নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে সারাদেশের মত নারায়ণগঞ্জেও নিষ্ক্রিয় ছিল বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্নস্থানেই বেড়েছে অপরাধ প্রবণতা ও দখল রাজত্ব। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ব্যবহার করে অনেকেই ইতমধ্যে দখলে নিয়েছে বিভিন্ন হাট-ঘাট। আর এতে করে সৃষ্টি হয়ছে দখল নৈরাজ্য।
এরই মধ্যে ঘাটগুলোতে ঘুরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ ১ নং ঘাট থেকে শুরু করে ৫নং খেয়া ঘাট এবং টানবাজার খেয়া পারাপারের ঘাটটি দখলে নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। পুর্বে যারা ইজারাদার ছিল তাদের অনেকেই বিগত সরকারী দলের লোক হওয়ায় গাঁ ঢাকা দিয়েছে। তাই দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যদিও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ইজারাদারের সাথে আলোচনা করে ঘাট পরিচালনা করবে নতুন দখলদাররা। এমনটা দাবিও করেছেন বর্তমানে পরিচালনাকারী বেশ কয়েকজন।
তবে নতুন করে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর আবারো পুলিশ সদস্যরা কাজে ফিরতে শুরু করায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের দখলদারিত্ব কিংবা কোনো চাঁদাবজির মত অপরাধ এবার সংগটিত হতে দেয়া হবে না বলে নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক প্রশাসনিক সূত্র।
নারায়ণগঞ্জের খেয়া পারাপারের ঘাটগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিলে একাধিক সূত্র জানায়, চারারগোপ খেয়া পারাপারের ঘাটটি শিবলীর নামে ইজারা থাকলেও তাদের মধ্যে সমঝোতায় পরিচালনায় রয়েছেন সুখন ও তার লোকজন। ১নং সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটের ইজারদার নিয়েছিল রিতা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। যার অন্তরালে নাম আসে শহর যুবলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনুর। তবে বর্তমানে পরিচালনায় রয়েছেন দিদার খন্দকার। যিনি সাবেক ছাত্রদল নেতা কারাবন্দি জাকির খানের লোক হিসেবেই পরিচিত। হজিগঞ্জ-নবীগঞ্জ খেয়া ঘাট ইজারা পেয়েছিল সাইফুল ইসলাম রিয়াল। তবে এখন পরিচালনায় নাম এসেছে ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জমশের হোসেন জন্টুর ছেলে বাবু ও সাহেদ, এছাড়াও বরফকল ঘাটে স্বপন ইজারাদার হলেও, চালাচ্ছে বাবু ও সাহেদের লোকজনই। এছাড়াও টানবাজার ঘাট ইজারা রয়েছে এইচ এম রাসেলের নামে। যিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তবে এখন পরিচালনায় এক বিএনপি নেতার নাম উঠে এসেছে। তবে দায়িত্বে রয়েছেন আব্দুল্লাহ, জনি ও হারুন।
সরেজমিনে এ বিষয়ে কথা হলে টানবাজার খেয়া পারাপারে টাকা উত্তোলনকারী হারুন নামে একজন জানায়, এই ঘাটটি ইজারা রয়েছে এইচ এম রাসেল নামে একজনের। তবে এখন এ ঘাটটি যার ছিলো তার সাথে আলোচনা হয়েছে তারা আামাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। তাই এ ঘাটটি এখন তারা নিয়ন্ত্রণ করছ।
এ বিষয়ে জানতে টানবাজার খেয়া ঘাটের ইজারাদার এইচ এম রাসেলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি ইজারা নিয়ে ঘাটটি পরিচালনা করতাম। যা এখন পুরোপুরি বেদখল। আমরা এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছি। তারা যদি ঘাট বুঝিয়ে দেয় অবশ্যিই আমরা ঘাট পূণরায় পরিচালনা করে যাবো। কারো সাথে ঘাট বুঝিয়ে দেয়ার মত আলোচনা হয় নি। এটা মিথ্যা কথা। আমাদেরকে প্রশাসনের সহযোগীতায় ঘাট বুঝিয়ে দেয়া হোক। কারণ আমরা নিরাপত্তাহীণতায় রয়েছি।
ঘাটগুলো দখলের বিষয়ে চারারগোপ খেয়াঘাটের ইজারাদার শিবলীর সাথে কথা বলতে একাধিকবার কল করা হলে সংযোগ স্থাপন না হওয়া কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার এক ঘনিষ্ঠজন জানান, ঘাটটি শিবলীর নামেই ইজারা রয়েছে। তবে তিনি পরিচালনার জন্য অন্যদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে ১নং খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুলের মুখোমুখী হতে যাচ্ছেন কারাবন্দী সাবেক যুবদল নেতা জাকির খানের লোকজন এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃত ইজারাদার যুবলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনুকে অবগত না করে দিদার খন্দকারের এমন ঝটিকা ঘাট দখলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেলিম ওসমানকে ঘাট দখলে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সাজনু। দখলের পরও ইজারা দায়িত্ব নেয়ার তিন দিন অপেক্ষার পর বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে বহিস্কৃত আতাউর রহমান মুকুলকে ভারপ্রাপ্ত দেয়া হয়েছে। এমন সংবাদে জাকির খানের পক্ষে থাকা দিদার খন্দকার মঙ্গলবার রাতে মুকুলকে ঘাট দায়িত্ব থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন এবং ঘাটটি চালাতে পারবেন না বলে জানান।
এরআগে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত দিদার খন্দকারের অধীনে ঘাটটি পরিচালনা করা হচ্ছে। ঘাটের অর্থও দিদার নিয়ন্ত্রণে নেয়া হচ্ছে বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে। ইজারাদার থেকে পাওয়ার নেয়া নিয়ে মুকুলের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন জাকির খান এমন আভাস পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। ঢাকা অফিসেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। খুব শিঘ্রই এর সমাধান করা হবে। কেউ অবৈধভাবে ঘাট চালাতে পারে না। সে অধিকার নেই। আমরা এটার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।