নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ আরও গতিশীল করতে মেট্রোরেলের দুইটি লাইনের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর আবেদনের পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের এমআরটি লাইন-২ ও ৪ এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে পিজিভিলিটি স্ট্যাটি ও বিস্তৃত পরিবহন পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিটিসিএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সংযোগ স্থাপনের সেলিনা হায়াৎ আইভী ১ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন। এতে বলা হয়, ডিটিসিএ কর্তৃক সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীর জন্য সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) ২০১৬-২০৩৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ নগর ডিটিসিএ এর আওতাভুক্ত। আরএসটিপিতে পাঁচটি এমআরটি লাইন ও ২১টি মাল্টিমডেল টার্মিনাল হাব নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। যার মধ্যে এমআরটি লাইন-২ চট্টগ্রাম রোডে শেষ হবে এবং এমআরটি লাইন ৪ বিদ্যমান রেললাইন নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ নগরীতে একটি মাল্টিমডেল টার্মিনাল হাব নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। লাইন দুইটি আরএসটিপিতে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে প্রস্তাবিত মাল্টিমডেল টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত করে ঢাকা নগরীর সঙ্গে সমন্বিত একটি পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ করা যেতে পারে। ফলে নারায়ণগঞ্জ আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নত ও পরিবেশবান্ধব পরিবহন সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
মেয়র আইভীর আবেদনের বিষয়ে ২৪ নভেম্বর ডিটিসিএ এর বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। পরে এমআরটি লাইন দুটি নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করে সমন্বিত পরিবহন অবকাঠামোর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে এমআরটি লাইন-২ এর রুট হচ্ছে- গাবতলী-বসিলা-মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড-সাত মসজিদ রোড-জিগাতলা-ধানমন্ডি-২ নম্বর রোড়- সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউ মার্কেট-নীলক্ষেত-আজিমপুর-পলাশী-শহীদ মিনার- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স- গোলাপ শাহ মাজার-বঙ্গভবনের উত্তর পার্শ্বস্থ সড়ক মতিঝিল-আরামবাগ-কমলাপুর পর্যন্ত। কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এজন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় এটি মুগদা-মান্ডা-ডেমরা-চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আরএসটিপি হালনাগাদ করার সময় এটি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
অপরদিকে, আরএসটিপি-২০১৫ অনুযায়ী এমআরটি লাইন-৪ এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে ট্র্যাকের নিচ বা পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল বা উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। উক্ত লাইন নারায়ণগঞ্জ শহরকে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
ডিটিসিএ এর সভার প্রস্তাবে বলা হয়েছে- ২০১৫ সালে আরএসটিপিতে ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাবের সুপারিশে নারায়ণগঞ্জে একটি হাবের প্রস্তাবনা রয়েছে। সংশোধিত এসটিপি প্রণয়ন করার সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের ট্রাফিক সার্ভে ডাটাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়নি। এর ফলে ট্রাফিক চাহিদা নিরূপণ করা যাচ্ছে না। ট্রাফিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকল্প ও উদ্যোগের জন্য আলাদাভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্য সম্পাদন সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জ শহরের মধ্যে দিয়ে মিডেল রিং রোড, হাই স্পিড রোড, লাইট রোড ইত্যাদি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনাও রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে। জনসংখ্যা ও আয়তনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নগরীর জন্য একটি বিস্তৃত পরিবহন পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হলে এতে উল্লিখিত সব বিষয় সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে মেয়র আইভী বলেন, সভায় এ নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা কাজটিকে স্বাগত জানাচ্ছি। যাতে অতি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হয়।
ডিটিসিএ এর ওই সভা শেষে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে উন্নয়নে সুষ্ঠু ও সমন্বিত পরিকল্পনার জন্য একটি বিস্তৃত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিটিসিএ এটি প্রস্তুত করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, উদ্যোগটি ভালো। নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক কমিউটার ট্রেন ঢাকায় আসতে চায়। কিন্তু এখন যেগুলো আসছে সেগুলো দ্রুত নয়। অনেক ক্রসিং পার হয়ে আসতে হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে যদি মেট্রো রেলের মাধ্যমে আসা যায় তাহলে সময় বাঁচবে।
তিনি আরও বলেন, অফিসে সময়মতো পৌঁছানো নির্ভর করে রাস্তার ওপর। অনেকে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রেনে করে কমলাপুরে এসে সেখান থেকে বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছুতে হয়। মেট্রো চালু হলে মানুষ গন্তব্যে সহজ ও দ্রুত সময়ে পৌঁছে যেতে পারবে। এতে ঢাকার মানুষ অফিস শেষে পাশ্ববর্তী শহরে চলে যেতে পারবেন। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি গাজীপুরকেও এর আওতায় আনা উচিত। এতে ঢাকা শহরের ওপর মানুষের চাপ কমবে।