নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( শহর সংবাদ দাতা ) : ২০ বছর ধরে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ডিআইটির পূর্বপাশে এফ রাহমান সুপার মার্কেট থেকে করিম মার্কেটের পাশে জাহান সুপার মার্কেটের নিচে ফুটপাতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি করেন হকার আব্দুল আজিজ (ছদ্দনাম)। সারাদিন বেচাকেনা করে যা লাভ হয়, তা দিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তাদের পাঁচজনের সংসার। হঠাৎ করে তাদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করায় সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ কোথা থেকে আসবে সেই চিন্তায় সারাক্ষণ উদ্বিগ্ন তিনি। ভাবছেন এ পেশা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাবেন। সেখানে গিয়ে ছোটখাটো কোনো দোকান দিয়ে চেষ্টা করবেন দুই বেলা-দুই মুঠো খেয়ে বাঁচতে। তাঁর মতো উচ্ছেদ হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দুলাল। কোথাও চাকরি না পেয়ে এক বন্ধুর পরামর্শে বাচ্চাদের কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ভালোই চলছিল তার দিনকাল।
কিন্তু উচ্ছেদের কারণে উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন কীভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় চোখে ঘুম নেই তার। শুধু আজিজ বা দুলাল নয়, উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে এ রকম কয়েক হাজার হকারের আজ একই অবস্থা। কেউ দীর্ঘ দিনের এই পেশা ছেড়ে বিকল্প পেশার সন্ধান করছেন। কেউ আবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কেউ কেউ চেয়ে আছেন মেয়রের নির্দেশের আশায়। হয়তো মেয়র খেটে খাওয়া এই মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করবেন। কেউ কৌশল অবলম্বন করেছেন। তারা টুকরিতে মালামাল নিয়ে বসছেন। অভিযানের খবর পেলেই সটকে পড়ছেন। তারপরেও একটি স্থায়ী সমাধানের অপেক্ষায় বুক বেধে আছে হকাররা।
নগরীর ২নং রেলগেট এলাকার হকার শিপন (ছদ্দনাম) বলেন, ২০ বছর ধরে তারা এ জায়গায় ফুটপাতে ব্যবসা করছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন কী করে খাবেন? জানাগেছে, হকারদের পছন্দ চাষাঢ়া গোলচত্তর থেকে শুরু করে উত্তর-দক্ষিন বরাবর বঙ্গবন্ধু সড়কটির ও এর আশপাশের এলাকা। বর্তমানে সেখানে তারা বসতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, গতবছরের ২৫ডিসেম্বর কোন রকম নোটিস বা কোন রকম ঘোষনা না দিয়ে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। কাকডাকা ভোরে এই উচ্ছেদ অভিযানে নগরীর সমস্ত হকারদের মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।হকারদের অভিযোগ সেদিন হকারদের ৩০লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই মালামাল এখনো ফেরত দেয়া হয়নি। ভোর সকালে কোন হকার থাকেনা। দোকানদারী শেষ হলে রাতে হকাররা তাদের মালামাল মোটা পলিথিনে মুড়িয়ে বেঁধে বাড়ি যেত। হকাররা খবর পেয়ে বাড়ি থেকে আসতে আসতে মালামাল যায় নাসিক কর্তৃপক্ষ। পরদিন এমনিভাবে অভিযান চলে। সেদিনের উচ্ছেদকৃত মালামাল আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
হকাররা প্রথমে ধরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের, কোন কাজ হয়না। শেষ পর্যন্ত হকাররা এমপি শামীম ওসমানের দ্বারস্ত হন। হকার ইস্যু নিয়ে ১৬জানুয়ারি ঘটে যায় অপ্রীতিকর ঘটনা। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন হকাদেরকে বঙ্গবন্ধু সড়কটি বাদ দিয়ে আশপাশের শাখা সড়কে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসার অনুমতি দেন। কিন্তু হকারদের আর্তনাদ যেন থামেনা। কারণ যারা বঙ্গবন্ধু সড়কে দোকানদারি করেন তারা এখনো কোন স্থানে বসতে পারেননি। বর্তমানে হকারদের জন্য এগিয়ে এসেছেন সেলিম ওসমান এমপি। তিনি হকারদের সাথে বসেছেন, তাদের দু:খ দুদর্শার কথা শুনেছেন এবং তাদের জন্য একটি মার্কেট নির্মাণের চিন্তাভাবনা করছেন তিনি।
চাষাঢ়ার হকার মো: ওমর ফারুক জানান, মাননীয় মেয়র যদি একটু সহানুভূতি দেখান তাহলে আমরা বেচে যাই। ২৫ডিসেম্বর থেকে আজ অবদী আমাদের অনেকের ঘরে খাবার নেই। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ধারদেনা করতে করতে হয়রান। অনেকে সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি।অর্ধাহারে-অনাহারে দিন চলছে আমাদের।
এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মো:শহীদ উল্লাহ বলেন,বিকল্প ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হকার উচ্ছেদ করা হলে হাজার হাজার হকার ভয়াবহ দুর্দশার শিকার হবে।দেশে বেকারত্ব এক বড় অভিশাপ। হকাররা আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজ উদ্যোগে এই অভিশাপ মুক্তির সংগ্রামে নিয়োজিত হয়েছেন। তাই হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা হলে দুমুঠো ভাতের জন্য বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়বে তারা। হকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র নতুন কোনো ঘটনা নয়।