নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বন্দর প্রতিনিধি ) : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্যোগে শীতলক্ষ্যার পূর্ব ও পশ্চিম তীরে নারায়ণগঞ্জ শহরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকায় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিউটি এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব জামিলের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটি এর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল, উপ পরিচালক মোবারক হোসেনসহ সহকারী পরিচালক নূর হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া একটি ভেকু (এক্সাভেটর), বিপুল সংখ্যক পুলিশ, নৌ পুলিশ, আনসার সদস্য ও উচ্ছেদকর্মী উপস্থিত ছিল। এদিকে উচ্ছেদ শেষে পন্টুনে উঠতে গিয়ে কাদামাটির কারণে হেলে পড়ে যায় ভেকুটি। পরে অপর একটি ভেকু এনে সেটিকে পন্টুনে তোলা হয়।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল সংলগ্ন খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক পারাপার হয়। শহরে সেন্ট্রাল খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় (ক) ফল ব্যবসায়ীরা বাশ দিয়ে দোকান পেতে সড়কের অর্ধেকের বেশী অংশ দখল করে রেখেছিল। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ছোট বড় দোকানতো ছিলোই। এমনকি ভাতের হোটেলও গড়ে তোলা হয়েছিল। একই অবস্থা ছিল বন্দরের অংশেও। সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের সিড়ির পাশে বাশ দিয়ে দোকান তুলে মোটা অংকের অ্যাডভান্স নিয়ে দোকান ভাড়াও দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বেশ কিছু মুরগী বিক্রির দোকানও দেখা গেছে। সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের উভয়পাশে দখলদারিত্বের কারণে যাত্রীদের ভীড়ের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। এসব দখলদারদের কারণে সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বিশেষ করে খেয়া পারাপারের জন্য আসা নারীদের সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। অবশেষে সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের উভয় তীরের অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ বিষয়ে যাত্রী আরিফ হোসেন জানান, খেয়াঘাটের ইজারাদার ও বেবীট্যাক্সি স্ট্যান্ডের লোকজনই এই দখল কাজে জড়িত ছিল। তাদের কারণেই যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। বিআইডব্লিউটি এ এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের অভিযানের কারণে যাত্রীরা সাচ্ছন্দে খেয়া পারাপার হতে পারবে।
গার্মেন্ট শ্রমিক আসমা বেগম জানান, উভয়পাশেই অসংখ্য দোকানের কারণে সাধারণ মানুষ অনেক সময়ই কেনাকাটা করতে গেলে চলাচলের কোন জায়গাই থাকতো না। ভীড়ের মধ্যে অনেক সময়ই নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটতো। নিরীহ নারী শ্রমিকরা অনেক সময় মুখ বুজে এসব সহ্য করতো। তবে বিআইডব্লিউটি এর অভিযানের কারণে নারীরা এখন সাচ্ছন্দে খেয়া পারাপার হতে পারবে।
অভিযান প্রসঙ্গে শেখ মাসুদ কামাল বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর তীর ভূমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীকে তার জায়গা ফিরিয়ে দিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। নারায়ণগঞ্জ শহরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাট এলাকায় উভয় তীরেই দখলদাররা দোকানসহ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছিল। মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ইজারাদার ও তার লোকজনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ দখল না করতে পারে। পাশাপাশি থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ যদি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার চেষ্টা করে তাদেরকে যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। নদীর তীরের সৌন্দর্য রক্ষা এবং অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের উচ্ছেদে প্রতি সপ্তাহেই আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে।