নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (বিশেষ সংবাদ দাতা) : নারায়ণগঞ্জের অন্যতম বিদ্যাপিঠ বিবি মরিয়ম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে নিজের ইচ্ছে মতো পরিচালনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন মডেল গ্রুপের মালিক মাসুদুজ্জামান। এর আগে ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন।
সেখানে গত বছর ঘটা করে স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব নেন মাসুদুজ্জামান। তবে এ দায়িত্ব নিলেও তা পালনে মাসুদুজ্জামানের অবহেলা ছিল স্পষ্ট। নিজের পরিবর্তে নিজ প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা মনির হোসেনকে স্কুলের দেখভাল করার দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পেয়ে ওই কর্মকর্তাও নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন শুরু করেন। যার বহির্প্রকাশ ঘটে মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর)।
এদিকে সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান মডেল গ্রুপের কর্মকর্তা মনির হোসেনকে তুলে আনতে গিয়েছিলেন বলে ফতুল্লা মডেল থানায় ওই প্রতিষ্ঠানের অরুপ কুমার সাহা নামে অপর এক কর্মকর্তা জিডিও করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয় স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম খানের চাকুরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তিনি পুনরায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে থাকতে আজমেরী ওসমানকে ব্যবহার করেছে। প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়েই আজমেরী ওসমান মনির হোসনকে খুঁজতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু প্রধান শিক্ষক শফিউল আলমের দাবি তিনি আজমেরী ওসমানের নাম শুনলেও তার সঙ্গে তার কোন ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তাই তার পক্ষে সাবেক সাংসদ পুত্রের তদবিরের কোন প্রশ্নই উঠে না। তাছাড়া তিনি নিজেই ম্যানেজিং কমিটিকে তার চাকুরির বয়স শেষ হওয়ার বিষয় জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাছাইয়ে সহায়তা করেছেন। অহেতুক তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
শফিউল আলম বলেন, দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার একদিন আগে তার বিরুদ্ধে স্বপদে বহাল থাকার চেষ্টার অভিযোগ উঠা দুঃখজনক। আমার বিরুদ্ধে একটি মহল যড়ষন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১২ জুন প্রকাশিত শিক্ষামন্ত্রলায়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক স্মারকে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১১.৬ ধারা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হবার পর কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান/সহ প্রধান/ শিক্ষক কর্মচারিকে কোনো অবস্থাতেই পুনঃনিয়োগ কিংবা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
আমি নিয়ম অনুযায়ী একটি মিটিংয়ে আমার ৬০ বছর পূর্ণ হাওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। আরও একটি মিটিংয়ে পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কে হবে? সেই নামও চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সহযোগীতা করেছি। পূর্ণ নিয়োগ কিংবা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের জন্য আবেদনও করিনি। কারো কাছে বলিনি, স্বপদে বহাল থাকার কথা। আজ অফিসে এসে শুনি, আমার সাথে কিছু লোকজনের নাম জড়িয়ে থানায় নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করা হয়েছে। অথচ, আমার সাথে সেই ব্যক্তিদের পরিচয়ও নেই। আমার সাথে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কে বা কারা সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত আমার জানা নেই। নিয়ম অনুযায়ী, আমি ৩০ সেপ্টেম্বর চাকুরী থেকে অব্যহতি পবো।
এদিকে যাকে তুলে আনার অভিযোগ করে থানায় জিডি করা হয়েছে সেই মনির হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, তার বস স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তার নির্দেশেই তিনি স্কুলের কিছু বিষয়ে দেখভাল করে থাকেন। তবে একটি পক্ষ ভাবছে আমিই স্কুলের সবকিছু। বসকে আমি কিছু বললে তিনি রাখবেন। একারণেই আমাকে তুলে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ঘটনার সময় আমি প্রতিষ্ঠানে ছিলাম না। আমি অন্য একটি সাইটে ছিলাম।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে আজমেরী ওসমান বলেন, আমি কাউকে তুলে আনতে যাইনি। মনির নামে যাকে তুলে আনতে যাওয়া অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা। কোন স্কুলের বিষয়ে আমার যাওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। এসব বিষয় দেখভালের জন্য প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তারা রয়েছেন। আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে তা আমি বুঝতে পারছিনা।
অন্যদিকে প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা পারভীন ওসমান আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমি এমনি অসুস্থ্য হয়ে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসাধীণ ছিলাম। এখনো আমার শরীর খুব একটা ভালো নেই। বিভিন্ন সময়ই আমার ছেলেকে নিয়ে নানা প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র চালানো হয়। এর কোন কারণ আমি বুঝতে পারিনা। আজ যদি আমার স্বামী থাকতো হয়তো এতটা কষ্ট অনুভব করতে হত না। আমার ছেলে ও আমরা যতটুকু পারি সাধারণ মানুষের সহযোগীতায় এগিয়ে আসি। এছাড়া অন্য কিছু না। এখন শুনি আমার ছেলে নাকি হত্যার হুমকী দিয়েছে।
এর আগে মাত্র কয়েক হাজার টাকারও চাঁদা দাবী করেছে! এমন আজব প্রসঙ্গ দিয়ে আজমেরী ওসমান নাম টা জড়িয়ে দেয়া হয়! আমার সকলের কাছে অনুরোধ থাকবে, আজমেরী নিভৃতে মানুষের পাশে দাড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করে, এটা কি অপরাধ? এখন ছেলেটাকে খারাপের দিকে জড়িয়ে দেয়ার একটা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোন রকম সত্যতা না যাচাই করে ভুল বোঝাবুঝি গুলিও এখন শিরোনাম হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আমরা খুব কষ্ট পাই, প্লিজ আপনারা আমাদের দিকগুলো বিবেচনা করবেন। মাসুদ সাহেব নিতান্তই ভালো মানুষ, যথেষ্ট সম্মান করে আমাদের। আমাদের শান্তিতে থাকাটাতে কেউ যেন ব্যাঘাত না ঘটায়।