নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রুপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : নাগরিক জীবনে ক্রমাগত বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এসব চাহিদা মেঠাতে রূপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে সরকারি নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। র্কতৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবসা করে গেলেও নীরব রয়েছে প্রশাসন। অদৃশ্য এ নীরবতাকে পূঁজি করে ফুটপাতে এমনকি আবাসিক ও পল্লী এলাকাতেও বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা। যেসব স্থানে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন সেসব স্থানে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। প্রশাসন বলছে জনবল সঙ্কটের কারণে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। এসব দোকান মালিকেরা কোনো বিধি-নিষেধ মানছে না। বিস্কারক পরিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় উপজেলার বাণিজ্যিক এলাকার মতোই আবাসিক এলাকায় অকাধে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। আবার এসব ব্যবসায়ীদের কাছে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রপাতি। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়ে যায়। উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোলাকান্দাইল এলাকার প্রখর রোদে ফুটপাতে মজুদ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব এলাকার সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেই বিস্কারক পরিদফতরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র লাগে তা আমার জানা নাই, ঠিক আছে লাগলে আমরাও নিবো। চায়ের দোকানেও এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মিলছে। মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেও বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস। শুধু তাই নয় পান, ঔষুধ, লন্ড্রি, সিমেন্ট, কসমেটিক এমনকি লাইব্রেরিসহ ফুটপাতের ছোটখাটো দোকাইের অবাধে মিলছে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার। যেকোনো দোকানে ১০টির উর্ধেব গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ১০টির উর্ধেব গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও কোনো অনুমোদন নেননি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী কেউ। এই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রত্যেক জায়গায় চায়ের দোকানগুলোতে বসলেই দেখা যায় গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার। উক্ত চায়ের দোকানগুলোতে বেশিরভাগ সিলিন্ডার গুলো রাখা হয়েছে একেবারেই চুলার পাশে, যেকোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকা- ঘটার আশংকা আছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি দোকানে লক্ষ করা গেছে গ্যাসের লিলিন্ডারের পাশে বসেই ধুমপান করার দৃশ্য। সিলিন্ডারের পাশেই ম্যাচ ঠুকিয়ে জালানো হয় সিগেরেট, ম্যাচের কাঠিটা আগুনসহ ফেলা হয় সিলিন্ডারের পাশেই।
এক চা দোকানদার গ্যাস ব্যবহারকারী বলেন, গ্যাসের যথাযথ ব্যবহার আমরা করতে পারি না। বাজারে আমরা যেটা পাই সেটাই নিয়ে আসি। এটির ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুই বুঝি না। এ জন্য সরকারকে সচেতনমূলক কর্মসূচি নেওয়া উচিত।
সরকারি নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, জ্বালানি কাজে ব্যবহার্য সিলিন্ডার গ্যাস কোনো আবাসিক এলাকা বা মার্কেটে বিক্রি করা নিষিদ্ধ। গ্যাস সিলিন্ডার রোদে না রাখা, নিরাপদ দূরত্বে সিলিন্ডার মজুদ করা, উপর থেকে সিলিন্ডার নিচে না ফেলার নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়াও এই সিলিন্ডার বিক্রি করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হয়। এছাড়া এলপিজি সিলিন্ডারগুলো সংরক্ষণের জায়গায় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। বৈদ্যুতিক সুইচ ও অন্যান্য উপকরণও থাকবে গোডাউনের বাইরের অংশে। স্থানটিও হতে হবে আগুনের ব্যবহার আছে এমন জায়গা থেকে দূরে। এমন শর্তে অনুমোদনের ছড়াছড়ি থাকলেও তদারকি না থাকায় এসব নির্দেশনা আর নিষেধাজ্ঞা মানছেন না উপজেলার গোলাকান্দাইলের ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে ভূলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল হক বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। শিগগিরই আমরা দায়িত্বশীলদের নিয়ে অভিযানে নামব এবং অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।