নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার আগে নিজহাতে ইংরেজীতে একটি চিরকুট লিখে গেছেন বন্দর ইঞ্জিনিয়ার ভিলার মালিক আলোচিত ইঞ্জিনিয়ার ফারুক। সুইসাইড নোট এ তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন বন্দরের বিএনপি নেতা ও সূদের ব্যাবসায়ী মিয়া সোহেল ও তার সহযোগীদের। বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ‘সুইসাইডাল নোট’ লিখে রেখে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী ফারুক আহাম্মদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক।
রোববার বিকেলে ঢাকার মগবাজার রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার উইলসন রোডে। ঘটনার পর র্যাব-৩ এর একটি দল সেখানে গিয়ে ফারুকের মানিব্যাগ তল্লাশি করে সুইসাইড নোটটি পান। পরে মানিব্যাগে থাকা নারায়ণগঞ্জের একজন আইনজীবীর ভিজিটিং কার্ড পেয়ে ওই আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হন। ফারুক সুইসাইডাল নোটে তার মৃত্যুর জন্য বন্দর উপজেলার বিএনপি নেতা মিয়া সোহেলের নাম লিখে গেছেন। ওই নোটটি এখন র্যাব-৩ ও মগবাজার পুলিশের কাছে রয়েছে। মিয়া সোহেল বন্দরের ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। তিনি জমি কেনাবেচার ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে।
ইংরেজিতে লেখা সুইসাইডাল নোটে ফারুক উল্লেখ করেছে, ‘আমি ফারুক আহাম্মেদ, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার উইলসন রোডে বসবাস করি। ৭ বছর ধরে মিয়া সোহেল আমার সঙ্গে ব্যবসা করেছে। সে সুতা, তুুলা এবং গার্মেন্টের ঝুট আমার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করত। কিন্তু তার সরবরাহকৃত খারাপ মালের কারণে আমি প্রচুর অর্থ লোকসান দেই। সে আমার ব্যবসায়িক অংশীদার হয়েও কোনো লোকসান নিতে রাজি হয়নি। এখন সে আমার কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা পাবে বলে দাবি করছে। কিছুদিন আগে সে কিছু স্থানীয় লোকজন নিয়ে আমার কাছ থেকে ৩৭ লাখ টাকার একটি চেক আদায় করে নেয়। সম্প্রতি সে আমাকে আমার পরিবার ও দুই সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ধরনের হুমকিতে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। মিয়া সোহেল স্থানীয় বিএনপির একজন বড় নেতা। সে যে কোনো সময় আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করতে পারে। আমার মৃত্যুর জন্য মিয়া সোহেল, তার ভাইয়েরা ও তার বন্ধুবান্ধবরা দায়ী। তারা সবাই মিলে আমাকে এ কাজে বাধ্য করছে। ফারুক/২৮.০২.১৮।
ফারুকের স্ত্রী পলি বেগম বলেন, মিয়া সোহেল ও তার লোকজন গত মাসের শেষ দিকে এসে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। এর কয়েকদিন পর একটি চেক ডিজঅনার মামলা করে তারা আমার স্বামীকে গ্রেফতার করায়। জামিন নিয়ে আমার স্বামী তাদের ভয়ে আর বাড়িতে ফিরতে পারেনি। সে চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকত। রোববার বিকেলে র্যাব-৩ এর এক কর্মকর্তা টেলিফোনে তার আত্মহত্যার কথা জানালে আমরা ঢাকায় ছুটে যাই।
এদিকে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মিয়া সোহেল বলেন, আমার সঙ্গে ফারুকের কোনো ব্যবসা ছিল না। সে আমার ও আমার পরিচিতজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ঋণ নেয়। কিন্তু টাকা ফেরত না দেওয়ায় গত ২৫ অথবা ২৬ ফেব্রুয়ারি আমরা তার বাসায় বিচারে বসি। সেখানে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সে আমাকে ৩৭ লাখ টাকার একটি চেক দেয়। এই চেক গত ৪ মার্চ পাস হওয়ার কথা ছিল। বাকি ১ কোটি টাকা প্রতি মাসে দশ লাখ টাকা করে পরিশোধ করার কথা ছিল। এ জন্য সে আরও দশটি চেক দেবে বলে বলেছিল। কিন্তু এর আগেই বশির এলাহী নামের একজনের করা চেক ডিজঅনার মামলায় সে গ্রেফতার হয়ে যায়। জামিন পেলেও সে আর বন্দরের বাসায় ফেরেনি। এত টাকা তাকে কেন ঋণ দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। সে আমার আত্মীয়। এ জন্য সরল বিশ্বাসে তাকে টাকা ধার দিয়েছিলাম।
এব্যাপারে মগবাজার থানার এস আই আনিসুর রহমান জানান, সুইসাইড নোট এবং মানিব্যাগে পাওয়া সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে আমরা অনুসন্ধানে নেমেছি। র্যাব-৩ আলাদা অনুসন্ধান করছে। ইতিমধ্যে নিহতের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।