি পড়াশুনা করছি। এই পরীক্ষায় উত্তির্ণ হলেই পদোন্নতীর সম্ভাবনা আছে। যা আজ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিলো শিক্ষক রফিকুল ইসলাম।
এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানায় তা হলো, সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রফিকুল ইসলামের নারায়ণগঞ্জ থেকে অপসারন। যেসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারেনি তাদের পুণরায় বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং প্রধানমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে নিয়ে কটূক্তি করায় জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
এদিকে আন্দোলন বিরত রাখতে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বেদৌরা বিনতে হাবীব তাদেরকে নিশ্চিত করেন প্রভাষক রফিকুল ইসলামকে পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে সাময়ীক স্থগীত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, যে ৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি তাদের বিষয়টি জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের কাছে জানবেন। যদি অন্য কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। শিক্ষকের এমন ঘটনা কখনই কাম্য নয়। আমরাও খাতা নিয়ে থাকি তা ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ওই আচরণের জন্য আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ বলেন, আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। পরীক্ষা কক্ষে কোনো পরীক্ষার্থীর কাছে ফোন পাওয়া গেলে পরীক্ষক পরীক্ষার্থীকে এক্সফেল করতে পারে। কিন্তু ৩ ঘন্টা খাতা আটকে রাখা কোনো নিয়মের মধ্যে পরে না। আর ফোন নিয়ে পরীক্ষা হলে প্রবেশ করা মানে হচ্ছে তাদের ব্যবস্থাপনাতেও ত্রুটি রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মহীলা কলেজ ও তোলারাম কলেজ পাশাপাশি দুইটি সরকারি কলেজ। আমাদের মধ্যে কোন রেষারেষি থাকার কথা না। কিন্তু এর আগের বারও মহিলা কলেজ থেকে আমাদের কলেজের বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে এক্সফেল করেছে। এ রকম অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে নতুন নয়।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি মিথ্যা দাবি করেছেন অভিযুক্ত সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম। তার দাবি, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সত্য নয়। তিনি এ ধরণের কোনো আচরণ করেননি। পরীক্ষা কক্ষে পরীক্ষার্থীরা গোপনে ফোন নিয়ে আসে। সেগুলো আমাদের কাছে জমা দিতে বললেও তারা সেগুলো জমা না দিলে আমরা তাদের সার্চ করি।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রফিকের বিরুদ্ধে মাস্টার্স পরিক্ষার্থীদের খাতা আটকিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর শিক্ষক জাতিকে গড়ার কারিগর। তবে এবার শিক্ষকের অসদাচরণে, কলংক লেপন করলো র্অথনীতি বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রফিক।
অভিযোগ উঠেছে, পরিক্ষার শুরুর ১৫ মিনিট এর মধ্যেই খাতা নিয়ে যায়। পরে ২ ঘন্টা পর খাতা ফেরত দেয়ার কথা বলে, তিন দফায় ঘুরিয়ে আর পরীক্ষার খাতা ফেরত দেয়া হয়নি। বরং পরিক্ষার্থী পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ায় দেয়া হয় ধিক্কার, করা হয় লাঞ্ছনা। লাথি আর থাপ্পর মেরে বলা হয়, আমি খোদা না। স্যারকে এমন আকুতি করার একপর্যায়ে তিনি বলেন, তুমি যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা শামীম ওসমানের সন্তান হও তাতে আমার কিছু যায় আসেনা, আই ডোন্ট কেয়ার।
তাছাড়াও নারী পরীক্ষার্থীকে আত্যহত্যায় উদ্বুদ্ধ করে শিক্ষক রফিক বলেন, হু মরে যাও ! মারা গেলে তুমিও হেড লাইনে আসতে পারবা আমিও পারবো!! টিভিতে দেখাইবো। যেখানে ৪০ টা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত গলা টিপে হত্যা করেছে বলে আক্ষেপ জানায় পরীক্ষার্থীরা ! ১৩ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনার পর ওইদিন রাতে তারা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে।