নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ (স্টাফ রিপোর্টার) : নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগে ওসমান পরিবারকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করেছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নামক সন্ত্রাসীরা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন আলীরটেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ওরফে ঘী জাকির এবং তার পালিত সন্ত্রাসী ক্যাডার ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার রওশন আলী ওরফে নওশাদ আলী ও পাঁচ ভাই।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ওসমান পরিবারের সহচর হয়ে নারায়ণগঞ্জের হাফেজ সোলাইমান হত্যা মামলার আসামি এই রওশন ওরফে নওশাদ আলী মেম্বার। ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও হত্যা মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা নিজ এলাকায়। এখনো তাদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত এলাকাবাসী। যে কারনে সরকারের অপারেশন ডেভিল হান্ট নামক যৌথ বাহিনীর অভিযানে অনতিবিলম্বে ওদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে প্রসাশনিক বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছে এলাকাবাসী। এতদসত্ত্বেও কোন্ রহস্যের কারনে এখনো ওরা গ্রেফতার হচ্ছে না এই নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ বোদ্ধা সমাজ।
তথ্যমতে জানা যায়, রওশন আলী ওরফে নওশাদ আলী মেম্বার ও তার সহযোগী পাঁচ ভাই যথাক্রমে রতন, জুলকার, ফারুক, আলমগীর, সাইফুল মিলে ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় আলীরটেক ইউনিয়নকে নারায়ণগঞ্জের বুকে আরেকখণ্ড নারায়ণগঞ্জ হিসেবে পরিচিত করিয়ে এক ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরাচারের আমলে ওসমান পরিবারের দোসর হয়ে সেলিম ওসমানকে স্বর্ণের নৌকা, অয়ন ওসমানকে কোটি টাকার গাড়ি উপহার দিয়ে সম্পর্ক করে। এই সম্পর্ককে অপব্যবহার করে আলীরটেক ইউনিয়নের গরিব ও নিরীহ মানুষের চাষের ও বসতবাড়ির জমি সহ সরকারি খাস জমি জবরদখল করে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় হাফেজ সোলাইমান হত্যার সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত এজহারভুক্ত আসামি রওশন আলী ওরফে নওশাদ আলী মেম্বার ও তার ভাই রতন।
৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ থেকে শামীম ওসমান স্বপরিবারে পালিয়ে গেলেও অবৈধ টাকার বিনিময় করে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এই রওশন মেম্বার সহ তার ভাই ও সহযোগীরা । এতে করে আলীরটেক ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি হয়েও এখনো নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে মেম্বার তার দলবলের সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে করে জনমনে প্রশ্ন প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে মেম্বার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও আধিপত্য বিস্তার করছে। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রোকের চরের হতদরিদ্র জেলে কাদের মিঞার ৬ ছেলে ও ৪ মেয়ে নিয়ে খুব অভাব অনটনে নদীতে মাছ ধরে কোনমতে এক বেলা খেয়ে দুবেলা না খেয়ে চলতো তাদের পরিবার। আরো জানা যায় তার বাবা অভাবের তাড়নায় তিন বেলা খাবার জোগাতে না পারায় দ্বিতীয় ছেলে রওশন আলী ওরফে নওশাদ আলীকে মুন্সীগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসায় কাজের ছেলে হিসেবে দিয়ে দেয়। আত্মীয়ের বাসা থেকে টাকা চুরি করে বিদেশ গিয়েও কোন উন্নতি করতে পারেনি। রওশন আলীর ছোট ভাই জুলকারনাইন এলাকায় ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে মাদ্রাসা করবে বলে এলাকার সাধারণ মানুষ ও দেশ-বিদেশ থেকে বিশল পরিমাণ টাকার আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। এছাড়া হজ এজেন্সির নামে হাজীদের কাছ থেকেও প্রচুর পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে মামলা খেয়ে জেলও কেটেছেন তিনি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্রোকের চর গ্রামে বিশাল এরিয়া নিয়ে তিন তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি রয়েছে তারা। এছাড়া বাজারে পাশাপাশি তিনটি দ্বিতলা বিশিষ্ট ভবন, বুড়িগঙ্গা নদীর সরকারি খাস জমি সহ গ্রামের নিরীহ মানুষদেরকে জিম্মি করে অবৈধভাবে জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। আর এই ইট ভাটার জন্য মাটি সরবরাহ করতেন গ্রামের কৃষি জমি জবরদখল করে ও শামীম ওসমানের ভয় দেখিয়ে। নগরীর মাসদাইর কবরস্থানের পাশের মেইন রোডের সাথে বিশাল এরিয়া নিয়ে ১২ তলা বিশিষ্ট নির্মাণাধীন ভবন, মুসলিম নগর নয়াবাজারে একটি সাত তলা বিশিষ্ট ভবন ও আরেকটি তিন তলা ভবন ও মার্কেট, নাসিমপুরে আলীর ইউনিয়নের জাকির চেয়ারম্যানের সাথে মিলে গড়ে তুলেছেন মার্কেট ও বাড়ি। আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের পাশের ১০০ বিঘা জমি দখল করেছেন জোরজবরদস্তি করে। এছাড়া কক্সবাজারের রয়েছে ৬ তলা বিশিষ্ট আলিশান রিসোর্ট। গ্রামবাসীর কাছ থেকে রওশন আলী ওরফে নওসাদ আলী মেম্বার সহ তার সহযোগী পাঁচ ভাই সম্পর্কে আরো জানা যায়, তারা ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় বিদেশী মদ, হিরোইন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলের পাইকারি ব্যবসা এবং সরকারি কোষাগরের অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ জায়গা দখল করে অল্প সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। একজন মেম্বার হয়ে হঠাৎ করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়াকে গ্রামবাসী বলছেন রওশন আলী মেম্বার কি এমন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে যে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেল।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক গ্রামের অনেকেই জানান, মেম্বারে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশী মদ, হিরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল সহ অবৈধ বিদেশী স্বর্ণ চোরাচালনের ব্যবসার সাথে জড়িত। টাকার প্রভাবে খাঁটিয়ে এর আগে এলাকায় তিনটি হত্যা মামলা ধামাচাপা দেয় এবং জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর ওসমান পরিবারের সদস্য শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনীকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ ও নিজ হাতে তুলে দেন রওশন আলী মেম্বার।
এসময় তারা আরো জানান, টাকা দিয়ে বিএনপি’র কিছু নামধারী নেতাদের আত করে পুলিশ প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে এখন এলাকায় ত্রাস হয়ে সাধারণ গ্রামবাসীর জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গ্রামবাসীর পুলিশ প্রশাসনের নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি)র কাছে দাবি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামি রওশন আলী ওরফে নওশাদ আলী মেম্বার সহ তার সহযোগী পাঁচ ভাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে ন্যায় বিচার করার আহ্বান জানান।