নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ঝালকাঠি সংবাদ দাতা ) : তারুণ্যের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। জনসংখ্যার লভ্যাংশের সুফল পেতে হলে তরুণদের উপর বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য মানসম্মত ও কৈশোর বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। তরুণদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও নান্দনিকতাবোধ জাগিয়ে তোলা একান্ত জরুরী। পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য একজন মানুষের মধ্যে নান্দনিকতাবোধ জাগালে তার মধ্যে অনেক ভালো চিন্তার বিকাশ ঘটবে বলে ঝালকাঠিতে এক কর্মশালার বক্তারা উল্লেখ করেছেন। এ সময় তারা কৈশোর থেকেই প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের উপর জোর তাগিদ দেন। মঙ্গলবার (৩১ শে ডিসেম্বর) ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে তারুণ্যের কন্ঠস্বর পাল্টফর্মের এক দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নারীপক্ষ ও অধিকার এখানে, এখনই প্লাটফর্মের সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপপরিচালক ফেরদৌসি বেগম। তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্লাটফর্ম ঝালকাঠি জেলার সমন্বয়ক সোহানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝালকাঠি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জোয়াহের আলী, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মারুফা বেগম। আলোচনায় অংশ নেন তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্লাটফর্মের বরিশাল জেলা সমন্বয়ক জুবায়ের ইসলাম, সাইডোর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আহমেদ কামাল, বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থার পরিচালক কাওসার পারভীনসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপপরিচালক ফেরদৌসি বেগম বলেন, কিশোর-কিশোরীরা তাদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে সবার সাথে কথা বলতে পারে না। তাই তাদের ভরসাস্থল হতে পারে কৈশোর বান্ধব কর্ণার। দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের ফলে তাদের মধ্যে জীবনদক্ষতা বৃদ্ধি, নেতৃত্ব বিকাশ, মতপ্রকাশের ক্ষমতা ও পরমতসহিষ্ণুতা গড়ে উঠবে।
ঝালকাঠি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জোয়াহের আলী বলেন, কৈশোর বয়সের ছেলে-মেয়ে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতনতার ঘাটতি থাকে। প্রজনন স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ে কাউন্সেলিং ইত্যাদির মতো বিষয়ে তারা অবগত নন। এই অবস্থার কারণে বাংলাদেশে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হয়। আবার সন্তানন প্রসবের পর মা ও শিশু রোগাক্রান্ত হন। তথ্য না জানার কারণে জীবনে প্রথমবার ঋতুস্্র্রাবের সময় অনেক কিশোরী ভয় পায়। ঋতুস্্রাবের সময় স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনা না থাকায় নারী ও কিশোরী নানা সংক্রমণের শিকার হয়। সংক্রমণ দীর্ঘদিনের হলে প্রজনন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অনেকেই বন্ধ্যাত্বের শিকার হন। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলো সরাতেই এই প্রজন্মকে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দিতে হবে। বাল্য বিয়ের উচ্চ হারের কারণে বয়ঃসন্ধিকালেই অনেক মেয়ে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। এসময় তিনি প্রসবকালীন নানা জটিলতা এড়াতে এবং কিশোরীদের প্রসূতিমৃত্যু হ্রাসে বাল্যবিবাহ বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে আহবান জানান।
তারুণ্যের কন্ঠস্বর প্লাটফর্ম ঝালকাঠি জেলার সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, তারুণ্যে বিনিয়োগ জরুরী। মানসম্মত ও অধিকারভিত্তিক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। তারুণ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র দায়বদ্ধ। দিনব্যাপি প্রশিক্ষণে ২৫ জন তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক, আচরণগত পরিবর্তন, কৈশোরকালীন পুষ্টি, রক্তস্বল্পতা,অপুষ্টি প্রতিরোধ ও প্রতিকার, কৈশোর বয়সে বিয়ে ও গর্ভধারণের কুফল নিরসনের উপায় এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে দেনদরবার বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করেন।