নদী দখলের উৎসবে মেতেছে মেঘনা গ্রুপ !

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রুবেল খান ) : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও যার বুক চিরে বয়ে গেছে দেশের প্রধান নদীর একটি মেঘনা নদী। কিন্তু বর্তমানে সরেজমিনে দেখলে হতাশায় কাতর হয়ে বলতে হবে এ যেন রুপকথার গল্প। দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে সোনারগাঁও নামের সার্থকতা। সোনারগাঁয়ের এ কলংকের রুপকার হচ্ছে মেঘনা গ্রুপ। মেঘনা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মেঘনা গ্রুপের থাবায় যেন হারাতে বসেছে সেই বহমান স্রোতধারার মেঘনা নদী।

আলাদিনের চেরাগে ভর করে মেঘনা নদী দখল ও ভরাটের উৎসবে যেনো মাতোয়ারা মেঘনা গ্রুপ। একের পর এক কারখানা স্থাপনের নামে চলছে নদী দখল ও ভরাট। চোখের সামনে যা দেখছে তাই গিলে হজম করে ফেলছে মেঘনা গ্রুপ। দখলের এই প্রতিযোগিতায় বাদ যাচ্ছে না কৃষকের ফসলি জমি, ভিটে মাটি, সরকারি খাল, সওজের জমি। এলাকার কিছু বালু খেকোদের সহযোগিতায় জোড়পূর্বক চলছে দখলের কাজ। শুধু জমি দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রতিষ্ঠানটি শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্যে নদীটিকে মেরে ফেলার খেলায়ও মেতেছে। এতে অস্তি¡ত্ব সংকটে মেঘনা নদীর সোনারগাঁয়ের অংশ।

অনুসন্ধানী তথ্য বলে, উপজেলার মেঘনা ঘাট, প্রতাপের চর, আষাঢ়িয়ার চর, ঝাউচর, গঙ্গা নগর, নয়াগাঁও, দুধঘাটা,ছয়হিস্যা, জৈনপুর, আনন্দবাজার, বৈদ্যেরবাজারসহ নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পরেছে মেঘনা গ্রুপের দখল থাবা। মেঘনা নদীর কোথাও ৫০০ ফুট আবার কোথাও ৭০০ ফুট পর্যন্ত নদী দখল করে বালু ভরাট করে পাইলিংয়ের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নদী দখলের কাজ চলছে খুব জোরেশোরে। মেঘনা গ্রুপের এই থাবায় এরই মধ্যে হারিয়েছে উপজেলার প্রায় ২ কিলোমিটার নদী। এতে নদীর গতিপথ অনেকটা বদলে গেছে। বর্তমানে দেখে বুঝার কোনো উপায় নেই এই সেই বিস্তৃত মেঘনা নদী।

স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বালু ভরাটে চলছে নদী ভরাট। এমনকি টাকার জোড়ে জাল দলিলের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসকে কাঠের চশমা পরিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কৃষকের জমি, মেঘনা সহ আশেপাশে থাকা শাখা নদী। মেঘনা গ্রুপ বেশির ভাগ জমিই অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। প্রশাসনের নাকের ডগায় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিনে দুপুরেই চলে নদী দখল।

স্থানীয়রা আরো জানায়, বিভিন্ন সময় নদী দখল ও জমি ভরাটের বিরুদ্ধে একাধিবার বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করে ও প্রশাসনের থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিভিন্নভাবে প্রশাসনিক ফোর্স দিয়ে হয়রানি করা হয়।

লক্ষ করলে দেখা যায়, প্রাচীন বাংলার এই রাজধানীর প্রায় চারদিকেই মেঘনা গ্রপের দখল থাবা। যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মেঘনা নদীর সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন শাখা নদীগুলো। নদী সহ অবৈধভাবে দখল করছে পরিবেশের জন্য অপরিহার্য খাল-বিল, ফসলি জমি। তাদের অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য নদী ও খালের পানিতে মিশে নষ্ট হচ্ছে পানির ভারসাম্যতা। ফলস্বরূপ বিলুপ্ত প্রায় মৎস্য প্রাণী।

তাই স্থানীয়দের একটাই দাবী আলাদিনের চেরাগ পাওয়া মেঘনা গ্রুপের দখল বানিজ্য বন্ধ করে মেঘনা নদীর অতীত রুপরেখা ফিরিয়ে দিয়ে সোনারগাঁওকে কলংকমুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রশাসন যেনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেন।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল হোসাইন বলেন, কর্মস্থলে আমি নতুন যোগদান করেছি। তদন্তকরে নদী দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত