নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় রাফিত আল হাসান নামে মুন্সিগঞ্জগামী একটি লঞ্চ অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ২৬টি মরদেহ সহ এ পর্যন্ত শিশু সহ ২৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে লঞ্চ সহ এক এক করে ২৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ বিকাল ৪টায় শিশুর মরদেহটি পানি থেকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড, দমকল বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল। এদিকে এর আগে ৫ই এপ্রিল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সাবিত আল হাসান নামে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চটি ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়।
এরআগে ৪ঠা এপ্রিল রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৬টার কিছু সময় পরে লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের দিকে রওনা দেয়। একটি মালবাহী একটি মালবাহী কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এটি ডুবে যায় বলে জানা গেছে। এরপর কয়েক দফা চেষ্টা চালিয়েও রবিবার লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে ৫ই এপ্রিল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। এদিকে শীতলক্ষ্যার তীরে স্বজনহারা মানুষের ভিড় বেড়েছে। চলছে মরদেহ শনাক্তের কাজ। লঞ্চ ডুবির ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মহোদয়ের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ–পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের নির্দেশে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) রফিকুল ইসলামকে। উদ্ধার অভিযানে ছিলেন ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নারায়ণগঞ্জ ইউনিট ও উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় সহ বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠন।
নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ বহন ও দাফন কাজের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিকালে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে সাবিত আল হাসান। কিছুদূর যাবার পরে ঝড়ের কবলে পড়ে লঞ্চটি। সৈয়দপুর এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর পাইলিং কাছে একটি কার্গো জাহাজ তাকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। লঞ্চ থেকে সাঁতরে কেউ কেউ উঠতে পারলেও অনেকেই লঞ্চের সাথেই তলিয়ে যায়।
এদিকে লঞ্চ ডুবির খবর পেয়ে যাত্রীদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্বজনদের কান্নায় ভারি শীতলক্ষ্যা পাড়। ওদিকে লঞ্চ ডুবির খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো.মোস্তাইন বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, সদর উপজেলার ইউএনও নাহিদা বারিক প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুস্তাইন বিল্লাহ বলেন, গতকাল সন্ধা ৬টায় লঞ্চটি ডুবে যায় । আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম বিলম্ব হয়। এই পর্যন্ত ২৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে । উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যে কার্গোটি ঘটানাটি ঘটিয়েছে সেটার খোঁজ পাওয়া যায়নি তবে কার্গোটির সন্ধান চলছে। যারা এই দূর্ঘটনার জন্য দায়ী তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।