নারায়ণগঞ্জ কলেজের স্বপন স্যার আর নেই

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (নিজস্ব প্রতিনিধি) : নারায়ণগঞ্জ কলেজের হাস্যোজ্জল অত্যন্ত গুনি শিক্ষক অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী আর নেই। গত ২৫ জুন শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থিত ইসলাম হার্ট সেন্টার নামে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে এ মৃত্যুকে স্বাভাবিক মেনে নিতে পারছেনা তার পরিবার ও সহকর্মীরা। তাদের অভিযোগ হাসপাতাল র্কতৃপক্ষের অবহেলা ও ত্রুটির্পূণ চিকিৎসার কারনেই এ মৃত্যু হয়েছে।

প্রয়াত অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তীর স্ত্রী জানায়, ২৫ জুন শনিবার সন্ধ্যায় একই কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও প্রতিবেশী নাসির স্যারের বাসায় অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে ইফতার করছিলেন তিনি। এরপর বাসায় ফিরার পথিমধ্যে হঠাৎ অস্বস্তি অনুভব করে এবং বুকে প্রচন্ড ব্যাথা করছে বলে বমি করে দেয়। পরে তার সহকর্মী ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আমি সহ তাকে ইসলাম হার্ট সেন্টারে নিয়ে যাই। বেডে শুয়ে দিলে তখনও তিনি কথা বলছেন আর বলছেন এখন একটু ভালো লাগছে। আমি মাথায় একটু জল দিয়ে বাতাস করি। তারপর দায়িত্বরত ডাক্তাররা তার প্রেশার মেপে দেখে আমাদেরকে আশ্বস্ত করে নরমাল আছে। তারপর কিছুক্ষন পরই নার্সরা ইসিজি করে এবং পানির সাথে অনেকগুলো ঔষধ খাওয়ে দেয়। এরপর রাত ৮টায় ইসলাম হার্ট সেন্টারের মালিক ডা: নুরুল ইসলাম দেখে তাকে একটি ইনজেকশন পুশ করে শুয়ে রাখে। এবং তিনিও আশ্বস্ত করে জানান স্বপন চক্রবর্তী আউট অব ডেঞ্জার। তাকে স্যুপ খাওয়ানো হয়েছে?

আরও অভিযোগ করে বলেন, তাদের পরার্মশ অনুযায়ী আমারা তাকে বাসায় না নিয়ে এখানেই ভর্তি করালাম। এবং ২২শ টাকার ইনজেকশনের দাম তারা ৫ হাজার টাকা রাখে। এরপর আইসিইউতে নিয়ে রাখা হলে একজন জুনিয়র ডাক্তারই তাকে দেখা শোনা করছে। রাত ১২টায় তার পেট ফুলে যাচ্ছিল।এবং প্রেসার ৬০ এ নেমে আসে। এরআগেও টয়লেট করতে চেয়েছিল তারা নিষেধ করায় আর করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তিতে জুনিয়র ডাক্তার নার্সকে ডাঃ নুরুল ইসলামকে খবর দেয়ার জন্য বলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাঃ নুরুল ইসলাম তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করার জন্য বলেন। অথচ এরআগে স্বপন চক্রবর্তীর অবস্থা নিয়ে আমি ও তার সহকর্মীরা একাধিকবার ঢাকা নিয়ে যাওয়া লাগবে কিনা বললেও তারা তখন স্বাভাবিক বলেই আশ্বস্ত করে যান।

এক পর্যায়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা, খাম খেয়ালীপনা আর অবহেলার কারনেই আমার স্বামী স্বপন চক্রবর্তীকে হারিয়েছি। আজ আমি মহীলা বিধায় এটা সম্ভব হয়েছে। কোন শক্তিশালী মানুষ বা পুরুষ লোক হলে এ কাজ করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আর ডাক্তাররা পার পেয়ে যেত না। এটা কি হার্ট সেন্টার না ডেড সেন্টার?! এখান থেকে বেশীরভাগ রোগীদেরই মৃত হয়ে বের হতেই দেখেছি এবং শুনেছি।

নারায়ণগঞ্জ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক রুমন রেজা বলেন, আমারা যখন সহকর্মী স্বপন চক্রবর্তীকে ইসলাম হার্ট সেন্টারে নিয়ে যাই তখন আমরা বলেছিলাম উন্নত চিকিৎসার কথা। কিন্তু ডাঃ নুরুল ইসলাম আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন তেমন কিছু হয়নি। রাত বারোটায় যখন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় তখন তিনি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু স্বপন দা তখন আর নেই। তিনি বলেন বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত। তার মতো একজন মেধাবী শিক্ষককে আমরা হারালাম।

এ ব্যাপারে ইসলাম হার্ট সেন্টারের মালিক ডাঃ নুরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলে ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের পরিচালনা পরিসদের সদস্য ডাঃ শাহনেওয়াজ চৌধুরী জানান, ডাঃ নুরুল ইসলামের মোবাইল নষ্ট। স্বপন চক্রবর্তীর যদি ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে তাহলে বিএমএ ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্র্তী সরকারী তোলারাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নারায়ণগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জীবন কানাই চক্রবর্তীর ছেলে। প্রয়াত স্বপন চক্রবর্তী উল্লেখিত কলেজের সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। র্দীঘ ২৫ বছর যাবত তিনি সুনাম অক্ষুন্ন রেখে উক্ত কলেজে কর্মরত ছিলেন। র্বতমানে তার মরদেহটি বারডেম হিমাগারে সংরক্ষিত রাখা আছে। নিকটতম আত্মীয় ও সকলকে নিয়ে আগামী ২৯ জুন তার মরদেহটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে তার পরিবার সুত্রে জানা গেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৫৮ বৎসর। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে।বড় ছেলে চাকুরিরত ও ছোট ছেলে ও মেয়ে অধ্যায়নরত আছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত