নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৬৬ বছরেও মূল্যায়ন করা হয়নি বন্দরের মহান ভাষা সৈনিকদের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা সৈনিকদের নামানুসারে বিভিন্ন সড়ক কিংবা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ অথবা বৃত্তি প্রদান করা হলেও বন্দর থানা অঞ্চলের ভাষা সৈনিকদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কোন উদ্যোগ অদ্যাবধি পরিলক্ষিত হয়নি। যে কারণে নিরবে নিস্তব্দে হারিয়ে যেতে বসেছে ভাষা সৈনিকদের বীরত্বগাঁথা সেই ইতিহাস। সরকারি তালিকা অনুযায়ী বন্দর থানা এলাকায় ৬জন ভাষা সৈনিক রয়েছেন।
এরা হচ্ছেন মাহমুদনগর এলাকার বাসিন্দা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মফিজুল ইসলাম, সোনাকান্দা মৃধাবাড়ি এলাকার শফিউল্লাহ মৃধা, আহসানউল্লাহ মৃধা,চৌধূরীপাড়া এলাকার আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাসান, আলহাজ্ব এম এ আসগর ও নবীগঞ্জ বাগবাড়ি এলাকার আশেক আলী মৃধা,কদমরসুল এলাকার মরহুম ফুল মিয়া চৌধুরী,মরহুম আলাউদ্দিন,ধামগড় মনারবাড়ি এলাকার জবেদ আলী মোল্লা।
৯ ভাষাবীরের মধ্যে বর্তমানে মোঃ জবেদ আলী মোল্লা,আহসান উল্লাহ মৃধা, আলহাজ্ব এম এ আসগর জীবিত থাকলেও ইতোমধ্যে মৃত্যবরণ করেছেন মরহুম মফিজুল ইসলাম,মরহুম আশেক আলী মৃধা,শফিউল্লাহ মৃধা,মরহুম ফুল মিয়া, আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাসান। ভাষা সৈনিকদের পরিবারগুলোর দাবি,দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভাষা সৈনিকদের নামানুসারে অসংখ্য সড়ক ও স্মরণী’র নামকরণ করা হয়েছে ভাষা সৈনিকদের স্মৃতি সংরক্ষণের স্বার্থে বন্দরের ভাষা সৈনিকদের নামানুসারে সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা অঞ্চলের বিভিন্ন সড়ক কিংবা চত্ত্বরের নামকরণ করা হোক। তাতে ভাষা সৈনিকদের পরিবারগুলো তাদের পূর্ব পুরুষদের ত্যাগ-তিতিক্ষাকে স্বার্থক হিসেবে গ্রহণ করবে।
এ ব্যাপারে মরহুম একেএম শফিউল্লাহ মৃধা’র ছেলে সহিদুল হাসান মৃধা জানান,মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছে অথচ ভাষা সৈনিকদের নিয়ে কারো কোন গুরুত্ব নেই। আজকে বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনে যদি ভাষা সৈনিকরা আন্দোলনে ঝাপিয়ে না পড়তো তাহলে আমাদেরকে কথা বলতে হতো উর্দ্দু ভাষায়। ভাষার ইতিহাস ভুলে গেলে চলবেনা। বায়ান্ন’র বাংলা ভাষা থেকেই ৭১’রে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। মফিজুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্র মাহাবুবুল ইসলাম রাজন বলেন,অনেক তদ্যাগ-তিতিক্ষার পর আমার মহান ভাষা সৈনিক পিতা মফিজুল ইসলাম কেবল স্বীকৃতি ব্যাতিত আর কিছুই পাননি। জীবদ্দশায় কোন সম্মানও দেখানো হয়নি তাকে।
এজন্যই কি আমার পিতা জীবন বাজি রেখে ভাষা আন্দালনে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। তার মৃত্যুর এই দু’বছরেও এসে বলবে অন্ততঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কেএন সেন রোডটি যেন তার নামানুসারে নামকরণ করা হয়। তাতে ভাষা সৈনিকের পরিবারের সদস্য হিসেবে একটু হলেও শান্তনা পাবো। অন্যদিকে ভবিষ্যত প্রজন্মও ভাষাবীরদের ইতিহাস সারাজীবন জানতে পারবে। আলহাজ্ব এ আসগরের কনিষ্ঠ পুত্র আলী আকরাম তারেক অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে জানান,আমার পিতা এবং জেঠা তারা উভয়েই জীবন বাজি রেখে ভাষা আন্দোলনে শরীক হয়েছিল। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছে লাঞ্চনা আর গঞ্চনা।
ভাষা আন্দোলনের ১শ’ ১৪ বছরেও তাদেরকে তেমনভাবে কোন মূল্যায়ন করা হয়নি। কেবল ভাষা দিবস এলেই নামকাওয়াস্তে সম্মামনা জানানো হয়। আমরা চাই স্বীকৃতি। যারা ভাষার অস্বিত্ব টিকিয়ে রেখেছে তাদের অসামান্য কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন সড়ক কিংবা চত্ত্বরের নাম রাখা হলেও আর কিছু না হোক নিজেদের মনটাকে শান্তনা দেয়া যাবে। আশেক আলী মৃধা’র পুত্র হুমায়ূন কবির মৃধা বলেন,ভাষা সৈনিকদের প্রতি কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। যাঁদের আতœত্যাগে আজকে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি সেই তাদেরকেই যদি মূল্যায়ন না করা হয় তাহলে ভাষার স্বার্থকতা থাকেনা।
ভাষা বীরদের ঋৃণ কোনদিনই শোধরানো সম্ভব নয়। ইতিহাস সংরক্ষণের স্বার্থে হলেও ভাষা সৈনিকদের নামানুসারে বিভিন্ন সড়ক কিংবা চত্ত্বরের নাম রাখা বাঞ্চনীয়। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব একেএম সেলিম ওসমান,নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী এবং নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিঞা’র কাছে বন্দরের ভাষা সৈনিক পরিবারের সদস্যদের দাবি,যে কোন মূল্যে হলেও সিটি কর্পোরেশন অথবা উপজেলার যেখানেই হোকনা কেন উল্লেখিত ৬ ভাষা সৈনিকের নামানুসারে যাতে বিভিন্ন সড়ক ও চত্ত্বরের নামকরণ করা হয়। এদিকে প্রতিবছর রহমতউল্লাহ মুসলিম ইনষ্টিটিউটের উদ্যোগে সম্মামনা প্রদান করা হলেও এবার তা হচ্ছেনা। এ কারণে ভাষা সৈনিকদের পরিবারে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করছে।