আওয়ামীলীগ কমিটিতে জামাত-বিএনপি !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিবেদক ) : এবার নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি তালিকার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে সভাপতি নাজির উদ্দিন ও সেক্রেটারি আল মামুনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তালিকাভুক্ত অনেকেরই আবার জামায়াত-বিএনপি দলের সাথে রয়েছে বেশ শখ্যতা। নেই আওমীলীগের সাথে কোন সম্পৃক্ততা, তারপরেও প্রাথমিক সাধারণ সদস্য হয়ে সদর থানা আওয়ামীলীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে এসেছে নাম।

আর এমন অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটির অন্যান্য নেতারা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সভাপতি নাজির উদ্দিন ও সেক্রেটারি আল মামুন। এদিকে অনিয়মের অভিযোগ পত্রটি ইতমধ্যে পৌছেছে জেলা নেতাদের কাছেও। কিন্তু স্বচ্ছতার সাথে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল।

জেলা আওয়াামীলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো লিখিত সেই অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সদর আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের জন্য যে সকল ব্যাক্তির নামের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে তাদের অনেকই আওয়ামীলীগের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই জামায়াত-বিএনপি থেকে আগত। তাছাড়া প্রাথমিক সাধারণ সদস্য হয়েই তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবীতে রাখা হয়েছে। আর তাদের এই সমস্ত কর্মকান্ড প্রমাাণ স্বরূপ- বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এর ফটোকপিগুলি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করেছেন।

তারা আরো যুক্ত করেন, সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য এ তালিকা করেছে। সেখানে আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতা-কর্মী যারা দ্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলন থেকে অদ্য পর্যন্ত দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জীবন বাজী রেখে দলের স্বার্থে অদ্যবধি কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।

এদিকে প্রস্তাবিত তালিকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে গোগনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি অর্থের বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ওই কমিটির তালিকা জেলা নেতাাদের কাছে জমা দিয়েছে। কিন্তু এই কমিটির বিষয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করেনি। ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রাধান্য না দিয়ে বিএনপি জামাত থেকে আসা হাইব্রিড কয়েকজন নামধারী নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটির তালিকায় এমন ব্যক্তিকে সহ সভাপতি পদে রাখা হয়েছে যাকে আমরা ইউনিয়ন বা থানা পর্যায়ের আওয়ামীলীগের র্কাযক্রমে দেখি নাই।

আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন নিজেদের বলয় ভারী করার জন্য স্বজন প্রীতি করে কমিটিতে আত্মীয় স্বজনের নাম বসিয়েছে। অথচ দলের হাই কমান্ড থেকে নির্দেশ আছে কমিটিতে স্বজন প্রীতি করা যাবে না। ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা করা হয় নাই। কিন্তু বিগত কমিটি গুলোতে তৃনমূল নেতা কর্মীদের মতামত নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এবার তা হয় নাই।

তালিকায় অর্ন্তভুক্তদের বিষয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমারা কোন মাধ্যমে জানতে পেরেছি সুলতানা নামে এক নারীকে সদরা থানা আওয়ামীলীগের কমিটি তালিকায় মহিলা সম্পাদিকা পদে রাখা হয়েছে। তাকে আমি চিনিই না। একই সাথে সায়েম আহম্মেদ এইবার প্রথম প্রাথমিক সদস্য হয়েছে। সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এবং আলীরটেক ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেয়ার জন্য নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তাকে গুরুতপূর্ণ বড় পদে রেখেছে। তিনি কখনো আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত ছিল না। সেই সাথে জসিম উদ্দিন ও দাউদ চেয়ারম্যান নামের বহিরাগত ব্যক্তিদের পদ দেয়া হয়েছে কমিটির তালিকায়। যা দলের স্বার্থের পরিপন্থী।

তিনি আরো বলেন, এ কমিটি তালিকা আমরা মেনে নিবো না। জেলা আওয়ামীলীগের হাই কমান্ড বরাবর লিখিত ভাবে অনাপত্তি দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। হাইব্রিডদের নিয়ে করা কমিটির তালিকা অনুমোদন দেয়া হলে আমরা মেনে নিবো না। প্রয়োজনে দলের কেন্দ্র পর্যন্ত জানাবো। এই কমিটির অনুমোদন হলে তৃনমূল পর্যায় নেতাদের অধিকার হরণ করা হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাজির উদ্দিন বলেন, কমিটির সব কিছু ওকে আছে। অভিযোগ অনেকেই করতে পারে। তা কতটুকু সত্য জেলা কমিটিতে যারা দায়িত্বে আছে তারা তা যাচাই বাছাই করবনে।

অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমরা দেখে শুনেই কমিটিতে প্রস্তাব করেছি। কিছু কুচক্রিমহল তারা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। এটা আমাদের দলীয় বেপার। মিডিয়াতে না আসাই ভালো। একটা কাগজ তারা দিয়ে গেছে বিষয়টি দেখার আছে। তাই এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল জানান, যদি প্রামানিক দলিল থাকে তাহলে কখনই ওই ধরণের বিতর্কিত কোন লোককেই দলে প্রবেশ করানো হবে না। আমাদের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে। আর আমরা স্বচ্ছতার সাথে সেভাবেই কাজ করছি। তবে যাদের বিরুদ্ধে জামাত-বিএনপি সম্পৃক্তার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সহ অভিযোগ দিতে হবে। তাহলে আমরা বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিবো।

add-content

আরও খবর

পঠিত