নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : আমলাপাড়া আই.ই.টি বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চলছে কেরানী দিয়ে কোচিং বানিজ্য, ক্যাচমেন্ট ( নিদিষ্ট আওতাধীন এলাকার বাহিরে ) বহির্ভূত ভর্তি । শ্রেনি কক্ষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর জায়গা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে তিন শতাধিক যে কারণে সৃষ্টি হয়েছে বাড়তি চাপ। এছাড়াও অতিরিক্ত ফি আদায় সহ নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের বাহিরে শিক্ষার্থীদেরকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত বই। কি স্বার্থে নিশ্চুপ ভূমিকা প্রধান শিক্ষিকার, উঠেছে এ নিয়েও প্রশ্ন।
তবে এসকল অভিযোগ অস্বিকার করছেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা ফাতেমা খাতুন। আর কোচিং এর বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকার দাবি, সরকারী যে বেতন হয়, তা সল্প। তাই শিক্ষকরা বাধ্য হয়েই কোচিং করে। স্কুল টাইমের বাহিরে এসব দেখা তার দায়িত্ব নয়।
নারায়ণগঞ্জ শহরের কালিবাজার বড় মসজিদ (মারকাজ) সংলগ্ন অবস্থিত আমলাপাড়া আই.ই.টি বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয় প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবকই সল্প আয়ের মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারী বোর্ড নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ধার্য্য করা থাকলেও, কোমলবতি এসব শিক্ষার্থীদেরকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত কয়েকটি বই। যেখানে শিশুদেরকে খেলার ছলে লেখাপড়া করানোর র্নিদেশনা রয়েছে, সেখানে তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ৫টি বই। ২য় শ্রেনিতেও ৫টি, ৩য় ও ৪ রর্থ শ্রেণিতে বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ২য় পত্র, সাধারণ জ্ঞান, কম্পিউটার শিক্ষা ও ছবি আঁকা এসব বই রয়েছে। এতে করে তাদের উপরে যেমনি বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি অভিভাবকদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। যা মধ্যবিত্তদের জন্য সহজলভ্য হলেও সাংসারিক ব্যয়ের পাশাপাশি নিম্মবিত্তদের জন্য ভিষন কষ্টকর।
এব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানায়, সরকারী স্কুলে সন্তানদের লেখাপড়া করতে দেয়ার একটি মুল কারণ হচ্ছে ভালো শিক্ষা। দ্বিতীয়ত সরকারী সুযোগ সুবিধা। সকলের তো আর সামর্থ থাকেনা সন্তানদের স্কুলের বেতন বা খরচের জন্যই হাজার হাজার টাকা ব্যয় করা। কিন্তু স্কুল থেকে সন্তানদের উপর যেভাবে বই চাপিয়ে দিয়েছে। এরপর আবার স্কুল শেষে কোচিং। এতে আমরাও ক্ষুব্দ, কিন্তু আমরা অপারগ। কিছু বললে আমার সন্তানকে ফেল করিয়ে দিবে। পরে টিসি দিয়ে বের করে দিবে। আর বিভিন্ন সময় স্কুল ফান্ড থাকা সত্ত্বেও এই ফি ওই ফি সহ দিতে হয় ভ্রমন চাঁদা। কিন্তু এ সমস্যাগুলোর সমাধান করার যেন কেউ নেই।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দিবা শাখার ছুটি হলে কয়েকজন শিক্ষর্থীর পিছু নিয়ে আমলাপাড়া প্রধান বাড়ি গেলে কোচিং এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। সেখানে শিক্ষার্থীদের পাশাপশি উপস্থিতও ছিল কয়েকজন শিক্ষক সহ কেরানি বদিউজ্জামান।
এর আগে কোচিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এক শিক্ষার্থী জানায়, সে উল্লেখিত স্কুলটির তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। প্রতিদিনই স্কুল শেষে আমলাপাড়া বড় বাড়ি এলাকাস্থ স্থানটিতে সে কোচিং করে। ওইদিন ছিল স্কুল থেকে চাপিয়ে দেয়া অতিরিক্ত দুইটি বইয়ের উপর তার ১ ঘন্টার পরীক্ষা। আরো জানায়, এই কোচিংটি পরিচালনায় রয়েছেন আই.ই.টি স্কুলের কেরানি ও প্যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত বদিউজ্জামান ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষক বলরাম দাস সহ আরো কয়েকজন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ প্রক্রিয়া ক্যাচমেন্ট এলাকার বর্হিভুত শিক্ষার্থীদের ভর্তি দেয়া অনিয়মের সামিল । কিন্তু একজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ( ডিপিইও ) ২০ জন এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ইউইও) ১০ জন শিক্ষার্থীকে অনুমতি সাপেক্ষে স্কুল কতৃর্পক্ষের মাধ্যমে ভর্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখেন। অথচ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে বিভিন্ন কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ক্যাচমেন্ট (নিদিষ্ট আওতাধীন এলাকার বাহিরে ) বর্হিভুত ভর্তি নেয়া প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) অহিন্দ্র কুমার মন্ডল জানান, সরকারি যেকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এই (ক্যাচমেন্ট) সুবিধা নিতে পারেন। তাদের জন্য এই কোটা নির্ধারিত আছে। যেহেতু বদলী জনিত কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হয়। কোচিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি স্কুলের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিনা অর্থে কোচিং করায় সেক্ষেত্রে সমস্যা নেই। যদি অর্থের বিনিময়ে স্কুল শিক্ষকরা তাদের কোচিং করায় তা ঠিক নয়। এসব বিষয়ে আমার জানা নেই সত্যি হলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো। আসলে উপজেলা কর্মকর্তা যিনি রয়েছেন এসব তিনিই দেখেন। এ বিষয়ে তিনি ভাল বলতে পারবেন।
পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে আরো জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ইউইও) মো. মনিরুল হকের মুঠফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ক্রেচম্যান আওতাধীন যে ম্যাপ রয়েছে তার বাহিরে কোন ক্রমেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো যাবে না। ১০জন বা ২০ জনের একটা কোটা রয়েছে এর বাহিরে হলে সেটি অনিয়ম। কোচিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু স্কুল ছুটির পর কোচিং এর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করেননি সরকার।তাই হয়তো এ্ই সুযোগকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু জানতে হবে তারা স্কুলেরই শিক্ষক কিনা।
এ কথার প্রেক্ষিতে জানানো হয় যে, স্কুলের রুটিনে দেখা গেছে কোচিং পড়ানো সে সকল শিক্ষকদের নামই গণিত, ইংরেজিসহ গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো দেয়া হয়েছে। যার জন্য শিক্ষার্থীরাও এসব বিষয়ে ভাল ফলাফল পাওয়ার প্রত্যাশায় বাধ্য হয়েই স্কুল শেষে ড্রেস পড়া অবস্থাতেই কোচিংয়ে যাচ্ছে। তা শিক্ষার্থীদের উপর এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ব্যবহার করে স্কুলের সময়ই কোচিং করানো হয় সেক্ষেত্রে আমাদের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বাকিদের ক্ষেত্রে নেই।
এছাড়াও অতিরিক্ত ফি ও বই চাপিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানান, বোর্ডের বই ব্যতিত অতিরিক্ত বই শিক্ষার্থীদের দেয়ার নিয়ম নেই। আর ফি এর জন্য যদি বিদ্যালয়ের কল্যাণ সমিতি থাকে তাহলে নির্দিষ্ট ফি নিতে পারবে। তবে সেটির বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকৃত কল্যাণ সমিতি হতে হবে। অন্যথায় নয়।