নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : নগরীতে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রিতে নৈরাজ্য কায়েম করেছে একটি অসাধু ব্যবাসায়ী চক্র। সিন্ডিকেট বানিজ্যের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে চরম ভোগান্তি ও বিতর্কের যেন শেষ নেই। একে তো যাদের তিতাস সংযোগ রয়েছে অনেক এলাকাতেই গ্যাস সল্পতায় রান্নার চুলায় আগুন জ্বলছে না। তার মধ্যে মালিক পক্ষের কারসাজিতে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রিতে চলছে ইচ্ছে মত দাম বাড়িয়ে দেয়ার নোংরা খেলা। এতে করে বাধ্য হয়েই চওড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাস।
জানা গেছে, ক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিতে সরকারী-বেসরকারী কোন নির্দেশ নাই মানছেনা ওইসব অসাধু ব্যবাসায়ী চক্র। ফলে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাগণ। দেশে গত ১০ বছরে গ্যাসের দাম সমন্বয় হয়েছে কয়েক দফা। বেসরকারীভাবে এসব এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য কমানোও হয়েছে, কিন্তু তা মানতে নারাজ মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। আর এতে সিন্ডিকেট করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অধিকাংশ মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর লাভবান হচ্ছে গুটি কয়েকজন। তবে এসব বিষয়ে কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বিস্ফোরক দ্রব্য অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসন।
এমনই ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন ভুক্তভোগী জানায়, বর্তমানে আমরা যারা তিতাস এর গ্যাস সংযোগ নিতে পারিনি। তারা সবচেয়ে বেশী ভোগান্তিতে আছি। কারণ আমাদের নির্ভরই করতে হয় একমাত্র সিলিন্ডার গ্যাস এর উপরে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় ভিন্ন দামে আমাদের বাধ্য হয়ে ১২ কেজি বোতলের গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়। এরমধ্যে করোনা, শীত! দাম বাড়ানো কমানো নিয়ে নানা অযুহাত তো থাকেই। এমন সময় গিয়েছে ১৩৫০টাকা দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছি। তবে তাদের এই যা ইচ্ছে তাই মূল্যে বিক্রি বন্ধ করতে কখনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।
এ বিষয়ে শহরের গলাচিপা এলাকায় রাতুল নামে এক খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানায়, সরকারী দামতো আগে থেকেই কেউ মানে না। আর বেসরকারীভাবে যেটা ১লা জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা তা মালিক পক্ষ মাইনা নেয় নাই। তাই আমাদের কিছু করার নাই। বরং মালিকরা আরো ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়ায় দিসে। এজন্য আমরাও বাধ্য হয়েই বেশী দামে বিক্রি করি। বর্তমানে ১১৫০টাকা করে প্রতিটি ১২ কেজির এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের বোতল বেচতাসি।
এদিকে, সম্প্রতি বিশ্ববাজারে দাম কমায় দেশে ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য দ্বিতীয়বারের মতো সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯০৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৪২ টাকা করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, যা ১ জুন থেকে কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছিল। আর উৎপাদন পর্যায়ে ব্যয় পরিবর্তন না হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এলপিজির দাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম আগের ৫৯১ টাকাই থাকছে। তবে এর কোন বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি সাধারণ ভোক্তাগণ।
নগরীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা যায়, বেশীর ভাগ দোকানীতেই রয়েছে বেক্সিমকো, বসুন্ধরা গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, ওরিয়ন, নাভানা, বিএম, ওমেরা, টোটাল নামের এসব দেশীয় কোম্পানির এলপিজি গ্যাস। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের এলপিজি ব্যবসার অনুমোদন রয়েছে। সেখানে এই জেলার অলিগলিতে মুদি দোকান থেকে চায়ের দোকান ও বাজারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। যা নগরবাসীর জন্য একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ। আর বিভিন্ন সময়ই নানা দূর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনাও দেখছে নগরবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, গত প্রায় তিন দশক ধরে দেশে এলপি গ্যাস বাজারজাতকরণ হয়ে থাকলেও এতদিন সরকারিভাবে এর দাম নির্ধারিত ছিল না। বর্তমানে দেশের একেক প্রান্তে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে এলপিজির বোতল। শহরে ১২ কেজি বা সাড়ে ১২ কেজির একটি বোতলের খুচরা মূল্য ১০৫০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে। তবে একই পণ্য অন্য উপজেলা ও গ্রাম এলাকাগুলোতে সাড়ে ৯০০ টাকায়ও মিলছে এলপিজির ১২ কেজির বোতল।
অন্যদিকে, এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দাম ঘোষণা করে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। গত ১২ই এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করেছিলো ওই সংস্থা। সে সময় বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হবে। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল একদফা দাম সমন্বয় করা হয়।
এছাড়াও ওই সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, সৌদি সিপি, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ও ব্যাংকিং হারে পরিবর্তন বিবেচনা করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কেউ নির্ধারিত দামের কমে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। কমিশন ঘোষিত মূল্যহার বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন যাতে ভূমিকা রাখতে, সে জন্য বাণিজ্য সচিব ও জ্বালানি সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়নে মাঠে নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে কথা হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর জেলা সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান জানায়, আমরা অবশ্যই ভোক্তা অধিকারে কোন হরণ হলে ব্যবস্থা নিবো। তাছাড়া ওই সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনগতভাবেও পদক্ষেপ নিতে পারবো।