নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : মাদক কারবারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় মাদক কারবারী ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর দু’দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে মাদক কারবারীর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ককটেল বিস্ফোরণ ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে স্থানীয় ১১ জন এলাকাবাসী আহত হয়। এদিকে, মাদক কারবারীর সঙ্গে রূপগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক আনিসুর রহমানের দহরম-মহরম সম্পর্কের অভিযোগ তুলে উত্তেজিত এলাকাবাসী তার উপড় চড়াও হয়। পরে পুলিশ, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। বর্তমানে ঐ এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। শুক্রবার রাত ও শনিবার দুপুরে উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের লাভরাপাড়া এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের লাভরাপাড়া এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে মাদকের ডিপো হিসাবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। এ এলাকার সেলিম ওরফে কুত্তা সেলিম, আউয়াল, তানজিল, (রুবেল বর্তমানে জেলহাজতে) এলাকায় মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে। মাদক কারবারী সেলিমকে খোদেজা বেগম নামে এক বৃদ্ধা (যাত্রাবাড়িতে বসবাসরত) তার বাড়ি দেখভাল করার দায়িত্ব দেন। তিনি কালেভদ্রে এলাকায় এসে খোঁজখবর নেন। সে সূত্রেই বৃহস্পতিবার তিনি তার বাড়ি দেখতে আসেন। তার ঘরে মাদকদ্রব্য জাতীয় জিনিস দেখে এর প্রতিবাদ করেন। পরে ঐ রাতে তাকে ভেতরে আটকে রাখেন। শুক্রবার দুপুরে কৌশলে ঘর থেকে বের হয়ে বিষয়টি এলাকাবাসীকে অবহিত করেন। পরে শুক্রবার রাতে স্থানীয় এলাকাবাসী স্থানীয় ইউপি সদস্য আপন মোহাম্মদ খোকনের নেতৃত্বে একাট্রা হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঐ রাতেই মাদক কারবারী তার শেল্টারদাতা ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হানজালাকে বিষয়টি জানায়। রাত ৯ টার দিকে হানজালা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ তার বাহিনীর লোকজন নিয়ে এলাকাবাসীর উপড় অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় এলাকাবাসীও একত্রিত হয়ে তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে হানজালাকে হাতেনাতে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ ঘটনার জের ধরেই শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে হানজালা তার বাহিনী নিয়ে ফের লাভরাপাড়া এলাকায় হামলা চালায়। এসময় মাদক কারবারী ও তার শেল্টারদাতা হানজালা বাহিনীর সঙ্গে এলাকাবাসীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে হানজালা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও ভুলতা ফাঁড়ির একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। উত্তেজিতদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশের লাঠিচার্জে আক্তার হোসেন, নুরজাহান বেগম, আলামিন বেপারি, আলভী, রতন মিয়া, আকবর হোসেনসহ ১১ ব্যক্তি আহত হয়।
দুপুর ২ টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে স্থানীয় জনতা আবারো ক্ষিপ্ত হয়ে হঠে। এসময় এলাকাবাসী রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক আনিসুর রহমানের সঙ্গে মাদক কারবারীদের দহরম-মহরম সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তার উপড় চড়াও হয়। পরে পুলিশ, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগীতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে এলাকায় থমথমেভাব বিরাজ করছে। অভিযুক্ত সহকারী উপপরিদর্শক আনিসুর রহমানের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা সঠিক নয়। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। খবর রয়েছে সেলিম একজন পাইকারী মাদক ব্যবসায়ী। তাকে ছাত্রলীগের হানজালা শেল্টার দেয়। এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তোলায় তাদের উপড় হামলা চালিয়েছে। হানজালা ও সেলিম যেই হউক তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের শীঘ্রই গ্রেপ্তার করার জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আনিস যদি জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।