নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, রাজনীতি আমি ব্যবসা বা ধান্ধা হিসেবে নেই নাই, আমি বহুরূপী রাজনীতি করি না। দিনের বেলায় একটা আর রাতের বেলায় আরেকটা না। যা বলব পরিষ্কারভাবে বলব। আমি যখন বিদায় নিবো, মানুষ বলবে তুমি যেও না, এটাই আমার বড় পাওয়া। আগামী বার নির্বাচন আমি নাও করতে পারি। আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমার লক্ষ্য, আমি মরে গেলে মানুষ যেন কাঁদে। ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি আরো বলেন, আমি নেতা হয়ে সঠিক সময় সঠিক কথাটা বলতে পারি না। আমার খুব কষ্ট লাগছে, আমার ভিতরে এখন যে কথাটা আছে, আমি তোমাদের সামনে সেই কথাটা বলতে পারবো না। আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমার যে সাহস ছিল, এখন আর সেই সাহস নেই। আমি যে তোমাদের একটা সাহসের পথ দেখাবো সেই সাহসটুকুও আমার নেই।
এমপি শামীম ওসমান বলেন, জ্ঞানিরা বলে গেছেন, এমন একটা সময় আসবে, জুতো রাখা হবে তাকে, আর বই খাতা ফুটপাতে। আজ সেটাই দেখা যায়। এটা কিন্তু ভালো না। আমি তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ রাখবো। আমার কাছে কষ্ট লাগে, লজ্জা লাগে, দুঃখ লাগে, বেদনা লাগে। যখন দেখি বাংলাদেশে তুমি বেস্ট স্টুডেন্ট না। এটাও সত্য, আমি তোমার মতো ভালো ছাত্র ছিলাম না। তাহলে বাংলাদেশে বেষ্ট স্টুডেন্ট পাবো কিভাবে? যারা ভালো শিক্ষার্থী তারা বুয়েটে, মেডিকেল কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরে। সেই বুয়েটেই কয়েক দিন আগে একটি ঘটনা ঘটেছে। আমি চিন্তিত হয়েছি। ভেবেছি, এর আগে কি এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি? ছাত্র মারা যায় নি? আমাদের সাথে কত ছাত্রকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যে গুলোর একটিরও বিচার আমরা পাই না। এই তোলারাম কলেজের ভিতরে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা আবু আউলায়কে। সেটারও বিচার পাইনি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বুয়েটে একটি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। মারলোটা কে? সবাই বলে ছাত্রলীগ, আমিও বলি ছাত্রলীগ। আমার কষ্ট হচ্ছে দুই জায়গায় একটা হচ্ছে যে ছেলেটাকে মেরেছে তার জন্য আরেকট হচ্ছে যারা এই ছেলেটাকে মেরেছে , আমি বলবনা কারা এই ছেলেটাকে মেরেছে কারন যতক্ষণ প্রর্যন্ত আদালত বলবেনা কে মেরেছে । যদিও মিডিয়া কনফার্ম করে দেয় কোথায় কি ঘটেছে । পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এই মিডিয়া ট্রায়াল হয় না, আমাদের দেশে হচ্ছে । কিছু কিছু মিডিয়া আছে তারা এইটা করছে , তারা একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্র চায় । আমার কষ্ট হয় ঐ ছাত্রদের নিয়ে যারা মারল তারাও তো বুয়েটের স্টুডেন্ট । অনেকেই ছাত্র পড়িয়ে লোখাপড়া করত । তারমানে এমন না যে তারা বাপ মার বখে যাওয়া ছেলে । তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি তৈরী করছি, আমরা চাচ্ছি কি? রেজাল্ট না মানুষ ? আমরা কি জিপিএ ৫ চাই নাকি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার সোনার মানুষ চাই ? আমার প্রশ্নটা এখানেই ।
তিনি আরো বলেন, আমার কাছে তিনটা কলেজ খুব প্রিয় । এক তোলারাম কলেজ, দুই মহিলা কলেজ এবং নারায়ণগঞ্জ কলেজ । মহিলা কলেজ প্রিয় এই কারণে এই কলেজের মেয়েরাও কিন্তু আমাদের জন্য কম সংগ্রাম করেনি । ৮১সালে আমাদের উপর যখন গুলি হচ্ছিল, আমাকে যখন মারার জন্য ৯০০ রাউন্ড গুলি এখানে ছাড়া হয়েছে, আমাদের ছাত্র নেতাদের বাঁচানোর জন্য আমাদের ছেলেরা যখন দেয়াল টপকে ঐ পাড়ে গেছে আপনারা বিশ্বাস করবেন মহিলা কলেজের মেয়েরা সেই দিন আমাদের অনেককেই যেমন নারায়ণগঞ্জ বারের পিপি খোকনকে যখন ধরে ফেলবে তখন এর উপর মেয়েরা শুয়েছিল তাকে দেখতে দেয়নি ।
এ সময় সরকারি তোলারাম কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর বেলা রানী সিংহের সভাপতিত্বে ও সরকারি তোলারাম কলেজ ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়্যারম্যান ও সাংসদ পত্নি সালমা ওসমান লিপি ।
এছাড়া ও আরোও উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া, তোলারাম কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জীবন কৃষ্ণ মোদক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর নজমুল হুদা, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান লিটন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রফেসর শিরীন বেগম, মহানগরের সভানেত্রী ইসরাত জাহান স্মৃতি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান , সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধান প্রমুখ।