নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বন্দর ইউনিয়ন বাসিকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাময়িক বরখাস্ত ইউপি চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ। বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিজের ফেসবুকে একাউন্টে স্ট্যাটাসে তিনি এ আহ্বান জানান।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, হাজারো প্রমান হাতে থাকার পরেও আজকে পর্যন্ত সত্য প্রতিষ্ঠায় মনে হয় ব্যর্থ হয়ে গেলাম। আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার মত মানুষ না, আমি অন্যায়ের সাথে আপোষ করার মানুষ না, আমি দুর্নীতির সাথে আপোষ করার মত মানুষ না, আমি মিথ্যা কথা বলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মানুষ না, আমি কারো হক নষ্ট করে অর্থ উপার্জন করার মত মানুষ না, আমি জীবনে কাউকে এক টাকা ঠকিয়েছি এমন কোন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, আস্থা আর বিশ্বাস ছাড়া পৃথিবীতে কোন প্রতিষ্ঠানই চলতে পারে না। পিতার উপর পুত্রের আর পুত্রের উপর পিতার এবং স্বামীর উপর স্ত্রীর আর স্ত্রীর উপর তার স্বামীর যদি আস্থা-বিশ্বাস না থাকতো তাহলে পৃথিবীতে থেকে সংসার নামক শব্দটি এতদিনে মুছে যেত। একজন কাজের ছেলের হাতে আমার বাচ্চাকে রেখে যাওয়ার পর সে যদি আমার সেই বাচ্চাকে গলা টিপে হত্যা করে তার দায় আমি বাবা নিতে পারিনা।
৩৩ লক্ষ টাকা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য আর সম্মানের প্রেক্ষাপটে খুবই সামান্য, আমার কথা না হয় বাদই দিলাম। বাবার কাছ থেকে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সামান্য জমি বিক্রি করে দিলেই ব্যবস্থা হয়ে যেত। এতে করে প্রকৃত অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক সচিব পার পেয়ে যেত।
পিবিআই এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে এই বিষয়ের উপর তদন্ত চলছে। আমি আমার ইউনিয়নবাসিকে অল্প কিছুদিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং দোয়া প্রার্থনা করছি যাতে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাকে সকল প্রকার অন্যায়, দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতারণার বিরুদ্ধে সত্য ও অন্যায় প্রতিষ্ঠায় সহায় হোন।
উল্লেখ্য, জন্ম নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না সে বিষয়ে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর আগে একই কারণে বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফকে বরখাস্ত করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপর এক স্মারকে আত্মসাতকৃত টাকা আদায়ের জন্য চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও সাবেক সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থ বছরের জন্ম নিবন্ধন ও ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসের ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়কৃত অর্থ আত্মসাত করেছেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ ও তার সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ। এই দুই খাতে মোট ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় অডিট আপত্তি তোলা হয়। পরে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তদন্তে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জন্ম নিবন্ধন ফি বাবদ ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৮০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে একই খাতে ১৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে।