নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বাবুরাইলের নৃশংস ৫ খুনের ঘটনায় নাজমা ও শাজাহানকে খুঁজছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে সদর মডেল থানা এবং জেলা ডিবি পুলিশের একাধিক টিম রাজধানী এবং ঢাকার বাহিরে একাধিক স্থানে অভিযানে চালিয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। নির্ভরযোগ্য এই সূত্রটি জানায়, মূলত ভাগিনা মাহফুজের দেয়া তথ্য এবং মামলাবাদী নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুলের বক্তব্যের ভিত্তিতে নাজমা এবং শাজাহানকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। পুলিশ পাওনা টাকার জটিলতা নিয়ে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে এমন ধারণা থেকে নাজমা এবং শাহজাহানকে মামলার আসামী করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে নাজমা এবং শাজাহানকে গ্রেফতার করতে পারলে নৃশংস ৫ খুনের ক্লু উদ্ধার হতে পারে।
এদিকে বাবুরাইলের ৫ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিন। সোমবার সকালে তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদেরএ কথা বলেন। এসপি বলেন, আমরা সকল বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত পরিচালনা করছি। তদন্তের স্বার্থে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। ঘটনার পিছনে অনেক গুলো কারণ চলে আসছে। সুস্পস্ট পয়েন্ট না ধরে কে এই হত্যা কান্ডের সাথে ঝড়িত তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা কারা হচ্ছে এ ঘটনায় সামাজিক কারণ হতে পাড়ে কোন কারণ থাকতে পাড়ে। সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাকে গ্রেফতার করা হবে আর কাকে হবে না তার সুর্নিদিষ্ট নেই, আমরা যার নিকট প্রশ্নের পয়েন্ট খুঁজে পাবো তাকেই মামালার অগ্রগতির জন্য জিজ্ঞাশা বাদ করবো। তিনি আরো বলেন, সংখ্যার দিক থেকে অনেক ও নির্মম ঘটনা ঘটলেও আইন শৃঙ্খলার কোন অবনতি ঘটেনি।
এদিকে গ্রেফতারকৃত আসামী মাহফুজকে ৭দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ। হত্যার ক্লু উদ্ধারে আরো ব্যপক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচ টায় কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক আবুল খায়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে আসামী মাহফুজকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এর পূর্বে কোর্ট দারোগা গোলাম হোসেন মামলার বিবরণ উপস্থাপন করার পাশাপাশি কোর্ট ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান নির্মম হত্যাকান্ডের বিবরণ আদালতকে জানান । আদালতের বিজ্ঞ বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ৫ খুনের আসামী মাহফুজের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।
সূত্র থেকে জানা যায়, শনিবার শহরের বাবুরাইল এলাকার আশেক আলী ভিলার নীচ তলায় সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যের কোন এক সময় আজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা গৃহকর্তা শফিকের বাসায় অবস্থান করে নির্বিগ্নে গৃহকর্তী তাসলিমা (৩৫), তার শিশু সন্তান শান্ত (১০), সুমাইয়া (৭), ভাই মোরশেদুল (২২) ও ঝাঁ লামিয়া বেগম (২০) কে শ্বাসরোধ ও পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যাকান্ড নিশ্চিত করে বাসায় নতুন তালা দিয়ে পালিয়ে যায় । ঘটনার পর গৃহকর্তা শফিক ও পরিবারের লোকজন মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে আশেক আলী ভিলায় এসে বাড়ীওয়ালার অনুমতি নিয়ে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে পাঁচ জনের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় ।
এমন নির্মম হত্যাকান্ডে খবর ছড়িয়ে পরলে সারাদেশে তোলপড়ের সৃস্টি হয়। গত রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করে গৃহকর্তা শফিক। মামলায় শফিক নিজ ভাগিনা মাহফুজ ও রাজধানীর কলাবাগান এলাকার নাজমা, শাহজাহান, বাহাদুর, বাদশা ও বাদলসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখিতদের সন্দেহ করা হয় বলে জানানো হওয়ার আগেই হতভাগা ৫ জনের লাশ উদ্ধারের পূর্বেই আটক করে থানায় পাঠানো হয় ভাগিনা মাহফুজকে । ভাগিনা মাহফুজ ইতিপূর্বেও মামী লামিয়া বেগমকে নানাভাবে যৌন আবেদন করে কু প্রস্তাব দিলে এই ঘটনায় কয়েক দফায় পারিবারিকভাবে শালিস করে জুতাপেটা করে স্বজনরা। বাবুরাইল বৌ বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী দেলোয়ার ওরফে দেলুর বাড়ীতে এমন শালিসী বৈঠকের আয়োজন করে দেলু ও তার স্ত্রী।
অপরদিকে কলাবাগান এলাকার কয়েকজন পাওনাদার নিহত তাসলিমা, মোরশেদুল ও মামলার বাদী শফিককে নানাভাবে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে। আসামী মাহফুজকে আটক করার পর আরো তথ্য উৎঘাটন করতে সদর থানা, জেলা ডিবি ও ফতুল্লা থানা পুলিশের একটি শক্তিশালী যৌথ টিম কলাবাগানের নাজমা, শাহজাহানসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করতে রাজধানীতে অভিযান চালায় । রোববার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর মামলাটি হস্তান্তর করা হয়। এর আগে পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভাগিনা মাহফুজ হত্যাকান্ডের ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করে।