এবারো মুখোমুখি মতি-সিরাজ

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : বরাবরই সংর্ঘষ আর মারামারির ঘটনায় সমালোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের ৬নং ওর্য়াড। অধিপত্য বিস্তার আর পুর্ব শত্রুতার জের ধরে নানা কারণেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীণ এ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় রক্তাক্ত জখমের ঘটনা নতুন কিছু নয়। আর এসব সমাধানে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ব্যপক ভূমিকা নেয়ার কথা থাকলেও সাবেক এবং বর্তমান কাউন্সিলরের অর্ন্তকোন্দলের কারণে উল্টো ভোগান্তিতে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, এই ওয়ার্ডে অধিকাংশ অনাকঙ্খিত মারমারির ঘটনার পিছনে সম্পৃক্ততায় নাম চলে আসে বর্তমান কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়ল-২) ও থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি এবং সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল অনুসারীদের।গেলবছরে সামান্য ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জের এসও রোড এলাকায় মতি’র অনুসারী তেল ব্যবসায়ী আশরাফ উদ্দিন ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ও র‌্যাব-১১ এর একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেটও ছুড়তে বাধ্য হয়।

এর কয়েকমাস পরেই রাতে সিগারেট ধরানোকে কেন্দ্র করে ৬নং ওয়ার্ডের আইলপাড়ায় কাউন্সিলর মতিউর রহমান ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলের দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। মতি গ্রুপের পানি আকতার ও সিরাজ মন্ডল গ্রুপের শাকিল গ্রুপের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়েছিল। এ নিয়েও লংকা কান্ড ঘটে। বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাও নেয়। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস আই মাহাবুব বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। সেখানে বিস্ফোরক ও পুলিশের কর্তব্য কাজের বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়। যে মামলার সকল আসামী কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের লোককে জড়ানো হয়েছিল। এরপর বেশ কিছুদিন এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রয়েছিল। তবে এ দুইজনের জেরের বলি হয় সধারণ মান্ুেষর ব্যপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তাদের অভিযোগ সাবেক কাউন্সিলর ও বর্তমান কাউন্সিলরের দ্বন্দ্বে পুরুষ শূণ্য হয়ে পড়েছিল এলাকাটি। পুলিশ আসলেই ঘরে কোন পুরুষ পেলেই ধরে নিয়ে যেত। এতে ভীত হয়ে সকল পুরষরা বাড়িতে থাকা বন্ধ করে দিয়েছিল।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কেরপোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে ডিসেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষনার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এ ঘোষনার আগে থেকেই সাপ-ভেজি’র সম্পর্ক রয়েছে মতি ও সিরাজ মন্ডলের। তাই উভয়ই প্রতিপক্ষ ভেবে র্দীঘদিন ধরে পথ চলে যাচ্ছে। আর তাদের লক্ষ করে অনুসারীরাও হেঁেট যাচ্ছে একই সংঘাতের পথে। সবসময়ই পৃথকভাবে তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশ নেন। তাছাড়া সামাজিক কর্মকান্ডেও তারা নিজ উদ্যোগে এগিয়ে রয়েছেন। ব্যপক প্রতিযোগীতায় এবারো তারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বলেই জানিয়েছন ঘনিষ্ঠ সূত্র। আর সে মতে বাস্তবতাও রয়েছে। একদিকে যেমনি কাউন্সিলর মতি এবং তার অনুসারীরা ভোটারদের বাড়িতে উন্নয়নের ফিরিস্তি তোলে ধরছেন। তেমনি সিরাজ মন্ডল এবং তার অনুসারীরা তার বিপরীতে মতি’র ব্যর্থতা তোলে ধরছেন। দিচ্ছেন পুর্বের অসম্পূর্ণ কাজের বাস্তবায়নের জন্য নানা প্রতিশ্রুতিও।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিরাজুল ইসলাম মন্ডল ছিলেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কাউন্সিলরের মধ্যে সিরাজ মন্ডল একজন। এলাকায় সিরাজ মন্ডল একটা সময় উন্নয়নও করেছিলেন। তিনি তার মতো করে ওয়ার্ড পরিচালনা করেছেন। মতিউর রহমান মতি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের অন্যতম ঘনিষ্ট লোক হওয়ার পরও বড় ধরনের কোন সমস্যা বা কাজ করতে ঝামেলায় পড়তে হয়নি সিরাজ মন্ডলকে। বরং মতি সহযোগিতা করেছেন ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজে। একটা সময় সিরাজ মন্ডলের রাজনৈতিক কোন পরিচয় ছিল না। আর মতিউর রহমান সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের তৎকালীন আহবায়ক ছিলেন।

২০১৬ সালের নির্বাচনে মতিউর রহমান মতি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ভালোই চলছিল ওয়ার্ডের সকল কার্যক্রম। উজ্জীবিত ছিল আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা। শামীম ওসমান বলয়ের সকল লোকজন মতির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। ফলে সাংসদ শামীম ওসমানের যে কোন কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক নিয়ে মতি যোগদান করে। সিদ্ধিরগঞ্জেও আওয়ামীলীগের কোন অনুষ্ঠান হলে সেখানে মতির মিছিল না গেলে কর্মসূচি প্রাণ পায় না। কিন্তু এটা আবার আওয়ামী লীগের কোন কোন শীর্ষ নেতার ভালো লাগতো না। এই কারণেই সে অনেকের চক্ষুশুল হয়। মতিকে দমানোর মিশনে পর্দার আড়ালে সক্রিয় হয় দলেরই একাধিক শীর্ষ নেতারা।

এদিকে আকস্মিকভাবে সিরাজ মন্ডল বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের জেলা কমিটির সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন। যদিও আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিতে তাকে অতীতে দেখা যায়নি। দলের কোন কমিটিতে তার সদস্য পদও ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে এক লাফে কিভাবে সে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিলো এ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চালু রয়েছে দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে। এই পদ পাওয়ার পর থেকেই এমপি শামীম ওসমানের দিকে ভিড়ার মিশন শুরু করে সিরাজুল ইসলাম মন্ডল। বর্তমানে তিনি শামীম ওসমানের বিভিন্ন সভায় অংশ গ্রহনও করেন।

আরো জানা গেছে, তার বড় ভাই মজিবুর রহমান মন্ডল নাসিক মেয়র আইভীর অনুসারী হওয়ার সুবাদে এবং আইভীর কোঠায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পেয়ে যায়। যদিও মজিবুর রহমান মন্ডলকে গত ১০ বছর ধরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে দেখা যায়নি। মজার বিষয় হলো এক ভাই নাসিক মেয়র আইভীর দিকে আরেক ভাই শামীম ওসমানের দিকে। যদিও এর নেপথ্যে মজিবুর রহমান মন্ডলের পরামর্শ কাজ করছে । কারণ একজন নাসিক মেয়র আইভীর সাথে আরেক শামীম ওসমানের সাথে থাকলে দুইদিক থেকেই সুবিধা পাওয়া যাবে। তাছাড়া নাসিক মেয়র আইভীর সমর্থন পাওয়া গেলে ভোট ব্যাংকে কোন সমস্যাই হবে না। আর তা লুফে নিতেই তারা কাজ করছেন বলে মনে করছন স্থানীয় অনেকেই।

অন্যদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে মতির বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছিল। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে তেল সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও তার বেশ প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক কিছুই এখন কাউন্সিলর মতি নিয়ন্ত্রন করেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে দেখার বিষয় উভয়ের মধ্যে কে জনগনের ভোটে জয় লাভ করে আবারো জনপ্রতিনিধির চেয়ার হাসিল করতে পারেন। নাকি নতুন কোন মুখ আসবে সেই অপেক্ষায় নাসিকের ৬নং ওয়ার্ডবাসী।

add-content

আরও খবর

পঠিত