নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি কার্টনে ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের পর সার্ভেয়ার গ্রেপ্তার, এডিসি ওএসডি এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাকে সরানোর পর; এ নিয়ে আলোচনার পারদ প্রায় নিম্নমুখী তখন নতুন তথ্য দিয়ে আবারও এই ইস্যুকে টক অব দ্য টাউনে পরিণত করেছেন শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এই সংসদ সদস্যের ভাষ্যমতে, এই টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল যাত্রাবাড়ি এলাকা থেকে, পরে তা ফতুল্লা থানা এলাকায় উদ্ধার বলে দেখানো হয়েছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে ইসদাইরে ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজ ও ভূমিদস্যুতা বিরোধী সমাবেশে রাখা বক্তব্যে এমন বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন তিনি। আমন্ত্রণ জানানোর পরও প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ এই সমাবেশে উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভও ঝারেন শামীম ওসমান।
শামীম ওসমান বলেন, আমি মাথা নোয়াবার মানুষ আমি না। কথা বলতে চাই নাই আমি। এমন কোন কাজ করি না যে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবো। অনেকেই অনেক কিছু করেন, আমরা সব দেখি। টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে আর কেস দেখান ফতুল্লাতে। আমাদের কাছে অনেক খবরই আছে, সাংবাদিকরা আমাদের জানান কিন্তু।
তিনি আরও বলেন, এই কথাগুলো আজকে বলার কথা না। আমার চেয়ারম্যান-মেম্বার-কাউন্সিলর সবাই হতাশ হয়ে গেছেন। হতাশ হবেন না, এইটা আমাদের নারায়ণগঞ্জ, আমরাই ঠিক করবো।
বক্তব্যে শামীম ওসমান সরাসরি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে উদ্ধার হওয়া ৪২ লাখ টাকার কথা না বললেও তিনি যে ওই টাকার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তা স্পষ্ট ছিল।
গত ১০ জানুয়ারি রাত দশটার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের প্রাক্তন আউটসোর্সিং কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম সুমন (২৮) একটি কার্টনসহ নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে আটক হন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কার্টন খুলে টাকা গুনে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। পরে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে টাকাগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কোষাগারে জমা রাখা হয়।
জব্দ করা ৪২ লাখ টাকার সাথে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা আছে ধারণা করে গত ১৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেন। পরে ১৬ জানুয়ারি দুদক তাদের জেলা কার্যালয়ে মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও দন্ডবিধির কয়েকটি ধারায় একটি মামলা করে। ওই মামলায় জাহিদুল ইসলাম সুমন ও কাওসার আহমেদকে আসামি করা হয়। মামলার পর ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন সার্ভেয়ার সুমন।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই কার্টনভর্তি টাকা অন্য এক ব্যবসায়ীর বলে দাবি করে জাহিদুল ইসলাম সুমন। যদিও ওই ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই টাকা তার নয়। সার্ভেয়ার কাওসার ওই ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করেছিলেন যেন ওই টাকা নিজের বলে দাবি করেন। সামগ্রিক বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে আমি দুদকে চিঠি দেই। দুদকও তড়িৎ ব্যবস্থা নিয়েছে।
টাকা উদ্ধারের ঘটনায় জনৈক রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি। পরে একাধিক গণমাধ্যমে এই রানার পরিচয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনৈক এই রানা মূলত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহসভাপতি এস এম রানা। তিনি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন।
এদিকে, ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এইচ এম সালাউদ্দীন মনজুকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সংযুক্ত করার ব্যাপারটি একধরনের শাস্তি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। সালাউদ্দীন মনজু ৩১ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি গত ২০২২ সালের ৫ জুন নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেন।
দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার খাদিজা বেগমকেও। তিনি বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিডিয়া ও রিসার্চ, উন্নয়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ শাখায় রয়েছেন। বর্তমানে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দায়িত্বে রয়েছেন অপর সহকারী কমিশনার আর্নিকা আক্তারকে।
এদিকে, ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরতদের এবং দালালদের বিরুদ্ধে আগেও নানা অভিযোগ উঠেছিল। সার্ভেয়ার গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন সময় ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের কিছু সত্যতা পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট ৪২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনায় নাম আসা রানা কি তবে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কোন দালাল চক্রের সদস্য। এছাড়া দালালচক্রের সদস্য হিসেবে মিল্টন, ইকবাল, বুলবুল নামের কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।