নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( নিজস্ব প্রতিনিধি ) : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে, কেউ বুঝে সেই বিভেদে পা দিচ্ছেন, কেউ না বুঝে। তবে আমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে আগে দেখি শেখ হাসিনা কি নির্দেশ দেন। তিনি যদি বলেন সংসদে ৩৮০ টি আসনই হবে নৌকার, তবে সেটাই, যদি বলেন মহাজোট কিংবা মহা-মহাজোট, তাহলে আমাদের সেই পথেই চলতে হবে। তার কথার বাইরে আমরা এক চুলও নড়বো না।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ শোক র্যালী অনুষ্ঠিত হবে। যদিও এটা শোক র্যালী, তবে শোককে আমরা শক্তিতে পরিণত করবো। যারা আওয়ামীলীগে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তারা যেন ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগকে নিয়ে কথা বলতে চিন্তা করে। আগামী ১২ তারিখ যে শোক র্যালীর ডাক দিয়েছি, তাতে আমি আশা করবো সবাই উপস্থিত থাকবেন। সেটা আমার অনুষ্ঠান নয়, জাতির পিতার শোক র্যালী। যারা দাওয়াতের অজুহাতে ওইদিন জাতির পিতার অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন না, তাদের আদর্শ কতটুকু বুঝে নিতে হবে। ৭ই আগস্ট রবিবার বিকালে নগরীর রাইফেল ক্লাবে জাতীয় শোক দিবসের প্রস্তুতিমূলক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, খেলা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন বা মনে করতে চান, যে জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন নওয়াজ শরিফ, বাংলাদেশ হচ্ছে পাকিস্তান আর আমরা পাকিস্তানের বাসিন্দা। এ ধরণের উদ্ভট চিন্তা ভাবনার কোনটাই সত্যি নয়। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা মূলত শেখ হাসিনাই। এটা পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সন্তান এবং শেখ হাসিনার কর্মী। মরতে হলে শেখ হাসিনার কর্মী হয়েই মরবো। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছেন, থাকবেন।
শামীম ওসমান আরো বলেন, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও আমাদের চক্রান্ত করে হারিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার আর সেটি হচ্ছে না। আমি এমপি না হলে কোন লাভ বা ক্ষতি হবে না, কিন্তু শেখ হাসিনা যদি পূনরায় নির্বাচিত না হতে পারেন, তবে দেশটা ধ্বংসের পথে চলে যাবে। যাদের দেশদ্রোহীতার দায়ে ফাঁসিতে ঝুলাচ্ছেন, তারা আপনাদের এমনি এমনিতে ছেড়ে দিবে না। তারা মরণ কামড় দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের অত্যাচারের হাত থেকে আমাদের, আপনাদের ঘরের মা বোনেরাও বাদ যাবে না। সুতরাং সবাইকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে শেখ হাসিনার উন্নয়ণের চিত্র তুলে ধরতে হবে। জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়েই আগামীতে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় যাবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এড. ওয়াজেদ আলী খোকন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো: শহিদ বাদল, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এম শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী ইয়াসিন, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব এম এ রশীদ, সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এড. শামছুল ইসলাম ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ ড. শিরিন বেগম, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সহ-সভাপতি কমান্ডার গোপীনাথ দাস, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, কার্যকরী সদস্য এহসানুল হাসান নিপু, জেলা কৃষকলীগ সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক ইব্রাহীম চেঙ্গিস, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি, মহানগর ছাত্রলীগ আহবায়ক মো: হাবিবুর রহমান রিয়াদ, বন্দর ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন কমিটি গঠনের বিষয় নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। আর সেসব কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন পাল্টা বক্তব্যে তুমুল সমালোচনা ঝড় উঠে। এতে করে সৃষ্টি হয় আন্ত কোন্দল ও নেতা কর্মীদের মধ্যে বিভাজন। কিন্তু এ বিষয়ে বরাবরই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বিভিন্ন সভা সমাবেশে বলে আসছিলেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে আমাদের মধ্যে কোন কোন্দল নেই। এছাড়াও জাতীয় শোক দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শোকর্যালী করার ঘোষনা দেন তিনি। যেখানে নাসিক মেয়র আইভীকে থাকার অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড. খোকন সাহা গনমাধ্যমে জানিয়েছেন আগামী ১২ আগষ্ট যে শোক র্যালী অনুষ্ঠিত হবে সেটা শামীম ওসমানের ব্যাক্তিগত। তাই সেখানে মহানগর আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকবেন না। আর এমন মন্তব্যে রীতিমত তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।