নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে ঘাতক বন্ধু পিন্টু দেবনাথ। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে পিন্টুর জবানবন্দী রের্কড করা হয়। ১৪ জুলাই শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম জবানবন্দী রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের সাথে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করেন।
ওইদিন দুপুর আড়াইটায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৪ ঘন্টা ব্যাপী স্বীকারোক্তিতে ঘাতক পিন্টু আদালতকে জানিয়েছে, প্রবীরের বন্ধকি স্বর্ণ, র্অথ আত্মসাৎ এবং প্রবীরের রুঢ় আচরণ সহ নারী কেলেংকারীতে ফাঁসিয়ে দিবে অন্য প্রচারণা দাতার এমন কু-প্ররোচনায় ক্ষুব্দ হয়ে পরিকল্পিতভাবে পিন্টু একাই হত্যা করে বন্ধুু প্রবীরকে।
এদিকে শুক্রবার এমন তথ্য জেনে ডিবি পুলিশ প্রবীরের পরিবারের সাথে কথা বলে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার বন্ধকি অর্থের সত্যতা পায়। যা পিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে স্বিকার আসে। পরে পিন্টুর দোকানে অভিযান চালালে সেখান থেকে ৫ ভরি স্বর্ণ ও ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
ঘাতক বন্ধু পিন্টু আদালতকে জানিয়েছে, প্রবীর পিন্টুকে বন্ধুত্বের সুবাদে মাঝেমধ্যে তাকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করতো। সম্প্রতি প্রবীর পিন্টুকে নারী ও পুলিশ দিয়ে হয়রানী করার হুমকী দেয়। এতে তার মনের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার হতে থাকে। পরে রমজানের ঈদের ছুটিতে ও বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা থাকায় শহরের নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে ১৮ জুন সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় প্রবীরকে বিয়ার খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। বিস্কুট ও স্প্রাইট খেতে দিয়ে টিভি চালু করে।
এসময় পিন্টু রান্নাঘর থেকে চাপাতি নিয়ে পিছন দিক থেকে প্রবীরের মাথায় আঘাত করে। প্রবীর বিছানায় লুটিয়ে পড়ে বাচাঁর চেষ্টায় পিন্টুর বুকে লাথিও মারে। তারপর পিন্টু তার মাথায় আরো ২ থেকে ৩টা আঘাত করলে প্রবীর নিস্তেজ হয়ে গুঙ্গাইতে থাকে। পিন্টু বুকের উপর উঠে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধকরে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য প্রবীরের মৃতদেহকে ৭ টুকরো করে ঘাতক পিন্টু। মাথা, দু-হাত, দু-পা, বডি, পেট ও পাজর সহ ৭ টুকরো করে ৪টি ব্যাগে ভর্তি করে। একে একে দেহাংশগুলি ৩টি ব্যগে ভর্তি করে তার বাসার নীচ তলার সেপটিক টাংকিতে ফেলে। আরেকটি ব্যগ অবশিষ্ট দেহাংশ পাশের বাসার আবর্জনার স্তুপে ফেলে দেয়। আর রক্তমাখা চাদর ও বালিশ চারারগোপ আলুর ঘাট নদীতে ফেলে দেয়। চাপাতি ও প্রবীরের সেন্ডেল বাসার সামনে ময়লার স্তুপে ফেলে দেয়। তবে আলামতের জন্য অভিযানে গেলে এগুলি দীর্ঘদিন হওয়ায় অন্য কোথাও স্থানান্তর হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তদন্তে সংশ্লিষ্টরা জানয়, হত্যাকান্ডের পর ঘাতক পিন্টু ঐ রাতেই প্রবীরের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের সাথে প্রবীরতে খোঁজাখুজি করে। ঘটনাটি অপহরণ সাজানোর জন্য তার সহযোগী বাপেন ভৌমিক দ্বারা কুমিল্লা হইতে এক কোটি টাকা মুক্তিপন চেয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠায়। এই হত্যাকান্ডের পরে বাপেনকে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। বাপেনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রবীরের মোবাইল ফোন। এরপর বাপেনের দেয়া তথ্যানুযায়ী পিন্টুকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে মূল রহস্য। পিন্টুকে নিয়ে উদ্ধার করা হয় নিখোঁজ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীরের লাশ।
উল্লেখ্য নিখোঁজের ২১ দিন পর ৯ জুলাই রাত ১১টায় শহরের আমলাপাড়া এলাকার রাশেদুল ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার ৪ তলা ভবনের নিচে সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রবীরের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘাতক পিন্টু ওই বাড়ির দুই তলার একটি ফ্লাটে বসবাস করতো। গত ১৮ জুন রাত থেকে প্রবীর নিখোঁজ ছিল। স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ কালিরবাজার স্বর্ণপট্টির ভোলানাথ জুয়েলার্সের মালিক ভোলানাথ ঘোষের ছেলে। তার সন্ধান দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিল স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা।