বাসভাড়া কমানোর দাবিতে একমত রাজনৈতিক দলগুলো

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের বাস ভাড়া কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। বাসভাড়া কমানোর দাবিতে হরতালসহ টানা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। গণদাবির এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও।

যাত্রী অধিকার ফোরামের ভাষ্য, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের দূরত্ব ও ডিজেলের মূল্য অনুযায়ী এ রুটের বাস ভাড়া ননএসি ৪৫ টাকা, এসি ৬০ টাকা এবং বিআরটিসি ননএসি ৪০ টাকা ও এসি ৫৫ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বাস মালিকদের বিভিন্ন পর্যায়ে ও রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে বাধ্য হওয়ায় তারা অতিরিক্ত ভাড়া ধার্য করে এসেছেন। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই পরিস্থিতি বদলেছে। তাই বাস মালিকরা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারে এবং এতে বাস ভাড়া কমানো সম্ভব।

বাসভাড়া কমানোর দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর লিফলেট বিতরণের মধ্য দিয়ে টানা কর্মসূচির সূচনা করেছে যাত্রী অধিকার ফোরাম। ভাড়া না কমালে আগামী ১৭ নভেম্বর অর্ধবেলা হরতাল পালন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।

এই ফোরামে রাজনৈতিক দল গণসংহতি আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, নাগরিক কমিটিসহ নাগরিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কয়েকটি সংগঠনের নেতারা সম্পৃক্ত রয়েছেন। তবে গণমুখী এই আন্দোলনের সাথে ঐকমত্য রয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত না হলেও এ দাবির পক্ষে তাদের সমর্থন রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এ আন্দোলনটি জনগণণের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন। আমরা এ আন্দোলনের সাথে একমত। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের দূরত্বের তুলনায় বাস ভাড়া বেশি রাখা হয়। এ ছাড়া পরিবনের চাঁদাবাজি একটি ওপেন সিক্রেট। যেহেতু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন চাঁদাবাজরা নেই, সেহেতু বাস ভাড়া কমানো সম্ভব এবং কমানো উচিত। তবে আমার চাই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হোক। প্রশাসনের উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বাস ভাড়া নির্ধারণ করা। জনগণের স্বার্থে প্রশাসন এখানে হস্তক্ষেপ করবে বলেই কামনা আমাদের।
জনস্বার্থের যেকোনো আন্দোলনের সাথে আমরা আছি। যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ প্রয়োজন, প্রতিবাদ হচ্ছে। যদি মনে হয়, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা দরকার, আমরা অংশগ্রহণ করবো’, যোগ করেন বিএনপির এ নেতা।

জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার আমীর মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার বলেন, ‘(বিগত সময়ে) নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনগুলো নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাস মালিকরাও তাদের ইশারাকে প্রধান্য দিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মালিক ও যাত্রী উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে ভাড়া নির্ধারণ করা উচিত। সকলের সাথে আলোচনা করে যেটা যৌক্তিক সেটা নির্ধারণ করতে হবে। এক সময় বাস মালিকদের বিশেষ একটি পক্ষকে চাঁদা দেয়া লাগবে। এখন তো এমন কিছু আছে বলে আমাদের জানা নাই। তাহলে ভাড়া বেশি কেন হবে সেটাও প্রশ্ন। তাই বাসভাড়া কমানোর যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া উচিত।

বাসভাড়া কমানোর দাবির সাথে ঐকমত্য পোষণ করে ইসলামী আন্দোলনের বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সাথে বসেছিলাম। আমরা তাদের দাবির সাথে একমত। আমরাও চাই বাসের ভাড়া কমানো হোক। তবে আমাদের মনে হয় এই আন্দোলনের সাথে আরও জনসম্পৃক্ততার প্রয়োজন আছে। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম তাদের আন্দোলনের সাথে এখনো ওইভাবে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। তাদের যৌক্তিক দাবির সাথে আমরা আছি, থাকবো।

খেলাফত মজলিসের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মামুন বলেন, স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় যতটুকু দেখলাম এবং জেনেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, এটি একটি যুক্তিসঙ্গত ও জনস্বার্থের আন্দোলন। এটা আমাদের সকলের জানা যে, পূর্বের পরিস্থিতিতে বাস মালিকরা স্থানীয় এমপিদের অবৈধভাবে টাকা দিতে অর্থাৎ চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন। বর্তমান সময়ে তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে না। তাই বাস ভাড়া কমানো সম্ভব এবং কমানো উচিত বলে আমি মনে করি। তাই আমরা এ আন্দোলনকে সমর্থন করি।

তবে দেশের এমন পরিস্থিতিতে হরতালের মত কঠোর কর্মসূচি দেয়া ঠিক হচ্ছে কিনা তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন সিরাজুল মামুন।

তিনি বলেন, আমরা এর সমর্থন করি। তবে এ বিষয়ে আমাদের খুব বেশি জানা নেই। যারা উদ্যোগ নিয়েছে, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম; তারা আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তবে আমাদের এ আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ আছে।

গণঅধিকার পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নাহিদ হাসান বলেন, সারাদেশে বাস মালিকরা মুনাফার লোভে সিন্ডিকেট করে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীদের পকেট কাটছে। বাস ভাড়া কমানোর যে দাবি, আমরা এর সাথে একমত। আমরা মনে করি, প্রশাসনের উচিত, উদ্যোগ নিয়ে সারাদেশের বাস ভাড়া পুনরায় নির্ধারণ করা। এ বিষয়ে আমি নূরুল হক নূর ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। আমরা জনস্বার্থের আন্দোলনে সব সময় ছিলাম, আছি। এ আন্দোলনে থাকবো।

add-content

আরও খবর

পঠিত