নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় রাতভর বাদি ও স্বাক্ষিদের আটক করে রেখে হেনস্তা করার অভিযোগ তোলেছে ভুক্তভোগীরা। গত রবিবার ২রা জুন এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সোনারগাঁ থানার সাবেক ওসি ও এসআই এর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদি আনিসুর রহমান আলমগীর, স্বাক্ষী সৈয়দ মশিউর রহমান শামীম ও স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপনকে থানায় ডেকে নিয়ে যায় থানা পুলিশ। এরপর রাতভর সেখানইে আটক রেখে সোমবার ৩ জুন সকালে তাদের আদালতে নিয়ে যায়। এতে করে শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানান ভূক্তভোগীরা। তবে এটিকে আদেশ হিসেবে পালন করা হয়েছে বলেই দাবী করেছের এস.আই ইমরান।
এদিকে ভুক্তেভোগীদের দাবী, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত ১৯ মে বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু স্বাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানে আদালতের নির্দেশ থাকার পরও সোনারগাঁ থানা পুলিশ স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে ২ জুন রবিবার বিকাল ৫টার দিকে সোনারগাঁও থানার এসআই ইমরান ও পুলিশ সদস্যদের দিয়ে বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর, স্বাক্ষী সৈয়দ মশিউর রহমান শামীম ও স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপনকে থানায় ডেকে নিয়ে সারারাত আটকে রেখে প্রচন্ড মানসিক নির্যাতন করে। এসময় বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর অসুস্থ্য হয়ে গেলে থানা পুলিশ সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ঢাকা রেফার্ড করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপন জানায়, ৩ মে সোমবার আদালতে আমাদের মামলার স্বাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ। আমরা আদালতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু ওসি সাহেব মামলার বিষয়ে আমাদের সাথে কথা বলবেন এসআই ইমরানের এমন কথা বলে বিকালে থানায় এনে আমাদের আটকে রেখেছিলেন। সেখানে রাতে না খেয়ে, আমি (স্বপন) ডায়বেটিকের রোগী। প্রতিদিন দুই বেলা ইনস্যুলিন নিতে হয়। অথচ থানায় সারারাত মশার কামড় খাইয়ে আর ক্ষুধার্ত রেখে পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট জানায়, পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত মে মাসের ১৯ তারিখ বাদী বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তারপরও সোনারগাঁ থানা পুলিশ সাক্ষীদের গ্রেফতার করে সারারাত আটক রেখে যে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করেছে তা শুধু আইন পরিপন্থী নয়, তা একটি অপরাধ। বাদী ও ম্বাক্ষীগন এই বিষয় নিয়ে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বা পুরো বিষয় নিয়ে প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিট করতে পারবে।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আরেক আইনজীবী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ একটি মামলার স্বাক্ষীদের সারারাত আটক করে আদালতে উপস্থাপন করেছে এমন একটি ঘটনা দেখাতে পারবে না। এই মামলায় সোনারগাঁ থানা পুলিশ যা করেছে তা কল্পনাতেও সমর্থন করা যায় না। এক কথায় ক্ষমতার চরম অপব্যবহার। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্হা নেয়া উচিত।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার এসআই ইমরান বলেন, পুলিশ আদালতের নির্দেশ পালন করেছে মাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, বিগত দিনে তারা স্বাক্ষী না দেওয়ায় মাননীয় আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন। আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার চিলারবাগ এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনিসুর রহমান আলমগীর বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ নারায়গঞ্জ এ সোনারগাঁও থানার তৎকালীণ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ আলম ও সেকেন্ড অফিসার সাধন বসাকের বিরুদ্ধে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহন করে বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধানে ঘটনা প্রমান হলে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। ওই মামলায় আগামীকাল ৩ জুন আদালতে স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ আছে। গত ডেইটে এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী বাবুল বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।