নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রির্পোটার ) : নারায়ণগঞ্জে ১ দিনে পৃথক স্থানে ৫টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটি শনাক্ত হলেও এখনও পর্যন্ত অপর চারটি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশও নিশ্চিত জানাতে পারেনি হত্যার মূল কারণ সম্পর্কে। কে বা কারা এদের হত্যা করেছে, সেসব এখনও ধোঁয়াশা। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতংক।
২১ অক্টোবর রবিবার আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচরুখী মহাসড়ক থেকে ৪টি লাশ উদ্ধার হয়। সকালে উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের পাচঁরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিক ভাবে নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুইটি পিস্তল ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করেছে পুলিশ।
পরে গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে উদ্ধারকৃত চার লাশের মধ্যে একটি লাশ শনাক্ত করেছেন রেশমা আক্তার নামে এক নারী। তার দাবি চারজনের একজন তার স্বামী লূৎফর মোল্লা। সে একজন বাস চালক। শুক্রবার বিকালে ৫টার দিকে তার স্বামী বাসা থেকে বের হয়। তারা ঢাকার রামপুরাই বসবাস করেন। লুৎফরের সাথে তার শেষ কথা হয় এদিন রাত একটার দিকে। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিলো। এ ঘটনায় রামপুরা থানা রেশমা আক্তার একটি জিডিও করেন।
এদিকে চার লাশ উদ্ধারের পর নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে জানান, পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তাদের মরদেহ পড়েছিল। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিলো তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। পরে বোঝা যায় চার যুবকের মাথা থেঁতলানো ছিল। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুই দল সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বন্ধে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
তবে, ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত চারটি মরদেহের মধ্যে তিনজনের মাথাতেই গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া চারজনকেই মাথার পিছন দিক থেকে ভারী বস্তু দ্বারা আঘাত করা হয়েছে এবং মুখ মন্ডল থেঁতলে দেয়া হয়েছে। তিনি ধারণা করছেন, চারজনকেই শনিবার রাতের যেকোনো সময় হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়াও রবিববার সকালে রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ের কুশাব জামে মসজিদের পাশ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির (৪০) রক্ত মাখা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, লাশটি সেখানে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে, রাতের কোনো একসময় ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে নজেদের মধ্য দ্বন্দ্ব হলেও তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়ে অন্যরা চলে যায়।
তবে, কুশাব জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা মতিনের কথায় ওঠে আসে ভিন্নতা। তিনি জানান, ফজরের নামাজের আগেই ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক গাড়ি তিনি দেখতে পেয়েছিলেন। পরে নামাজ শেষে পোশাকধারী পুলিশ সড়কটি বন্ধ করে দেয়। এর কিছুক্ষণ পরই লাশটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর সকাল আটটার দিকে আরেকদল পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিক্তি পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে তারা কেউই এখানকার নয়। দুইটি হাইওয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে প্রবাহিত। অপেক্ষাকৃত নির্জন স্থান হওয়াতে অন্যত্র এসব ঘটনা ঘটিয়ে এখানে লাশ ফেলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ধারণা করছি এই হত্যাকান্ডগুলো নিজেদের অন্ত:দ্বন্ধের কারণেই ঘটে থাকতে পারে। তবে আমরা ব্যাপারগুলি আরও ভালো ভাবে মনিটরিং করার চেষ্টা করছি। অদূর ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সচেষ্ট থাকবো। যদিও এর আগে তিন লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর থেকেই পুলিশ পুরোপুরি এলার্ট ছিলো। কিন্তু স্থানগুলো অত্যন্ত নির্জন আর এড়িয়া বড় হওয়ার কারণে অপরাধীরা ডাম্পিং স্পষ্ট হিসেবে সুবিধে মতো ব্যবহার করছে।