নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ সংবাদ দাতা ) : রূপগঞ্জ পশ্চিম সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে দালাল আর ঘুষ ছাড়া মেলেনা জমির দলিল। এখানে আসা লোকজনদের পদে-পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। সাবরেজিষ্ট্রার শহিদুল ইসলাম হচ্ছেন দুর্ণীতির বরপুত্র। ঘুষ আর দালাল ছাড়া এখানে কিছুই মেলেনা। দুর্ণীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এ অফিসটি। জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জমি, প্লট রেজিষ্ট্রি করে দিয়ে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে সাবরেজিষ্ট্রার। ভূমি কর্মকর্তাদের নাম ও সিল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ভূয়া কাগজ তৈরি করে সাব রেজিষ্ট্রার জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে দলিল করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ অফিসে মাসে অন্তত ৬০ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
তার জেলা শহর রংপুরের কুড়িগ্রামে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর মাষ্টারপাড়া (উত্তর) এলাকার বাহারউদ্দিনের ছেলে শহিদুল ইসলাম। তার এলাকায় রয়েছে সুরম্য অট্রালিকা। এলাকায় রয়েছে কয়েক খাদা (বিঘা) জমি। থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। স্ত্রী-স্বজনদের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কোটি-কোটি টাকা।
সাবরেজিষ্ট্রি অফিস, দলিল লেখক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিশন দলিল করতে সরকারি ফি বাবদ ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা থাকলে সাবরেজিষ্ট্রার হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। রূপগঞ্জ উপজেলার আওতাভুক্ত এলাকার কমিশনে (বাড়িতে বসে) দলিল করতে নেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর উপজেলার বাহিরের এলাকার জন্য নেন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবকবলা দলিল করতে শতকরা ১১ টাকা হিসাবে ব্যাংকে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে দলিল প্রতি লাখে ৩০০ টাকা দিতে হয় সাবরেজিষ্ট্রারকে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলে কোন ফি না নেয়ার নিয়ম থাকলেও এক্ষেত্রে ভোগান্তিতে পড়তে হয় দলিল করতে আসা লোকজনদের। এ দলিলে ঘুষ দিতে হয় ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা। হেবা ঘোষণা দলিল ফি-বিহীন করার বিধান থাকলেও নেওয়া হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বন্টননামা দলিলে নেওয়া হয় পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কোন দলিলের মূল পর্চা না থাকলে ফটোকপি পর্চায় নেওয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা। এছাড়া দলিলের নকল তুলতে দলিলপ্রতি নেওয়া হয় দুই হাজার টাকা।
সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের জনৈক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পশ্চিম সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ টি দলিল হয়। সে হিসাবে মাসে দলিল হয় ১৩০০ থেকে ১৫০০। এসব খাত থেকে প্রতিমাসে শুধু পশ্চিম সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আয় হয় ৬০ লাখ টাকা। সাবরেজিষ্ট্রার শহিদুল ইসলামের ঘনিষ্টজন হিসাবে পরিচিত এক কর্মচারী তার নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, রূপগঞ্জে যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতির সঙ্গে জড়িত। মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে খাড়া (জাল ) দলিলেও তিনি রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া সরকারী (ক) তালিকাভুক্ত সম্পত্তিও মোটা অংকের বিনিময়ে রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন। বাদ যায়নি কুলিয়াদি মৌজার বনের জমিও।
সাবরেজিষ্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জাঙ্গীর মৌজার আর এস ১০২২ দাগের সরকারের (ক)তফসিলভুক্ত ৩২ শতক জমি ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করে দিয়েছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: আসাদুজ্জামানের নির্দেশকে অমান্য করেই এ জমি রেজিষ্ট্রি দেওয়া হয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কথা হয় উপজেলার কেয়ারিয়া এলাকার ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, তার ১৮০ শতক জমি টাকার বিনিময়ে ভূয়া দলিলে একজনকে রেজিষ্ট্রি করে দেয়। এনিয়ে তার দরবারে বেশ কয়েকবার ধরণাও দেওয়া হয়। কোন কাজে না আসায় পরে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। নগরপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেন। তিনি তার বোনের নিকট থেকে হেবানামা করে দুই শতক জায়গা রেজিষ্ট্রি করাবেন। সাবরেজিষ্ট্রি শহিদুল ইসলাম দিতে নারাজ। পরে তিনি ১০ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে রেজিষ্ট্রি করান। গুতিয়াবো মৌজার এসএ ৮২৫ দাগের খাস খতিয়ান (ক) তফসিলভুক্ত জমি লাখ টাকার বিনিময়ে গত বছরের ৭ জুন ভূয়া দলিলে রেজিষ্ট্রি করে দেন সাবরেজিষ্ট্রার। এ বিষয়ে জমির ভোগ দখলে থাকা মিম্বর আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দায়ের করেন।
৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে আসা কয়েকজন জমির মালিকের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, দুপুর ২ টা বাজলেই সাবরেজিষ্ট্রার ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপন করেন। বিকাল ৩ টার পর থেকে বিলম্ব ফি নেওয়া হয়। জমির পরিমাণ, ক্রেতাদের ধরণ অনুযায়ী আট হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। বিলম্ব ফির মাধ্যমে অধিকাংশ সময়ই রেজিষ্ট্রি চলে রাত ৯ টা পর্যন্ত। পূর্বাচল উপশহরের প্লট রেজিষ্ট্রিতে ৫ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত আদায় করা হয়।
সাবরেজিষ্ট্রারের শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আমার এখানে কোন অনিয়ম-দুর্ণীতি হয় না। (ক) তফসিল ভুক্ত জমি রেজিষ্ট্রির ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন, এটা আদালতের ব্যাপার। আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা যদি নিতে হয় সেটা আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আদালত দেখবে।