নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাতে ঘন ঘন বিদ্যুত লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্থ জনজীবন। একেতো গরমের দিন, তার উপরে প্রতি ঘন্টায় বিদ্যুত বিভ্রাট। এতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অসহায় হয়ে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ ও গৃহবধূরা। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ব্যাহত হচ্ছে অফিস-আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্মের হাজারো কর্মঘন্টা। তবে এ থেকে পরিত্রানে কোন আশার বানি শুনাতে পারেনি বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের কোনো গাটতি নেই। বিদ্যুত উৎপাদনে অনেকগুন এগিয়ে আছে সরকার। এটা সরকারি হিসাব। কিন্তু সারা দেশে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার আচরণ বলে দেয় কি পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে। আর এতে বিদ্যুতের গাটতি নিয়েও প্রশ্ন উঠে র্সবসাধারণের মাঝে।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়া চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী শেখ মাকসুদুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন দূর্বিসহ করে তুলেছে। দিনে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিং দিয়ে শুরু হয় প্রথম ধাপ। সন্ধ্যার পরে দ্বিতীয় ধাপে গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে বিদ্যুত দেয়া নেয়ার পালাক্রমের খেলা। গেলে যেন আর আসেনা এই বিদ্যুত। রমজান মাসে সরকারের পক্ষ থেকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা তোয়াক্কা করছে না সংশ্লিষ্টরা। এতে ইফতার ও সেহরিতে চরম ভোগান্তির শিকার আমি ও আমার পরিবার সহসকল রোজাদাররাই।
এছাড়াও গত কয়েকদিনের লোডশেডিংয়ের কারণে কর্মস্থল কিংবা বাসা-বাড়িতে কোথাও স্বস্থি নি:শ^াস ফেলতে পারছে না মানুষ। বৃদ্ধি পাচ্ছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যাও। যৌথ ও ছোট উভয় পরিবারের সদস্যদের এই বিড়ম্বনা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বিঘিœত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও।
অপরদিকে ঈদকে ঘিরে সরগরম মার্কেট সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে নগরবাসীর প্রস্তুতি সহ নানা কাজে বাধা বিপত্তিতে বিপাকে পড়েছে জনসাধারণ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই সংকট দেখা দিয়েছে ব্যপক হারে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো ঈদ উপলক্ষে জামা কাপড়ের র্অডার নিলেও সময় মত ডেলিভারী হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে মালিকরা।
ভুক্তভোগী একজন স্কুল শিক্ষক বলেন, বিদ্যুত একটি সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় জিনিস। রাতে শুধু ইলেক্ট্রিক বাতি জ্বলবে, এটাই বিদ্যুতের একমাত্র কাজ নয়। বাতি জ্বালানো বিদ্যুতের হাজার কাজের অন্যতম একটি। কিন্তু বিদ্যুতই যদি না থাকে তো এই বাতিটাও আর জ্বলবেনা। পুরো এলাকাজুড়েই বিরাজ করবে আধাঁর। আর এই আধাঁরেই ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়। একইভাবে আধারে ধাবিত হচ্ছে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি এমনই হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর, ফতুল্লা, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ এর অন্তর্গত শত শত এলাকায়। যেখানে প্রতিনিয়তই লেগে আছে লোডশেডিং। একবার লোডশেডিং শুরু হলেই ঘণ্টা পেরোলেও খবর নেই বিদ্যুৎ আসার। ফলে দিন কিবা রাতের বেলা পড়াশোনা করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা। যা এক চরম বিপর্যয় সবার জন্য। এক্ষত্রে চার্জলাইট থাকলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে তা পরিপুর্ণ চার্জ দেওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরই থাকতে হয় অন্ধকারে এতে চরম ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায়। যার ফলে পরিক্ষায় ফলাফল খারাপ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। গৃহবধূদের হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার পরিচালনায়, প্রতিনিয়তই লোকসান গুনছে ব্যবসায়ীরা, স্বস্তিতে নেই সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরাও।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ পশ্চিম (ডিপিডিসি) প্রকৌশলী মো. আনিসুর বলেন, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। আমাদের যথেষ্ট পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করার ব্যবস্থা নেই। যার জন্য এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা। তবে গ্রিডের কাজ চলমান আশা করি দুই একদিনের মধ্যেই এ সমস্যা কিছুটা কমে যাবে।
এদিকে বিদ্যুত বিভাগের আওতাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ গ্রীড উপকেন্দ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে ১৩২/৩৩ কেভি, ৫০/৮৩ এমভিএ টি-২ পাওয়ার ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করে একটি ১৩২/৩৩ কেভি, ৮০/১২০ এমভিএ ট্রান্সফরমার এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি স্থাপন কাজের জন্য গত মাসের ১০ মে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১৩ মে রোববার ১০টা পর্যন্ত টি-২ ট্রান্সফরমার বন্ধ রাখার কারণে এই বিভ্রাট দেখা দিবে বলে জানিয়েছিলো। তবে এই বিদ্যুত বিভ্রাটের সমস্যা এখনও বিদ্যমান। যা দিন দিন আরও প্রকোপ আকার ধারন করেছে।