নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : বড় ধরনের সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে বুধবার (৮ মে) উপজেলার ৫৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ চলাকালীন বা ফলাফল ঘোষণার পরও কোনো প্রকার সহিসংতার ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচন নিয়ে অনিয়মেরও কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী করেননি। আলোচিত এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল তা সফলভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছেন বলে অভিমত স্থানীয়দের। এজন্যে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, র্যাব ১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দসহ বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এবার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকায় বন্দর উপজেলা ছিল প্রচার-প্রচারণায় সরগরম। এ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। ভোটারদের মধ্যেও একধরনের উদ্দীপনা ছিল। নির্বাচনকে ঘিরে প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দুই সংসদ সদস্যের সক্রিয়তা আলোচনায় আলাদা মাত্রা যুক্ত করে। যদিও তাদের পছন্দের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
শিল্পাঞ্চলখ্যাত এই জেলায় রয়েছে পাঁচটি উপজেলা। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রথম ধাপে সদর ও বন্দর উপজেলার নাম ঘোষণা করা হলেও মামলা জটিলতায় সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। ফলে প্রথম ধাপে জেলায় কেবল বন্দর উপজেলা নির্বাচন হয়। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে সোনারগাঁ, রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। কিন্তু নানা কারণেই বন্দর উপজেলা নির্বাচনের দিকে নারায়ণগঞ্জবাসীর দৃষ্টি ছিল। দুই ধাপের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য এই উপজেলার নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করেছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনে নিরপেক্ষ অবস্থান প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন তাদের ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করেছে। ফলে সংসদ নির্বাচনের পর বেশ আলোচিত এই বন্দর উপজেলা নির্বাচনেও নিরপেক্ষতা ও সুষ্ঠুতা বজায় রাখা ছিল প্রশাসনের ইতিবাচক ইমেজ রক্ষার চ্যালেঞ্জ। দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যখন ভোটাররা অনেকটা ভোটকেন্দ্রবিমুখ, তাতে এ উপজেলা নির্বাচনের সমাপ্তির প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় ধাপে আরও তিন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সাধারণ ভোটারদের আস্থা তৈরি করবে। এমনটাই আশা ছিল সকলের। যদিও, স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের ঘোষণা ছিল, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তারা বদ্ধপরিকর। ভোটের দিন বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্ট্র্যাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবিও মোতায়েন ছিল।
শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। ভোটগ্রহণের দিন কিছু জায়গায় পোলিং এজেন্টদের হুমকি, জালভোট ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও বড়ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। মোটা দাগে কোনো অনিয়মের কথাও শোনা যায়নি। এমনকি ফলাফল ঘোষণার পরও কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হয়নি এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
বন্দর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আনারস প্রতীকের মাকসুদ হোসেন। এছাড়া, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মাইক প্রতীকের মো. আলমগীর এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন ফুটবল প্রতীকের ছালিমা শান্তা।
ফলাফল অনুযায়ী, জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন ২৯ হাজার ৮৭৩ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দোয়াত-কলম প্রতীকের এমএ রশিদ ১৪ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রশিদ গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচন হন।
এছাড়া, দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) চিংড়ি প্রতীকের প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুল ১২ হাজার ৬২২ ভোট এবং মাকসুদের ছেলে হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী মাহমুুুুদুল হাসান ২৫৫ ভোট পেয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আলমগীর ১৭ হাজার ৬০৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গত দুইবারের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু ১৭ হাজার ১ ভোট পেয়েছেন। অপর দুই প্রার্থী, টিউবওয়েল প্রতীকের শাহিদুল ইসলাম জুয়েল ১৩ হাজার ৪২৮ ভোট এবং তালা প্রতীকের মোশাঈদ রহমান ৮ হাজার ৪০৬ ভোট পেয়েছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ছালিমা হোসেন পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪৫৬ ভোট। পরাজিত কলস প্রতীকের প্রার্থী মাহমুদা আক্তার ২৬ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়েছেন।
এ উপজেলায় ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছে জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, উপজেলার ৫৪টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৪ জন।