পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে টুকরো টুকরো হলো স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : বন্ধু মানেই বন্ধন। একটি শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ স্পন্দন। বন্ধুই পারে অপর বন্ধুর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। আর এই বন্ধুত্বের প্রথম শর্তই হলো বিশ্বাস। একজন মানুষকে ভালো বন্ধুর তালিকায় নিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। আনন্দ-বেদনা, হতাশা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা যার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়া যায় সেই তো বন্ধু। বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু, বন্ধুত্ব যতই পুরাতন হয়,ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়।
ঠিক এমন বন্ধুর সম্পর্ক ছিলো স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবির ঘোষ ও পিন্টু দেবনাথের মধ্যে। তবে জীবদ্দশায় প্রবির ঘোষ তার বন্ধুত্বের শর্ত রাখলেও তা ভেঙ্গে বিচূর্ণ করেছে পিন্টু দেবনাথ। তাদের বন্ধুত্বটাও দু-একদিনের নয়। দু পুরুষের সম্পর্কে জড়ানো ছিলো আত্মার সম্পর্ক। এক সাথেই বেড়ে উঠা প্রবীর ঘোষ ও পিন্টু দেবনাথের। তাঁদের বাবা সতীশ দেবনাথ ও ভোলানাথ ঘোষের বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই প্রবীর ঘোষ এবং পিন্টু দেবনাথের বন্ধুত্ব।
একে অপরের পরিপূরক ছিলেন এমনও মন্তব্য করেন স্থানিয় অনেকে। বন্ধু পিন্টু দেবনাথের নানা রকম বিপদ আপদে সবসময়ই পাশে ছিলেন প্রবির ঘোষ। পরিবার সূত্রে জানা যায়, পিন্টুর ওপেন হার্ট সার্জারি করার জন্যও অনেকাংশ খরচ বহন করেছিলেন বন্ধু প্রবির। এছাড়াও পূর্বে স্বর্ণ চুরিরও অভিযোগ ছিলো, সেখানেও বন্ধুকে উদ্ধার করতে সহযোগীতায় এগিয়ে আসে আত্মার সেই বন্ধু প্রবির।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিনাম কিছুই মনে রাখেনি বেঈমান পিন্টু দেবনাথ। হঠাৎ করেই গত ১৮ই জুন রাত থেকে নিখোঁজ হয় প্রবীর ঘোষ। বন্ধুর খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন বন্ধু নামে সেই বেঈমান পিন্টু। ছিলেন সক্রিয় চলমান বিক্ষোভ, মানববন্ধন থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে স্মারকলিপি প্রদান করা পর্যন্ত। তবে মিথ্যার আদলে শেষ রেহাই পেলনা।
নিখোঁজ হওয়া স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পাওয়া গেল ২২ দিনের মাথায় একটি সেপটিক টাংকিতে তাও আবার টুকরো টুকরো করা অবস্থায়। উন্মোচিত হলো রহস্য, জানা গেল বন্ধু প্রবিরকে পরিকল্পিতভাবে নির্মম হত্যাকান্ডে জড়িত সেই পাষন্ড বন্ধ পিন্টু দেবনাথ। একসময় প্রশংসার দাবিদার এই মানিকজোড়াই কলংক লেপে দিলো, জানান দিয়ে গেলো আজ বন্ধুর কাছে বন্ধু কতটাই না অনিরাপদ।
সোমবার নিখোঁজের ২২ দিনের মাথায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করে জেলা পুলিশ। মঙ্গলবার এই নৃশংসতার বর্ননায় দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ মূলত আর্থিক লেনদনের বিরোধের কারণেই খুন হয়ে থাকতে পারেন প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আর এ নৃশংস হত্যাকান্ডে জড়িত প্রবীরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ও তার দোকানের কর্মচারী বাপেন ভৌমিক বাবু।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মঈনুল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জিডির সূত্র ধরে মূলত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বাপেন ও পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর কেউ জড়িত আছে কিনা, কী কারণে প্রবীরকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো সুনিশ্চিত করা যাচ্ছেনা। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, অনেকটা ধারপ্রান্তে আছি। তবে জানা গেছে, প্রবীর ঘোষের এক ভাই সৌমিক ঘোষ ইতালী প্রবাসী। তার পাঠানো টাকা লেনদেন হতো প্রবীর ও পিন্টুর মধ্যে। সম্প্রতি সৌমিক ঘোষ যখন দেশে আসে তখন থেকেই নিখোঁজ ছিল প্রবীর। সৌমিক দেশে আসার আগেই টাকার জন্য প্রবীর ঘোষ পিন্টুকে চাপ দেয়।
এসব নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। পরে পরিকল্পনা করেই প্রবীরকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে পিন্টু। স্বর্ণ ব্যবসার সংশ্লিষ্টতায় এতে জড়িত হয় বাপেন ভৌমিক। প্রাথমিকভাবে এও ধারণা করা হচ্ছে পিন্টু যে বাসাতে থাকে সে বাসার ফ্লাটেই প্রবীরকে হত্যার পর ওই বাসার নিচে সেপটিক ট্যাংকে লাশ ব্যাগে করেফেলে দেওয়া হয়। কারণ সে সময় এ লাশটি বের করে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার কোনও উপায়ন্ত পাচ্ছিল না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন প্রমুখ।