শ্রমিকদের নেই সুরক্ষা বালাই, নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত আল রহমান লিংকন ) : নারায়ণগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এতে ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন অনেকেই। আইইডিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫০ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন।এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪৯ জনে পৌছালো। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত এ তথ্যটি জানিয়েছেন রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষনা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

স্থানীয়রা দাবি করছেন সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণেই এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। লকডাউন উপেক্ষা করে কারনে বা অকারণে মানুষ বের হচ্ছেই। সরকার, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা প্রচেষ্টা করেও কিছু অচেতন মানুষকে থামাতে পারছেনা। প্রথম দিকে পাড়া মহল্লায় জনসমাগমের অভিযোগ পাওয়া গেলেও দিন যত যাচ্ছে এখন সাধারণ মানুষ ও যানচলাচল মূল সড়কেও স্বাভাবিক হয়ে পড়ছে।

অনেকেই আশংকা করছেন, সল্প আকারে কারখানা খুলে দেয়ার পর নারায়ণগঞ্জে অবাধে শ্রমিকদের আসা যাওয়া এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে করে সামনে এ জেলার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। তাছাড়া কারখানার প্রবেশের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তাপমাত্রা র্নিনয় ও জীবানুনাশক স্প্রে করা হলেও। শ্রমিকদের আসা যাওয়ায় সামাজিক দুরত্ব কিংবা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোন বালাই নেই। এমতাবস্থায় হাজার হাজার শ্রমিক মিশছে তাদের সহকর্মীসহ পরিবার ও স্বজনদের সাথে। যা বর্তমান করোনা প্রার্দুভাবের পরিস্থিতিতে শনি কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক।

এ বিষয়ে কয়েকজন শ্রমিকদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, কারখানা খুলে ফেলায় তারা নিজ গ্রাম থেকে আসতে বাধ্য হয়েছে। তাছাড়া অনেকেই কর্মহীণ হয়ে পড়ায় অভাব অনটনে জীবীকা নির্বাহ করছে। অনেকেই দাবী করছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়মগুলো যতটুকু পারছি মানার চেষ্টা করছি। তবে সামাজিক দুরত্বের ব্যপারে তারা বলেন, আমি তো চেষ্টা করছি, আমাগো লগেরটি তো ( শ্রমিকরাতো ) মানে না। কয়জনকে বলবেন? ঘরে খাবার কে দিবো? টাকা আয় না করলে চলমু কেমনে? সাবান, হ্যান্ড স্যানেটাইজার কিনবে কিভাবে এমন নানা প্রশ্নেরও সম্মুখিন হতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এরআগে গত ২৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয় বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ। পরবর্তীতে সরকারি সাধারণ ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে তা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর রোববার থেকে সীমিত পরিসরে ধাপে ধাপে কারখানা খোলার সিন্ধান্ত নেয় সংগঠন দুটি। এরপর নারায়ণগঞ্জে লকডাউন উপেক্ষা করে ফতুল্লার বিসিক ও সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডেসহ বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ গার্মেন্টসে কর্মযজ্ঞ চলছে। শারীরিক দূরত্ব না মেনেই সকাল থেকেই নিজ নিজ কর্মস্থলে দলে দলে যোগ দিচ্ছেন নারী পুরুষ হাজার হাজার শ্রমিক। গত দুইদিনে ১৫৮টি রপ্তানিমূখী গার্মেন্টস কারখানা সীমিত আকারে খোলা হয়েছে বলে এমন দাবী করেন গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম। তবে ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্নস্থানেও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কারখানা চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য, আগের ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিল ৭৪ জন। এ পর্যন্ত জেলায় ঘাতক এ ভাইরাস প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৪২ জন মানুষের। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে আশার খবর হল গত ৪৮ ঘন্টায় জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার মোট ২ হাজার ৪ শত ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬০ জনের। তবে মোট কত জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়েছে তা অবস্য প্রকাশ করা হয়নি। আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ৭৪২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৪২ জন আর সুস্থ্য হয়েছেন ৩০ জন।

add-content

আরও খবর

পঠিত