নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : শিল্পাঞ্চলখ্যাত মাসাবো এখন জোগালি রাসেলের রাম রাজত্বে পরিণত হয়েছে। একসময়কার রাজমিস্ত্রীর জোগালি রাসেল সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসার বদৌলতে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। তার রয়েছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী। সাধারণ ঘটনায় এ বাহিনী গুলি ও বোমা ফাটায়।
২২ জুলাই শনিবার এ বাহিনী চাঁদার টাকা না দেওয়ায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হামলা চালায় ও সাড়ে ৩ লাখ টাকা লুটে নেয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় পুলিশ জোগালি রাসেলের সেকেন্ড-ইন কমান্ড দুলাল শিকদার ওরফে সন্ত্রাসী দুলাল সিকদারকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ২৩ জুলাই রবিবার দুপুরে রূপগঞ্জ থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। টেটা দুলাল গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা হওয়ায় এলাকাবাসী স্বঃস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাসাবো এলাকার কাসেদ আলীর ছেলে রাসেল বরপা এলাকার রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে জোগালি কাজ করতো। গত ২০১৫ সালের তারাবো পৌরসভা নির্বাচনে ৩ নং ওয়ার্ড ( মাসাবো ) থেকে কমিশনার নির্বাচন করে জয়লাভ করে। ঐ সময় সে ভোটাদের কাছে ভোট ভিক্ষা দাবী করায় ভোটাররা তার প্রতি সহনশীল হয়। ভোটে পাশ করার পর থেকেই জোগালী রাসেল মাসাবো এলাকায় তার রামরাজত্ব গড়ে তোলে। গড়ে তোলে নিজস্ব বাহিনী। এ বাহিনী তার নির্দেশে এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল করে। এরা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ফাঁকা গুলি আর বোমা ফাটায় বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের উপড় এ বাহিনী নির্যাতন চালায় বলেও জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, তার ভাই ফয়সাল শিকদার, ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর মিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসার বলয় গড়ে তুলেছে। এছাড়া নান্টু, নুরু, আমিরা, সোর্স মহসিন, আকাশ, শাহজালাল, রাজু, আজিজুল মাতব্বর, সিরো মাঝি, ডালিম, মোবারক, তাহের, মোজাম্মেল তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দেদার ইয়াবা-ফেনসিডিল ব্যবসা চালাচ্ছে। মাসাবো ৩ নং ওয়ার্ডকে এখন ইয়াবার ডিপো বলেই চেনে প্রশাসন ও মাদক সেবীরা। তার আরেক সহযোগী আনিস মিয়া পতিতার জোগান দিয়ে থাকে। জোগালি রাসেলের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রাসেল নিজেও একজন ইয়াবাসেবী। প্রতিদিন সে ইয়াবা ও নারীর আসর বসায়।
গত দুই বছরের ব্যবধানে রাসেল অবৈধ ব্যবসার বদৌলতে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। তার বাহিনীর কয়েকজনের কাছে রয়েছে অবৈধ অস্ত্র। স্থান ও কালভেদে এরা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ফাকা গুলি ও বোমা ফাটায়। এ বাহিনী জাল-জালিয়াতি করে সাধারণ মানুষের জমি দখল করে। জোগালি রাসেলের সেকেন্ড-ইন কমান্ড দুলাল শিকদার ওরফে টেটা দুলাল স্থানীয় শিল্প কারখানার শ্রমিকদের পিস্তলের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল সেট লুটে নিচ্ছে বলে একাধিক শ্রমিকের অভিযোগ। এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় সময় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে আসছে।
উল্লেখ, গত শনিবার এ বাহিনীর দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় এক ইট ভাটা ব্যবসায়ীর নির্মানাধীন বাড়িতে হামলা চালিয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের টেটাবিদ্ধসহ পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের একটি প্রাইভেটকার ভাংচুর করে গাড়িতে থাকা সাড়ে ৩ লাখ টাকা লুটে নেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দুটি ধারালো অস্ত্র ও চোরাই মটরসাইকেল উদ্ধারসহ দুলাল শিকদার ওরফে ইয়াবা দুলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে রবিবার দুপুরে রূপগঞ্জ থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাহিনীর অন্যতম সদস্য টেটা দুলাল গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনে মামলা হওয়ার খবরে এলাকাবাসী স্বঃস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জোগালি রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাঈল হোসেন দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়েরের কথা স্বাকীর করে বলেন, এ বাহিনীর অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাহিনী প্রধান ও বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।