নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। হোটেল-মোটেলগুলোতেও ঠাঁই মিলছে না। ১৯শে ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ও ২০শে ফেব্রুয়ারি শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি রবিবার মহান শহীদ দিবস নিয়ে টানা ৩ দিনের ছুটির সুযোগে কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে এসে ভিড় জমিয়েছেন। দীর্ঘকালীন সময় ধরে কভিড-১৯ এর কারণে ঘরবন্দি মানুষ করোনা ভীতি কাটিয়ে শীত মৌসুমের শেষ দিকে টানা ছুটি পেয়ে ভিড় জমিয়েছে সৈকতে। স্থানীয়দের ধারণা কমপক্ষে ৩ লক্ষাধিক পর্যটক এক দিনে এসে ভিড় করছে কক্সবাজারে। আগামী দুই দিনে এ সংখ্যা দ্বিগুণে দাঁড়াবে বলে মনে করছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, পর্যটক সমাগমের কারণে শহরসহ সৈকতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক সাকের আহমদ জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের ৮০ জন সদস্য শুক্রবার সকাল থেকে সৈকতে ডিউটি করছেন। এই ৮০ জন ১৭ ভাগে ভাগ হয়েই নেমেছেন হোটেল-মোটেল জোন থেকে সৈকত পর্যন্ত। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, আমাদের ডিউটিরত সদস্যরাও পর্যন্ত ভিড়ের কারণে এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।
ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক জানান, সৈকতে তিল ধারণের জায়গাও নেই। এত বিপুল সংখ্যক ভ্রমণকারী গত পাঁচ বছরের সময়েও এক সঙ্গে ভিড় জমাননি। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, শুক্রবার এক দিনেই কমপক্ষে ৩ লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। কক্সবাজারের সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেলে ২ লক্ষাধিক অতিথি থাকতে পারেন। বাদ বাকিদের একটু কষ্ট করে রাত অতিবাহিত করতে হবে।
তবে তিনি মৌসুমগত কারণে পর্যটকদের তেমন দুর্ভোগে পড়তে হবে না জানালেও বাস্তবে দেখা গেছে, অনেক ভ্রমণকারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাত কাটানোর একটি কক্ষের জন্য। সাগর পাড়ের হোটেল-মোটেলে সিট না পেয়ে শহরের ঘিঞ্জি এলাকার নিম্ন মানের আবাসিক হোটেলের রুম পর্যন্ত বাড়তি ভাড়ায় পর্যটকরা ভাড়া নিয়ে রাত পোহাতে আশ্রয় নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের কোনো একটি বিশেষ দিনেও এরকম কয়েক লাখ লোক সমবেত হয়েছিলেন কক্সবাজারে। এবারও অনুরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেসব ভ্রমণকারী আগে ভাগেই হোটেলের রুম বুকিং করে এসেছেন তারা কোনো রকমে ভালো রয়েছেন। কিন্তু যারা আগাম রুম ভাড়া নিয়ে আসেননি তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। শহরের হোটেল-মোটেল ও কটেজ জোনে কোনো রুম খালি নেই। এমনকি হোটেলের পরিত্যক্ত রুম পর্যন্ত ভাড়া হয়ে গেছে।
কটেজ জোনের নকশি কাঁথা নামের একটি কটেজের রিসিপশন রুম পর্যন্ত ভাড়া হয়ে গেছে। সেখানে পাতানো হয়েছে গণবিছানা। একটি রুমে ১৫ জন রাত কাটাতে ভাড়া নিয়েছেন ৯ হাজার টাকায়। অনুরূপ ওই এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসার দোকানগুলোতে চৌকি বসিয়েও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। লাইট হাউজ, সৈকত আবাসিক এলাকা ও কলাতলিসহ আশেপাশের এলাকার বাসা বাড়ির কক্ষও ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অনেকেই থাকার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় নতুবা গাড়িতে রাত কাটানোরও পরিকল্পনা করছেন।
তবে ভাগ্য ভালো বর্তমানের মৌসুমটি এমন যে, অতি শীত যেমনি নেই, তেমনি গরমও নেই। অনেকেই দুই দিন থাকার পরিকল্পনা করে এসেও রাতেই কক্সবাজারের সাগর পর্যটন ছেড়ে নিজ বাড়ি ছুটছেন নতুবা যাচ্ছেন বান্দরবানের পাহাড়ি পর্যটন এলাকা উপভোগ করার জন্য। তবে শনিবার নতুন করে আরো পর্যটকের ভিড় হবে সৈকতে।
এর আগে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই গাড়িতে গাড়িতে পর্যটকের দল কক্সবাজারে আসতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা কয়েক শত নৈশকোচ শুক্রবার সকালে এসে পৌঁছে কক্সবাজারে। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অসহনীয় জ্যাম লেগে যায়। এক সঙ্গে প্রচুর সংখ্যক যানবাহন আসায় কক্সবাজার শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরে থামিয়েই যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হচ্ছে। এতে করে পর্যটকদের দুর্ভোগেরও শেষ নেই।
১৯ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল থেকে দলে দলে পর্যটকরা নামেন কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে। দুপুর হতে না হতেই সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলি পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা ভরে যায় মানুষে মানুষে। এ ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী পাথুরে সৈকত থেকে শফির বিল, পাটুয়ারটেক, মনখালী এবং টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত প্রচুর সংখ্যক ভ্রমণকারির মিলন মেলায় পরিণত হয়।
ফরিদপুরের শামশুল হক দম্পতি জীবনের প্রথম বার এসেছেন কক্সবাজারে। তিনি জানান, এই প্রথমবার এসে কক্সবাজারকে দেখলাম। এক সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আর দেখিনি। সৈকতে এত বেশি মানুষ দেখে মনে হচ্ছে এটা ঢেউয়ের সমুদ্র নয় যেন মানুষের সমুদ্র।
নারায়ণগঞ্জের রিজভী আহমদ ন্যান্সী বলেন, এতদিন করোনার কারণে ঘরে বন্দি জীবন কাটিয়েছি। সাগর পাড়ে এসে মনে হচ্ছ, এখন আমরা মুক্ত পাখির মতো উড়ছি আর ঘুরছি।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার পর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে কোনো শিক্ষা ট্যুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভিড় হয়নি। কক্সবাজারে আসেনি এবার কোনো কর্পোরেট পিকনিক দল। দেশে করোনার সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ায় মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি কেটেছে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন আসার পর সাহস বেড়েছে করোনা ভীতিতে কাতর লোকজনের মধ্যে। এসব কারণে মৌসুমের শেষ দিকের তিন দিনের ছুটিতে এভাবে লোকজন বেড়াতে ছুটে চলা।
কক্সবাজারে এত বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসে ভিড় জমিয়েছেন যে, ছোট্ট শহরটির সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজে তিল ধারণেরও জায়গা নেই। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে কক্সবাজারে। কক্সবাজারে আসা-যাওয়ার যানবাহন ও বিমানেও গত সপ্তাহ থেকে শুরু করে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো টিকেটই মিলছে না।
এদিকে, কক্সবাজার সৈকত ছেড়ে ভ্রমণকারীরা পর্যটক জাহাজে চড়ে ছুটছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনস। কক্সবাজার থেকে একটি এবং টেকনাফ থেকে আরো ৭টি পর্যটক জাহাজসহ সবগুলো জাহাজ ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং স্পিড বোটে করে এক দিনে কমপক্ষে ১০ হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণে গেছেন।
এছাড়াও কক্সবাজারের ডুলাহাজারার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মহেশখালী, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি ও কুতুবদিয়াসহ আরো অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় করছেন পর্যটকরা।