নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : মানুষ মানুষের জন্য- বিখ্যাত এই গানটিকে অনুধাবণ করে এবারের ঈদ আনন্দ এতিম শিশুকে উৎর্সগ করে দিলেন একজন কৃষকের ছেলে নারায়ণগঞ্জ জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা মো. বিল্লাল হোসেন। সংকটে, বিপদে মানুষই ছুটে এসে সাহায্য করবে একেঅপরকে, এই প্রত্যাশা স্বাভাবিক। তা না হলে অনেকটাই অসম্পূর্ন থেকে যাবে মানব-জন্ম। আর এমন দৃষ্টান্ত রেখে এতিম সন্তানের জন্য দান করে দিলেন এবারের ঈদের জন্য পুরো পরিবারের কেনাকাটা সহ ব্যক্তিগত উপার্জিত দুইলক্ষ টাকা। গতকাল দুপুরে বিল্লাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ রেজিষ্টার অফিসের নীচে এতিম শিশুর স্বজনের কাছে এই নগদ টাকা তুলে দেন।
এসময় তিনি জানান, আমি একজন কৃষকের সন্তান কষ্ট করে বড় হয়েছি। আমি চাইলে এই টাকা দিয়ে বিদেশ ভ্রমন করতে পারতাম। অনেক কিছুই করা যেত তবে মানুষের জন্য কিছু করার মধ্যে আনন্দ ও তৃপ্তি আছে। যা সবকিছুর চেয়ে আলাদা। ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গানটি আমার মত অনেকেরই এখনো মন ছুয়ে যায়। তবে কতটুকুই বা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আমি চাইনা, এ কাজের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা নিতে। তবে এটা চাই একটি মেসেজ পৌছে দিতে তা হলো, আমরা অল্প করে শত মানুষকে না দিয়ে চাইলে পারি একজন মানুষের পাশে দাড়িয়ে তার মুখে হাসি ফুটাতে।
বিল্লাল হোসেন এতিম শিশু সম্পর্কে জানান, আমি বিভিন্ন সময়ই রেজিষ্টার অফিসে আসতাম সে সুবাধে এখানকার কর্মচারী মো. শাহিনুর ইসলামের সাথে আমার পরিচয় হয়। সে খুবই বিনয়ী ছিল। তার ব্যবহার আমার মন ছুয়ে যেত। বেশ কয়েকদিন পর এখানে এসে জানতে পারি শাহিনুর সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। এতে আমি খুব ব্যাথিত হই। যার একটি ফুটফুটে ৫ মাসের শিশু সন্তান রয়েছে। যাকে ওইদিন আমি রেজিষ্টার অফিসে এসে দেখতে পাই। এরপর থেকে পিতা হারা সন্তানের জন্য আমি খুব কষ্ট বোধ করি। কথা হয় শাহিনুরের স্ত্রী ও শাশুড়ির সাথেও। আজ আমার বাবা আছে তাকে নিয়ে ঈদ করবো। কিন্তু এই সন্তানটি তো বুঝেও না তার বাবা নেই। তাই আমি তার ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমার পরিবারের সাথে কথা বলে তার জন্য এই টাকাটা দেই।
এ প্রসঙ্গে নিহত শাহিনুর ইসলামের স্ত্রী জানায়, যে যায় তাকে তো আর পাওয়া যাবেনা। আমি শুধু আমার ছেলেকে নিয়ে বাচঁতে চাই। তবে আমারও বর্তমানে উপার্জনের কোন ব্যবস্থা নেই। ছেলের ভবিষ্যতের কথা মনে হলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা। আমার স্বামীতো নেই, সন্তানই শেষ সম্বল। উনার এই টাকাগুলো দেয়াতে হয়তো কিছুসময় কেটে যাবে। আমি উনার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমার অনুরোধ থাকবে কেউ যেন আমাকে কোন একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। তাহলে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারব।
নিহত শাহিনুরের শাশুড়ির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জামাই শাহিনুর অনেক ভালো ছিল। আর তার প্রমান আমি বাস্তবে দেখলাম। আর তার প্রতিদান আমার নাতি পেল। তবে আমি বিল্লাল সাহেবের জন্য দোয়া করি। যার নিজের জুতোটাও ছিড়ে রয়েছে। কিন্তু সে এতিম শিশুটার জন্য এত বড় উপকার করেছে।
উল্লেখ্য, নিহত শাহিনুর ইসলাম নারায়ণগঞ্জ রেজিষ্টার অফিসে মাত্র কয়েকমাস ধরেই নিম্ন সহকারী হিসেবে চাকুরী করছেন। সে ঝিনাইদহ এলাকার বাসিন্দা। নারায়ণগঞ্জের জামতলা বোনের বাসায় থেকে চাকুরী করত। মূলত তার স্ত্রীকে নিয়ে শাহিন সেখানেই বসবাস করত। ছুটিতে বাড়ি গেলে গত ২১ এপ্রিল শবেবরাতে একটি সড়ক দূর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।