নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, আল্লাহর রহমতে আমি কোথাও ভোট চাইনি এবং চাইবোও না। কারণ সমস্যাটা আমার না আপনাদের। আমি এখানে এসেছি আপনাদের ঘুম থেকে জাগাতে। হঠাৎ করে কিছু একটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। তাই আপনাদের জাগ্রত করতে এসেছি। সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ আহম্মেদ লিটনে সভাপতিত্বে ফতুল্লার দাপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বালুর মাঠে নির্বাচনী উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি একথা বলেন ।
নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ৯৬ তে আমরা যখন এসেছি আল্লাহর হুকুমে সকলের সহোযোগিতা নিয়ে ২৬ শত কোটি কাজ করেছিলাম আমি আমার নির্বাচনী এলাকায়। শুধু ফতুল্লা থানা এলাকায় ৬২৫ কোটি টাকার কাজ করতে পেরেছি। পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটা বিল্ডিংয়ের কাজ করেছি। কৃষিকাজের জন্য ডিএনডি প্রজেক্ট করা হয়েছিলো। পানি বন্দি ডিএনডি প্রজেক্টে কাজ করেছি। ঢাকা-নারায়নগঞ্জ সংযোগ করেছি। প্রথমে করলা এক লেন, তার পর দুই লেন, তারপর চার লেন। ডাবল রেল লাইনের কাজ করেছি। পঞ্চবটী তে একটা ফ্লাইওভার করা হচ্ছে ২৬ শত কোটি টাকা ব্যায়ে। পাচঁশ শয্যা বিশিস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করা হবে যা প্রধানমন্ত্রী পাশ করিয়ে দিয়েছেন। যা আগামীতে সরকার গঠন করলে তা হয়ে যাবে। লিংক রোডে পলিটেকনিকাল কলেজ হচ্ছে। বেশ কিছু কাজ চলমান রয়েছে।আগামীতে ঢাকা নারায়নগঞ্জ মেট্রো রেল লাইন করবো আগামীতে।
তিনি বলেন, ৭৪ সালে চাইলে আমার বাবা নারায়নগঞ্জের বহু সহায় সম্পত্তি সহ অনেক কিছু করতে পারতেন। তিনি তা না করে আমার ভাইয়ের বিয়ের জন্য ও দল পরিচালনা করার জন্য গোপনে বাড়ী বন্ধক রাখে। নয়শত টাকার জন্য ফরম ফিলাপ করতে পারিনি। আমি ও গোপনে আমার বাড়ী বন্ধক রেখেছিলাম ২০২৩ সালে। সাংবাদিকরা তা প্রকাশ করে দিয়েছে। আমাদের বাড়ী নিলামে উঠলে কোন আত্নীয়-স্বজন সেদিন এগিয়ে আসেনি। সেদিন ৪৪ হাজার শ্রমিক এক টাকা করে চাঁদা দিয়ে সেদিন বাড়ীর বন্ধক থেকে ছুটিয়েছিলো।
এর আগে বিকেলে ফতুল্লার পিলকুনি পাঁচতলা এলাকায় অপর এক নির্বাচনী উঠান বৈঠকে তিনি আগত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই। এবারের নির্বাচন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ। ঈগল আকাশে ২১ দিন টানা উড়তে পারে। এ সময়ের মধ্যে সে এমন শিকার খোঁজে যা মিস হবে না। যখন সে তা পায় তখনই ছো মেরে হানা দেয়। আমাদের দেশের মানচিত্রের উপর ঈগল উড়ছে, তারা ওৎ পেতে আছে। ওরা চায় ফিলিস্তিনের গাজার মতো দেশটাকে বানাতে। তাদেরকে আমাদের ঠেকাতে হবে।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে। আমাদের জেলার ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। কেউ পায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, কেউ পায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এত দূরে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে হবে বলে বাবা-মায়েরা তাদের লেখাপড়া বন্ধ করে দেন। এই কথা চিন্তা করেই নারায়ণগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছি। অবশেষে পার্লামেন্টে বিল পাশ হয়েছে যে এখানে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এতে করে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ রক্ষা হবে। আমি চাই আমাদের বাচ্চারা ভালো থাকুক।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে রাতের বেলাতে আঠারোর নিচে ছেলেরা ঘর থেকে বের হলে বাবা-মা তেমন একটা বাধা দেয় না। কিন্তু মেয়েরা রাতে বের হবার চেষ্টা করলে বাবা-মা বারণ করেন। তারা বলেন, বাইরে ডাকাত, চোর, দস্যু, মাদকাসক্তরা আছে। আমাদের নারায়ণগঞ্জকে সেফ করতে হবে। মনে রাখবেন, নিজের ঘর নিজেকেই পরিষ্কার করতে হবে। এজন্য আমি একটি সংগঠন করতে চাচ্ছি যার নাম হবে ‘প্রত্যাশা’। ১৮ থেকে ৩০ বয়সীদের নিয়ে আমরা কাজ করবো। তরুণদের নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা ৮০ হাজার মানুষ মিলে যদি মাদক, সন্ত্রাস, দস্যুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই আমাদের কেউ থামাতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ফতুল্লায় অনেক রাস্তায় সংস্কারের প্রয়োজন আছে। আপানদের যে কি সমস্যা হচ্ছে তা আমি জানি। ইনশাল্লাহ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফিরলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ফতুল্লায় রাস্তার সমস্যা দূর হবে। বিএনপি-জামায়াত তারা এখন কোথায় গেলো? তাদের আমি খুঁজে পাচ্ছি না। ট্রেনের ভেতর একজন মা-শিশুকে যেভাবে পুড়িয়ে মারা হলো তখন প্রতিটি মায়ের চোখে যে প্রতিবাদ দেখেছি আমার মনে হয় তারা আবারও কোনো হামলার চেষ্টা করলে শুধুমাত্র মহিলারাই তাদের রুখে দাঁড়াবে। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ আজ সোচ্চার হয়েছে।
এখানে এ কে এম শামীম ওসমান নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দেয়ার সময়ে ঢিল ছুড়ে মারা হয়ে। এতে এক নারী রক্তাক্ত জখম হয়েছে। আহত ওই নারীর নাম লিপি বেগম । তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, উঠান বৈঠকে এমপি শামীম ওসমান বক্তব্য রাখছিলেন। এ সময় বক্তব্য চলাকালে দুটি ঢিল ছুড়ে মারা হয়। এতে ওই সভায় উপস্থিত এক নারীর মাথা ফেটে রক্তাক্ত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়। এছাড়া আনন্দ টিভির ক্যামেরা পারসন সাব্বিরের শরীরে আরেকটি ঢিল পড়েছে।
এ সময় শামীম ওসমান রাগান্বিত স্বরে বললেন, দুটি ঢিল পড়েছে। আমার প্রোগ্রামে ঢিল ছুড়ে মেরেছে, কে মেরেছে বের হয়ে যাবে। এক বোন আমার নির্বাচনী প্রচারণায় এসে আহত হয়েছেন, অনেক কষ্টে মেজাজ ধরে রেখেছি। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে জানতে পারে কোনো এক ছোট বাচ্চা দুষ্টুমি করে ঢিল ছুড়ে মেরেছে। পরে উপস্থিত সবাই শান্ত হন।