মালয়েশিয়ায় আমার প্রথম গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( গৌতম রায় ) : এ ছবিটি ১৯ বছর আগে তোলা সেন্টুলে শ্রমিকনেতা মরহুম গোলাম আহাদের বাসায়। বয়স তখন ৩৩ বছর। এই ছবিটি হুট করে পেছনে নিয়ে গেল আমাকে। আজ আহাদ ভাই নেই। আমি একা। আইসিসি ট্রফির ফাইনাল সেদিন। প্রতিপক্ষ কেনিয়া। বাংলাদেশকে সমর্থনে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের ছেলেরা গাড়ী জাতীয় পতাকা নিয়ে আসবে কিলাত ক্লাব মাঠে। কয়েকদিন ধরেই আমাদের প্রস্তুতি ছিল। খেলা শুরুর আগেই ষ্টেডিয়ামের গ্যালারীতে আমরা প্রায় ৫০ জন উপস্থিত। বাংলাদেশ ব্যাটিং এর সময় চার ছক্কায় আমরা উল্লাস করছিলাম। গ্যালারীর পাশে ছিল পুলিশ। আজকের বাংলাদেশীরা অনেকেই জানে না ১৯৯৬/১৯৯৭ সালে এদেশে আমাদের উপর কত ঝড় বয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু বাংলাদেশবিরোধী প্রোপগন্ডা, হত্যা, নির্যাতন। এর মোকাবেলা করে আমি আর গোলাম আহাদ মালয়েশিয়া প্রশাসনে দেন দরবার করেছি অনেক। ক্রিকেট খেলার মাঠেও সেই বৈষম্য এলো। বাংলাদেশ ফাইন্যাল খেলছে সেটা সহ্য হচ্ছিল না অনেকের। গ্যালারীতে বার বার কটমট করে তাকাচ্ছিল মালয় পুলিশ। মাঠভর্তি বাংলাদেশী সমর্থকদের উল্লাসে যেন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কিন্তু যখন বাংলাদেশ টিম (সম্ভবত আকরাম ব্যাট করছিলেন) ছক্কা মারলো তখন বাংলাদেশ পতাকা নিয়ে আমি লাফিয়ে উঠলাম। সহ্য হলো না পুলিশের। গ্যালারীর ভেতরে ঢুকে আমাকে বের করে আনা হলো। শত শত সমর্থকের কোন বাধা, প্রতিবাদই শোনেনি পুলিশ। পুলিশকে বললাম খেলাটা দেখার সুযোগ দিতে। কিন্তু না। নিয়ে গেল থানা হাজতে। বিনা অপরাধে হাজতবাস। হাজতে আছি কষ্ট নেই। কিন্তু খেলার রেজাল্ট জানার জন্য ছিলাম পাগল। এক পুলিশ জানালো বাংলাদেশ জিতেছে। হাজতেই চোখের আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়লো। সমগ্র বাংলাদেশ যখন আনন্দের বন্যায় ভাসছিল আমি তখন বন্দী ছিলাম মালয়েশিয়ার হাজতে। পরদিন সকালেই আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো। কিন্তু জানলাম না কি আমার অপরাধ। বিশৃংখলা তো করিনি। সমর্থকরা তো এতটুকু আনন্দ করবেই। আর দেশটা যখন বাংলাদেশ তখন বাঁধভাঙ্গা ভালবাসা জাগবেই। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি গ্রেফতার হয়েছি, লাঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রই আমাকে থামাতে পারেনি। কেউ কোনদিন মনে রাখেনি আমার এই ত্যাগ, এই দেশপ্রেমের কথা। কারন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীরা আসে চলে যায়। কিন্তু সেদিনের সেই গ্রেফতারটি ছিল আমার জীবনের এক গৌরবের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে আমার সেদিনের কথাটি লেখা থাকুক বা না থাকুক আমি ধন্য যে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও মাতৃভূমির জন্য আমার সেই ছোট্ট ভালবাসা দেখাতে পেরেছি। সেদিনই রচিত হয়েছিল দেশের ক্রিকেটের নতুন অধ্যায়। আজো সে স্মৃতি আমাকে কষ্ট আনন্দ দুটোই দেয়। এই ছবি দেখে ধূলোপড়া স্মৃতি চোখে ভেসে উঠে বার বার। কেন জানি দু’চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও খবর

পঠিত