রূপগঞ্জে এসিআই লবন মিলস্ যেন বিষফোঁড়া

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : রূপগঞ্জের মুড়াপাড়াস্থ এসিআই লবন মিলের লবনাক্ত কাঁদায় পাশের ফসলি জমি ও শীতলক্ষ্যার পানি নোনারূপ নিয়েছে। ফলে মিঠা  নদীর পানিতে বসবাস করা মাছগুলো মরে ভেসে ওঠছে আর ফসলি জমিতে আশানুরুপ ফসল ফলছে না। এতে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে স্থানীয় পরিবেশ।

অন্যদিকে আবাসিক এলাকায় এ মিল চালু হওয়ায় বিগত ১৩ বছর ধরে স্থানীয়দের টিনের চালা পাচ্ছে না স্থায়ীত্ব। ২/৩ বছর পেরুতেই নতুন টিনের চালায় মরিচা  ধরে সামান্য বৃষ্টিতে বসত ঘরে পানি পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধূ তাই নয়, শীতলক্ষ্যার সীমানা পীলার ছাড়িয়ে নদীর জমি দখল করে অবৈধভাবে  চালাচ্ছে  এ মিলের কার্য্যক্রম।  এসব বিষয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মুড়াপারাস্থ ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর একাংশ দখল করে গড়ে ওঠেছে এসিআই লবনের মিল। এ মিলে লবন প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করলেও মিলের অভ্যন্তরে অনুমোদনহীনভাবে একই কোম্পানীর অন্যান্য পন্য উৎপাদন করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে লবনের মিলের বর্জ্র হিসেবে লবনের কাঁদা সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে । এতে মিঠা পানির শীতলক্ষ্যার পানি লবনের কাঁদার প্রভাবে  হয়ে পড়ছে নোনা পানি। মিল এলাকায় প্রায়ই মরা মাছ ও শশুকমাছসহ মরে ভেসে ওঠতে দেখা গেছে।

সূত্র জানায়, নদীতে একটি ট্রলার বেধে রেখে রাতের আঁধারে সরাসরি নদীতে ওই লবনের কাঁদা ফেলা হয়।  এসব বিষয়ে অভিযোগ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশনায় মিলের পাশেই একটি পুকুর খনন করে সেখানে ওই কাঁদা রাখার কথা থাকলেও এসিআই কর্তৃপক্ষ অনিয়ম করে নদী দখল করে ওই পুকুর বৃদ্ধি করেছে। তবু ওই পুকুর উপচিঁয়ে পাশের ফসলি জমিতে নোনা পানি  ও কাঁদা গড়িয়ে পড়ায় ফসলি জমিতে ফসল ফলছে না আশানুরুপ। এতে স্থানীয় কৃষকরা  ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেনা মিল কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় কৃষক আসাদুল্লা মিয়া জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে শীতের সব্জিসহ বর্ষাকালীন সব্জি করেই জীবিকা চালান। কিন্তু এ মিল হওয়ার পর থেকে ওই জমিতে এখন আগের মত ফসল হয় না। মিল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ২/১ বছর ক্ষতিপূরণ দিলেও এখন তারা পাত্তাই দেয় না। বরং ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে মামলার ভয় দেখায়। এছাড়াও পাশের মাছের প্রজেক্টে এই লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় তাদের মাছ চাষ ব্যহত হচ্ছে। এতে স্থানীয়রা অপুরণীয় ক্ষতির শিকার হলেও তারা তাদের ভোগান্তির কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোন সুরাহা পাননি।

ভোগান্তির শেষ নেই আবাসিক লোকজনেরও । তাদের টিনের চালায় ২/১ বছর না যেতেই নতুন টিন মরিচা ধরে পুরনো রূপ নিচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ওইসব বসত ঘরে পানি পরে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ থাকলেও মানববন্ধন কিংবা প্রতিবাদের আয়োজন করলে স্থানীয় ও ভারাটিয়া সন্ত্রাসীরা ওই প্রতিবাদ সভা পন্ড করে দেয় ।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর আলম জানান, তাদের বসত ঘরসহ আশপাশের সকল ঘরবাড়ির লোহাজাতীয় পদার্থতে অকালেই মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের দাবী এ মরিচা ধরার জন্য দায়ী এসিআই লবণ।

তারা আরো দাবী করেন, লবণ পক্রিয়াজাত করার সময় লবনের গুড়োদানা বাতাসে ওড়ে আশপাশের টিনের চালায় জমে থাকে । এতে মরিচা ধরে যায়। তাই তারা দাবী করেন, কারখানাটি আবাসিক এলাকা থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় কর্তৃপক্ষ যেন ব্যবস্থা নেন।

এ বিষয়ে এসিআই লবন কারখায় দায়িত্বরত সুপারভাইসর হেলালউদ্দিন জানান, এসিআই লবণ মিলের দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে মালিককে জানিয়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

একই কারখানার দায়িত্বরত ম্যানেজার তার পরিচয় গোঁপন রেখে বলেন, মিলের লবনের কাঁদা সরাসরি পুকুরে ফেলা হয়, নদীতে যা পড়ে তাতে নদীর পানি নোনা হওয়ার কোন কারণ নেই। তাছাড়া এ মিলের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয় না বলে দাবী করেন তিনি।

এ বিষয়ে এসিআই লিমিটেড কোম্পানীর ব্যবস্থাপক (মিডিয়া) নাহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, এসিআই লবণ মিলের প্রভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

নদী দখল বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর সীমানায় কোন স্থায়ী কাঠামো তৈরী করা হয়নি। শুধুমাত্র অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, এসিআই সহ নদী পারের ও আবাসিক সকল কারখানাকে ইটিপি প্ল্যান বসানোর জন্য নোটিশ করা হয়েছে। তাদের অনিয়ম বিষয়ে উর্ধ্বতন বিভাগকে জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই আইনের আঁওতায় আনা হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত