ওসির বক্তব্যে কিসের আলামত? সাম্প্রদায়িক সংক্রান্ত সভায় ক্ষমতাশীল দলীয় নেতাদের সাফাই!

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি ) : প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়েও একজন রাজনীতিবিদ, নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের ক্ষমতাশীল দলের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের জন্য দোয়া চাইলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মু. সরাফত উল্লাহ। এ নিয়ে থানা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এসময় এলাকাবাসীর অনেককে মন্তব্য করতে দেখা যায়, থানা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ওসি মু. সরাফত উল্লাহর উপস্থিতি ও অতিথির সাড়িতে বসে ক্ষমতাশীল দলের নেতাদের সাফাই টেনে বক্তব্য দেয়ার কারনটা কি? অনেকের মাঝেই চলে এসেছে নানা প্রশ্ন? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সংক্রান্ত মত বিনিমিয় সভায় হঠাৎ চাটুকারিতার কারন কি? এ কিসের আলামত?

বুধবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ আয়োজিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সংক্রান্ত মত বিনিমিয় সভা অনুষ্ঠানে তিনি সভাপতির বক্তব্যে এ দোয়া চাইলেন। ওসি মু. সরাফত উল্লাহ নারায়ণগঞ্জে ওসি মু. সরাফত উল্লাহ নামের চেয়ে রনি নামে সুপরিচিত। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ঘনিষ্ট জন ছিলেন এবং এক নেতার স্বজনকে তিনি বিয়ে করেন। অনুষ্ঠানে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সংক্রান্ত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো বক্তব্য না রেখে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন।

এ ছাড়াও এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়নি থানা এলাকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক, মসজিদের ইমাম মোয়জ্জেমসহ অন্য ধর্মীয় উপসনালয়ের গুরু’রা। শুধুমাত্র যারা থানা আ:লীগের অনুগত তারাই এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জেলা পুলিশ সুপারের অনুপস্থিতিতে প্রধান অতিথির আসন গ্রহন করেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিউর রহমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবুর রহমান, সহসভাপতি ও থানা কমিটি পুলিশের সভাপতি আলহাজ্ব শাহ আলম, সাধারন সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক আলহাজ্ব মতিউর রহমান মতি প্রমুখ।

পুরো অনষ্ঠানটি একটি মহলের নিজস্ব কিছু স্বার্থ আদায়ের ও শোডাউন হয়েছে বলে মনে করেছেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগন ও সুশিল সমাজ।

জানা গেছে, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেব জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। মুলত আজকের এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে এলাকাবাসী নবাগত পুলিশ সুপারের বক্তব্য ও তার সাথে পরিচিত হওয়ার জন্যই এ অনুষ্ঠানের গুরুত্ব দিয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ মতবিনিময় সভায় সিদ্ধিরগঞ্জের ক্ষমতাশীণ দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে যোগ দেয়ায় মিছিলে অংশ গ্রহন করা অনেকেই মনে করেছেন এটা  ক্ষমতাশীন দল আ’লীগের কোন জনসভা।
উল্টো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সংক্রান্ত মত বিনিমিয় সভা অনুষ্ঠানটি মতবিনিময় সভা না হয়ে একটি রাজনৈতিক জনসভায় পরিনত হওয়ার এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে গত অক্টোবর মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় ওসি সরাফতকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ বর্ধিত সভায় থানা আ:লীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা অবমূল্যায়িত হয়েছেন। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলে গেছেন।

অন্যদিকে আজকের এ জনসভায় ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলা হোসেন আলাসহ ২/৩জন কাউন্সিলর উপস্থিত হলেও তাদেরকে মঞ্চে না ডেকে দলীয় বিভিন্ন নেতাদের মঞ্চে অতিথির আসনে বসিয়ে সম্মানিত করা হয়। এতে একপর্যায়ে কাউন্সিলর আলা হোসেন আলা উপস্থিত দর্শকদের সাড়ি থেকে উঠে গিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

এদিকে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক থানা বিএনপি’র কয়েক শীর্ষ নেতা জানান, ওসি সরাফত এ থানাতে যোগ দেয়ার পর আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রক হিসেবে নেপথ্যে থেকে থানা আ’লীগকে পরিচালনা করছেন। এনিয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এলাকায় স্বাধীন দেশের পরাধীন নাগরিক হিসেবে বাস করছে। সব সময়ই মামলা হামলা’র আতংকে দিনাতিপাত করছে।

তবে, এ মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন এ চিত্রের পুরা উল্টো।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম নিয়ে একটি গোষ্ঠি দেশে অরাজগতা করার অপচেষ্টা করছে। মিথ্যা তথ্য প্রচার করে ভাই ভাই এর মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করিয়ে সুবিদাবাদিরা নিজেদের ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আমাদের মনে হয় একজন মুসলমান, একজন হিন্দু ও বৌদ্ধর রক্ত লাল। তাহলে কেন ভেদাবেদ সৃষ্টি করে দেশে অরাজগতার তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা এ জঘন্য কাজ করে তারা কোন মানুষ হতে পারেনা। তাই সকলকে দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মিলেমিশে এ বাংলাদেশটাকে একটি উন্নত দেশে পরিনত করতে আপনাদের আহবান করছি।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত