নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : শহরের খানপুর বরফকল এলাকায় মারামারির ঘটনায় চৌরঙ্গী পার্কের মালিক কাজি আব্দুস সাত্তার এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এস.আই ও দুই এ.এস.আই সহ ১২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন মাই লাইফ ক্যাফে ফাস্টফুডের মালিক ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগ এবং শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি জালাল উদ্দিন। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) দুপুরের দিকে নারায়ণগঞ্জে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়েছে। আগামী সেপ্টম্বরের ২৫ তারিখের মধ্যে পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসী পার্কের মালিক আব্দুস সাত্তার। মামলার অন্য আসামীরা হলেন- ডিবির এ.এস.আই আমিনুল (৪৮), বকুল (৫০), এস.আই মিজান (৪৮) ও এসআই সায়েম (৪২)। এতে স্বাক্ষী হিসেবে রয়েছেন জালাল উদ্দিন নিজে, মো.ইরান, মাসুদ এবং আব্দুল কাদির, রীসা ইসলাম মর্জিনা, মো.আলামিন, আলাউদ্দিন, সাহাবউদ্দিন। ফৌজধারী দন্ডবিধির ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/১০৯/৩২৪/৩৫৪/৩৭৯/৩৮০/৩৮৫/৫০৬ ধারায় দায়ের করা মামালায় জালাল উল্লেখ করেন, তার ফাস্টফুডের দোকানটি চৌরঙ্গি পার্কের মালিক আব্দুস ছাত্তার উচ্ছেদ এর জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা করছিলো। ২৬ আগস্ট ৭ ঘটিকার সময় বিবাদী আব্দুস ছাত্তার মিয়ার ইন্ধনে ডিবির আমিনুল, এসআই বকুল, এসআই মিজান, এস আই সায়েম তাঁর দোকানে ফাস্টফুড খাওয়ার জন্য আসে।
এসময় জালালের ছেলে আল আমিন তাহাদেরকে যথারীতি কোল্ডকফি, লাচ্ছি, বার্গার, ফোচকা তাদের খেতে দেয়। খাওয়া শেষে জালালের ছেলে আল আমিন খাবার বিলের টাকা চাওয়া মাত্র আব্দুস ছাত্তারের পূর্ব পরিকল্পনা ভাবে ও নির্দেশ মোতাবেক ডিবির লোকজন ধমক দিয়া জানায় তারা আমরা ডিবির লোক, কিসের বিল দিবো এবং তারা ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে । জালাল উল্লেখ করেন, তার ছেলে আলামিন এগুলোতে প্রতিবাদ করায় তারা তাদের সাথে থাকা রাইফেল পিস্তল, শটগান দিয়ে আমার ছেলেকে এলোপাথারী মেরে শরীরে মারাত্মক কাটা রক্তাক্ত ও নীলা ফুলা জখম করে এবং ক্যাশ থেকে নগদ দশ হাজার টাকা নিয়া যায়।
এই খবর শুনে আমার স্ত্রী আসলে তাকেসহ ও স্বাক্ষীদের উপর আক্রমন করে এক পর্যায়ে ২নং বিবাদী আমিনুল এর হাতে থাকা পিস্তলের বাট দিয়া বাদীর মাথায় আঘাত করিয়া কাটা রক্তাক্ত জখম করে এবং মুখে আঘাত করিয়া দাঁত উঠাইয়া ফেলে। এ সময় তারা বাচাতে এসে অন্যান্যদের কিল ঘুষি লাথি মারিয়া মাটিতে ফেলিয়া দেয়। এসব ঘটনায় এলাকার লোকজন প্রতিবাদ জানালে এলাকাবাসীকে তারা হুমকি প্রদান করে এবং বলে এইখানে (চৌরঙ্গী পার্ক) ব্যবসা করিতে হইলে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তাদের দিতে হবে। জালাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা নিতে অস্বীকার করায় তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এবং এ কারণে মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। জালাল উদ্দিনের পক্ষে আদালতে মামলাটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট মো. রফিক আহমেদ।
তিনি জানান, ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত আমাদের আবেদনটি আমলে নিয়ে একজন সহকারি পুলিশ সুপারকে দিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তা আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২৬ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যায় শহরের বরফকল এলাকার চৌরঙ্গি পার্ক সংলগ্ন ফাস্ট ফুডের দোকানে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের মারধরে জালাল উদ্দিন, স্ত্রী রীনা ইয়াসমিন ও তাদের দুই ছেলে আল আমিন এবং রবিন আহত হলে পরবর্তীতে জনতার হামলায় গুরুতর আহত হন নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মিজান ও সায়েমসহ আরো কয়েকজন। তাদের মধ্যে এস.আই মিজান ও সায়েমকে প্রথমে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে এবং পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও আহত জালাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী রীনা ইয়াসমিন সহ দুই ছেলেকে প্রথমে ৩শ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মধ্যে রীনাকে ছাড়া বাকি তিনজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নূরে আলমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম এবং ডিআই-১ সরাফতউল্লাহ। কমিটিকে দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল বাদি হয়ে রোববার রাতেই সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে মাই লাইফ ক্যাফে ফাস্টফুডের মালিক জালাল উদ্দিন, তার স্ত্রী রীনা ইয়াসমীন এবং ছেলে রবীনসহ আরও অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।