নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সিরাত ) : ব্রজেন্দ্র কুমার লাল সাধু। পেশায় একজন সুদক্ষ কামার। লাল জামা পরিহিত বন্দরের কামার শিল্পের এক সুপরিচিত নাম। কড়া নাড়ছে ঈদ উল আযহা, আর মাত্র ১ দিন বাকি। কিন্তু মহামারী করোনার থাবায় যেন লাল সাধুদের শিল্প থমকে গেছে ।
সারা বছর অলস সময় পার করলেও কর্মকাররা অপেক্ষায় থাকেন কোরবানির ঈদের জন্য। কোরবানি মৌসুমের উর্পাজন দিয়েই সারা বছরের উপার্জন জোটে তাদের। তাই এই সময় কয়লার চুলায় দগদগে আগুনে গরম লোহায় ছন্দময় পিটাপিটিতে ঢুং ঢাংক শব্দে মুখরিত থাকত সাধুর দোকান। তাদের এই টুংক টাংক শব্দে ভোরেই ঘুম ভাঙ্গত দোকানের আশ-পাশের মানুষের। কেউ আসত কোরবানী করার অনুসঙ্গ ধারালো ছুরি, বটি ধামা সহ বিভিন্ন জিনিস তৈরী করতে। আবার কেউবা আসতেন এ সব সরঞ্জাম শান দিতে। বছরে অন্য সময়ে দিনে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার হলেও এ সময়ে আয় হতো ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা। এ বছর করোনা পাল্টে দিয়েছে লাল সাধুর মতো কর্মকারদের চিরচেনা চিত্র। কাংখিত কাজ না পাওয়ায় আয় রোজগার ভাটা পড়েছে। আর যে পরিমাণ কাজ পাওয়া যাচ্ছে তা কয়লা ও ইস্পাতের অভাবে বানাতে হিম শিম খাচ্ছে। বাধ্য হয়ে এ পেশা থেকে অনেক কর্মকাররাই এখন অন্য পেশায় যোগ দিয়েছে।
কিন্তু কর্মকার লাল সাধুর ছেলে শুভ লাল তাদের বংশের ঐতিহ্য কর্মকার শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বাধ্য হয়ে তার সৌখিন ক্যামেরা, মোবাইল সহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে দোকানে লোহা কিনে ছুড়ি বানানোর চেষ্টা করছেন। গত ২৯ জুলাই বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, এ রকমই চিত্র। কর্মকার লাল সাধু জানান, এই শিল্প আমার বংশগত। আমার জীবনে কখনো এ রকম চিত্র চোখে পড়ে নি। প্রতি বছর দোকানে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা বেচা কেনা হতো কিন্তু এ বছর ১০ হাজার টাকারই হবে কিনা সন্দেহ। বিক্রি না হবার কারন উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার কাজ কর্ম হারিয়ে মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ। অনেকে কোরবানিও দিতে পারছে না। যার কারনে আমার দোকানে ভিড়ও কমে গেছে।
লাল সাধুর মতো বাংলাদেশের অধিকাংশ কামার শিল্পের করুন দশা। মানবেতর জীবন যাপন করছে তাদের পরিবারগুলো। তাদের দরকার সরকারী সহায়তার মাধ্যমে তাদের পূর্নবাসন করা। সরকারীভাবে এ রকম কামার সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা করা না হলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প হয়তো বাংলাদেশের বুক থেকে হারিয়ে যাবে ।